দখল আর দূষণে রাঙ্গুনিয়ার কুলকুরমাই খাল

প্রকাশিত: ২৬ অক্টোবর ২০১৬, ০৭:০৮ পিএম

দখল আর দূষণে বিলুপ্তির পথে রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার রোয়াজারহাট থেকে গুমাই বিল পর্যন্ত বিস্তৃত একসময়কার স্রোতসিনী কুলকুরমাই খাল। প্রশস্ত খালটি অপরিকল্পিত স্লুইচ গেট, দখল ও বর্জ্যরে আবর্জনার স্তুপে ড্রেনে পরিণত হয়েছে। ফলে বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি খাল দিয়ে প্রবাহিত না হওয়ায় বাজারে বিভিন্ন গলিতে পানি ঢুকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বাজারের আসা ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের। তাই জনস্বার্থে খালটি দখল ও দূষণ মুক্ত করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনার দাবী করছেন স্থানীয়রা।জানা যায়, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক নির্মান হওয়ার আগে ইছামতি নদীর শাখা কুলকুরমাই খালটি রোয়াজারহাটের যোগাযোগের মাধ্যম ছিল। এই খাল দিয়েই কুলকুরমাইসহ উত্তর ও মধ্যম রাঙ্গুনিয়ার মানুষ তাদের কৃষিজ পণ্য বাজারে আনা নেওয়া করতো। চট্টগ্রামের শস্য ভান্ডার খ্যাত গুমাই বিল ও এর আশপাশের কৃষি জমির সেচের পানির চাহিদা পূরণ করতো এই খালটি। বর্তমানে খালটির বেহাল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে দখলের মহোৎসব চলছে অন্যদিকে প্রতিনিয়ত বাজারের বর্জ্য নিক্ষেপ হচ্ছে এই খালে। তার উপর এ খালে অপরিকল্পিতভাবে নির্মান করা হয়েছে স্লুইচ গেট। এছাড়াও খালটির দুই পাড়ের বসতঘর ও অবৈধ দখল করে গড়ে ওঠা দোকানের পায়খানা নল দিয়ে এই নদীতেই ফেলা হয়। এতে পানি দূষিত হয়ে কালচে রূপ ধারণ করেছে। এলাকার মৎস্য চাহিদা পূরণ করা খালটি এখন মৃত্যু পথযাত্রী।

স্থানীয়রা জানায়, রোয়াজারহাটের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কুলকুরমাই খালটি আগে ৫০ থেকে ৬০ ফুট প্রশস্ত ছিল। এটি ইছামতী থেকে শুরু হয়ে রোয়াজারহাট, মুরাদনগর, সৈয়দবাড়ি হয়ে গুমাই বিলে গিয়ে মিশেছে। ৭১ এর মুক্তিযুেেদ্ধর সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অনেক নিরীহ বাঙ্গালী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মেরে এই খাল দিয়ে ভাসিয়ে দিয়েছিল। তাই মুক্তিকামী বাঙ্গালীদের অনেক স্মৃতি বিজড়িত এই খালটি। কাপ্তাই সড়কের রোয়াজারহাট এলাকায় ১৯৮০-৮১ সালের দিকে ইছামতির উপর স্লুইচ গেট ও ব্রীজ নির্মাণের পর থেকে দখল হতে থাকে। রোয়াজার হাট বাজারের খাল দখল করে নির্মাণ হতে থাকে দোকান। স্থায়ীভাবে পিলার দিয়ে রোয়াজারহাট এলাকাতেই অর্ধশতাধিক দোকান নির্মিত হয়েছে এই খালের উপরে।। একই কায়দায় মুরাদনগর ও সৈয়দবাড়ি এলাকায় খাল দখল করে নির্মান হয় বিভিন্ন দোকান, বসতঘর ও নানা স্থাপনা। ফলে দিন দিন সংকুচিত হয়ে খালটি বর্তমানে ৮-১০ ফুট প্রশস্ত নালায় পরিণত হয়েছে। সৈয়দবাড়ি ও ইছামতি এলাকার মোহন্দর খালের কিছু পানি ঢুকে এই মৃতপ্রায় খালটিতে প্রকৃতপক্ষে এর অস্তিত্ব ঠিকিয়ে রেখেছে। এদিকে খালের উপর নানা আবর্জনায় ফেলার কারনে দূর্গন্ধে বিষিয়ে তুলেছে এলাকার পরিবেশ।

স্থানীয় রাজনৈতিক কামরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, ‘ছোটবেলায় খালটি এলাকার মানুষের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হতে দেখতাম। খালটি গুমাই বিলসহ আশপাশের কৃষি জমির সেচের পানি, এলাকার মানুষের মাছের চাহিদা মেটাতো। সর্বোপরী বর্ষার বর্ষনের অতিরিক্ত পানির অপসারণ করে জলমগ্নতার হাত থেকে রক্ষা করতো খালটি। কিন্তু দখল আর দূষনে হারিয়ে যেতে বসেছে খালটি। তাই এটি উদ্ধার করে এর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা জরুরী।’
স্থানীয় আরিফুল ইসলাম চৌধুরী জানায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফলতি সংস্কার কাজের অভাব, খালের উপর অপরিকল্পিত স্লুইচ গেট নির্মাণ, দখলসহ বিভিন্ন কারণে খালটি মরতে বসেছে। এটি রক্ষার্থে খননসহ সংস্কার কাজে সাবেক মেয়র খলিলুর রহমান চৌধুরী সাবেক মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপির সুপারিশ সম্বলিত আবেদন পানি উন্নয়ন বোর্ড বরাবর প্রেরণ করেছেন। কিন্তু তারা আজকাল করে এখনও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।
মুরাদ নগর এলাকার মনির আহমেদ মেম্বার (৫৬) জানান, খালটি রোয়াজারহাট, মুরাদনগর, সৈয়দবাড়ি সহ গুমাইবিলের কৃষকদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। এটির পানিতে সেচের চাহিদা পূরণ করে এতদ অঞ্চলের মানুষ। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের খামখেয়ালীপনা ও স্থানীয়দের দখল দূষণে এটি হারাতে বসেছে। তিনিও এই খালের সংস্কার দাবী করেন।
রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার মেয়র মো. শাহজাহান সিকদার জানান, এই খালসহ পৌরসভার বিভিন্ন দখল দূষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রক্রিয়া চলছে। আশা করি জনসাধারণের দাবী খুব শীঘ্র্ই পূরণ হবে।

আব্বাস হোসাইন আফতাব

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: