বর্তমান বিশ্ব ও সমাজে নারীর অবস্থান

প্রকাশিত: ০২ নভেম্বর ২০১৬, ০৪:০১ এএম

আমরা এক নবপরিবর্তিত বিশ্বে বসবাস করছি। সভ্যতার সাথে সাথে প্রযুক্তি ও শিক্ষার যেমন পরিবর্তন হয়েছে, ঠিক তেমনি আমাদের নারীদের অবস্থান ও বেশ কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। নারী হচ্ছে পৃথিবীর আলো, নারী হচ্ছে প্রকৃতির অপরিহার্য একটি অঙ্গ, যাকে ছাড়া গোটা বিশ্ব অচল। সভ্যতার অগ্রগতির মূলে নারীর অবদান অনস্বীকার্য। যুগ যুগ ধরে পুরুষের পাশাপাশি নারীও সমান ভাবে অবদান রেখে আসছে। সর্বযুগেই নারী তার বুদ্ধি, মেধা, শ্রম, যোগ্যতা, মমতা দিয়ে ভবিষ্যৎ এর সাফল্য নিশ্চিত করে আসছে, সেই সাথে সৃষ্টি করে যাচ্ছে নতুন ইতিহাস।

কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, আমাদের সমাজ প্রযুক্তি ও শিক্ষায় উন্নতি করতে পেরেছে, অথচ আজও নারীদের সম্মান, মর্যাদা, ও অবস্থান সমন্ধে বিন্দুমাত্র জ্ঞান অর্জন করতে পারেনি। আদিকাল থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত নারীরা ধাপে ধাপে নিজেদের এগিয়ে নিয়েছে। কিন্তু সমাজে আজও তারা অবহেলিত, অপমানিত হচ্ছে, কারণ তারা নারী। প্রাপ্তির পরিবর্তে মিলছে শুধুই শূন্যতা। হাজার প্রতিবন্ধকতা নারীর চলমান গতিকে শিথিল করে দিচ্ছে। সময়ের সাথে সাথে অবস্থার উন্নয়নে বিভিন্ন আইন ও নীতিমালা প্রনয়ন করা হয়েছে। তারপরও পরিবর্তন হয়নি নারীর অবস্থার। একবিংশ শতাব্দীর এই উন্নত পৃথিবীতে এসেও নারী আজ বড়ই অসহায়। বিশ্বের প্রতিটা দেশ এ প্রায় প্রতিদিনই নিম্নস্তর থেকে শুরু করে উর্ধ্বতন কর্মচারী নারীরা বিভিন্ন কৌশল এ যৌন নির্যাতন এর শিকার হচ্ছে।

শুধু ঘরেই নয়, বাইরের কর্মক্ষেত্রেও নারীদের কোনো নিরাপত্তা নেই। সবচেয়ে বেশি আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, কিছু কিছু পরিবারে এখনো নারী শিশু জন্ম নিলে তাদেরকে হত্যা করা হয় কিংবা কোনো পরিত্যাক্ত স্থানে ফেলে দেয়া হয়। বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে কমপক্ষে সাড়ে ১২ লাখ অবিবাহিত কিশোরী গর্ভধারণ করে। কোনো যানবাহনে চলাচল করা অবস্থাতেও নারী ধর্ষিত হচ্ছে।

আমাদের দেশেও নারীদের বিভিন্ন সমস্যা ক্রমশ বেড়েই চলছে। প্রায় প্রতিটা পরিবারেই নারীকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন এর স্বীকার হতে হয়। স্বামী থেকে শুরু করে পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের হাতে নারীরা অত্যাচারিত হয়ে থাকে। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বহু নারী আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বর্তমানকালে আরো একটি নতুন বিষয় যুক্ত হয়েছে, আর সেটি হচ্ছে প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দিলে সেই নারীকে ছুড়িকাঘাত, ধর্ষণ করে হত্যা করা। উদাহরণ স্বরূপ, কুমিল্লা সেনানিবাসে তনু হত্যাকান্ড, ঢাকার উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী রিশা হত্যাকান্ড, সিলেট এ খাদিজা হত্যাকান্ড, আরও প্রমুখ।

এছাড়াও, পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় এমন কি আমাদের বাংলাদেশ এও অনার-কিলিং প্রথা প্রচলিত আছে। অনার-কিলিং বা সম্মানের জন্য হত্যা হল পরিবারের সম্মানহানির দায়ে আপনজনের হাতে আপনজন কে হত্যা করা। আর এক্ষেত্রে নারীরাই বেশিরভাগ শিকার হয়ে থাকে। বর্তমানে উত্তরাধিকার বণ্টন এর ক্ষেত্রে অনেক পরিবারেই নারীকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। কখনো সামান্য পরিমাণ সম্পত্তি দিয়েই নিঃষ্পত্তি করা হচ্ছে, আবার কখনো কখনো সম্পূর্ণ ভাবেই বঞ্চিত করা হচ্ছে। বলা যায় যে, নৈতিকতা বিবর্জিত এবং সহশিক্ষা সংবলিত শিক্ষাকাঠামো নারী সমস্যা কে দিন দিন ভয়াবহ করে তুলছে। নারীবান্ধব সুষ্ঠু সমাজ গঠনের যথার্থ উদ্যোগ নেই বললেই চলে। আইন-নীতিমালা প্রনয়ন হয়েছে ঠিকই কিন্তু এর সঠিক ব্যবহার আজও পরিলক্ষিত হয়নি। কঠিন বাস্তব সত্যি কথা এটাই, আজকের এই বিশ্বে প্রায় সব দেশেই নারী দিবস পালিত হচ্ছে। কিন্তু, শুধুমাত্র এই দিনেই নারীকে সম্মান প্রদর্শন দেখানো হয়, আর বাকি ৩৬৪ দিনই অত্যাচার, অবিচার আর নির্যাতন করা হয়ে থাকে নারীদের উপর। এখন সর্বশেষ প্রশ্ন হচ্ছে, আর কতযুগ ধরে নারীদের উপর এই অত্যাচার চলবে? কবে এই উন্নত সমাজ নারীদের সঠিক ভাবে সম্মান, মর্যাদা দিবে? আর কবে এই সমাজের চোখ, বিবেক, জ্ঞান, বুদ্ধি জাগ্রত হবে???

লেখিকা: জান্নাতুল শাহেবাজ আয়েশা (বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী)

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: