কাপ-আমব্রেলা মাশরুমের সফল উৎপাদন

প্রকাশিত: ২৭ অক্টোবর ২০১৬, ১১:১২ পিএম

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচ-ডি গবেষক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন কাপ-আমব্রেলা মাশরুম নিয়ে গবেষণা করে সফলতা পেয়েছেন। বর্ষা থেকে হেমন্ত পর্যন্ত সময়ে চাষ যোগ্য সম্ভাবনাময় বৃহদাকার ছাতার মতো একটি সুস্বাদু মাশরুমের ফলন পেয়েছেন তিনি। বিশাল আকৃতির এই মাশরুমটি ট্রাইকোলোমাটেসি (ঞৎরপযড়ষড়সধঃধপবধব) পরিবার ভুক্ত একটি সুস্বাদু মাশরুম। মাশরুমটির উদ্ভিদতাত্তিক নাম লিউকোপ্যাক্সিলাস জাইগ্যানসিয়াস (খবঁপড়ঢ়ধীরষষঁং মরমধহঃবঁং)
গবেষক আনোয়ার হোসেনের গবেষনার বিষয় বাংলাদেশের রাঙ্গামাটির পার্বত্য অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো বিভিন্নরকম মাশরুমের সনাক্তকরন এবং জীববিজ্ঞান বিষয়ে হলেও মাশরুমের প্রতি বিশেষ অনুরাগ থাকাতে নিজের আবাসভুমির পাশেই নিজ অর্থায়নে গড়ে তুলেছেন সম্ভাবনাময় মাশরুম স্পন (বীজ) উৎপাদনের জন্য ল্যাবরেটরী এবং মৌসুমী মাশরুম উৎপাদনের জন্য মাশরুম গ্রীন-হাউজ।

দীর্ঘ তিন বছর ধরে গবেষনার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই ইথ্নো এগ্রো সার্ভিসেস নামে মাশরুম ফার্মের অতি সাধারন নীল পলিথিন নির্মিত গ্রীন হাউজে এই মাশরুম ফলাতে সক্ষম হন। মাশরুমটি প্রাইমর্ডিয়া বা কুঁড়ি অবস্থায় লালচে বাদামী, পরে ক্রমশ ক্রিম-সাদা রং ধারন করে। মাশরুমের ছাতাটির ব্যাস ১০ থেকে ৩৫ সে.মি., এর স্টাইপ বা ছাতার দন্ড ৭ থেকে ১০ সে.মি. এবং প্রস্থে ১ থেকে ১.৫ সে.মি.হয়ে থাকে। ছাতা বা পাইলিয়াস প্রথমে চোঙ্গাকার পরে পেয়ালাকৃতির এবং পরিনত দশায় ছত্রাকার এবং প্রান্ত বরাবর প্রায় সমান্তরাল, কিনারা সামান্য বাঁকানো, মসৃন ত্বকযুক্ত। ছাতার নিচে গিল প্রথমে দুধ-সাদা এবং পরিনত অবস্থায় হালকা বাদামী বর্নের সংমিশ্রন ঘটে। স্টাইপ বা ছাতার দন্ডটি লালচে-বাদামী বর্ণের সংমিশ্রণ পরিলক্ষিত হয। একটি পরিনত মাশরুম নিশ্চিত আপনাকে বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করবে। তবে ছাতার কেন্দ্রে কাপ বা পেয়ালার মতো গর্ত আছে। অর্থাৎ যা পেয়ালা তাই ছাতা। এজন্যই আমাদের আদীবাসিরা এই মাশরুমকে পেয়ালা-ছাতা মাশরুম বলে।

তাইওয়ান, চীন, ভিয়েতনাম এবং ফিলিপাইনে মাশরুমটি কাপ-আমব্রেলা মাশরুম নামে পরিচিত। কথা প্রসঙ্গে মাশরুম গবেষক মাশরুমটির পুষ্টিগুনের বিষয়েও আলোকপাত করেন। পেয়ালাকৃতির এই মাশরুমে পর্যাপ্ত আমিষ, চর্বি, আঁশ, শর্করা, ভিটামিন, ফেনল, এন্টি-অক্সিড্যান্ট এবংফ্লেবনয়েড থাকে। মাশরুমটির অন্যতম বিশেষত্ত্ব হচ্ছে এর মধ্যে থাকা ক্লাইটোসাইবিন নামক এন্টিবায়োটিক। এ পর্যন্ত বিভিন্ন গবেষনা থেকে জানা যায়-এই ক্লাইটোসাইবিন আমাদের পৌষ্টিক তন্ত্র, শাস-তন্ত্র এবং জরায়ূর সংক্রমন ঠেকাতে সম্ভব। প্রকৃতি বিজ্ঞানীরা বলছেন, যাদের সংক্রমনের ঝুকি বেশী তারা এই মাশরুমকে খাদ্য তালিকায় রেখে অনেকটা নিরাপদ থাকতে পারেন। মাশরুমটিতে বিশেষ কোন ফ্লেবারের না থাকাতে যে কেউ এটিকে সহজেই তার খাদ্য তালিকায় স্থান দিতে পারেন।

মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের গবেষনা তত্ত্বাবধায়ক প্রফেসর ড. আবুল খায়ের জানান, ‘গরমে বিভিন্ন মাশরুমের আবাদ সম্ভাবনা কমে যায়, তাই এই পুষ্টিকর এবং ঔষধী মাশরুমটি মাশরুম শিল্পের জন্য একটি সুখবর ’। তিনি আরো জানান, ‘মাশরুমটিতে থাকা এন্টিবায়োটিক ব্যাবহারকারীরকে বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমন থেকে রক্ষা করবে। বাজারের বিভিন্ন এন্টিবায়োটিকের সাথে এর প্রধান দু’টি পার্থক্য হচ্ছে এটি অত্যন্ত অল্প পরিমানে আমাদের প্রাকৃতিক ইমিউন সিস্টেমের সাথে কাজ করে দেহে প্রতিরোধ ব্যাবস্থা গড়ে তুলে এবং বাজারে এন্টিবায়োটিকের মতো এটি কখনো রেজিন্ট্যান্ট হয়না’।
মাশরুমের নিবির গবেষক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ইতঃপূর্বে গ্রীষ্মকালীন মিল্কী মাশরুমের সফল উৎপাদনের মাধ্যমে তিন কেজি ষোল গ্রাম ওজনের মাশরুম উৎপাদন করতে সমর্থ হন। গত বছর তিনি উদ্ভাবন করেছেন বাটন মাশরুমের চাষী-বান্ধব চাষ প্রযুক্তি।
উল্লেখ্য যে, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. আবুল খায়েরের তত্ত্বাবধানে পিএইচ-ডি করছেন।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: