শিশুর জন্য ‘সেক্স শিক্ষা’ নিষিদ্ধ নয়

প্রকাশিত: ০৯ নভেম্বর ২০১৬, ১২:৩৬ এএম

প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই কোথাও না কোথাও ধর্ষণের ঘটনা চোখে পড়ে। ধর্ষণের পাষবিক হিংস্রতার ধরণও পরিবর্তিত হচ্ছে। আমরা হয়তো খবর পড়ে দেশের সিস্টেম এবং আইনকে তুলোধোনা করে ছাড়ি। ধর্ষকের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করার পর অন্য কাজে ব্যাস্ত হই। খাওয়ার আগে হাত ধোয়ার মত ধর্ষণের খবরকেও আমরা স্বাভাবিক ভাবে নিচ্ছি। কিন্তু কেন হচ্ছে ধর্ষণ? এটি শুধুই কি কিছু মানুষের বিকৃতিপনার বহিঃপ্রকাশ নাকি দীর্ঘদিন ধরে হতে থাকা সামাজিক অবক্ষয়ের একটি চূড়ান্তরূপ! নাকি আমাদের সঠিক সেক্স এডুকেশনের অভাব!

একটি শিশু ছোটবেলা হতেই তার চারপাশ থেকে পাচ্ছে ধর্ষক হবার অনুপ্রেরণা। স্কুলে যাবার জন্য বাসা থেকে বের হয়েই বাসার সামনে দেখতে পায় অশ্লীল দৃশ্য সম্বলিত কিছু সিনেমার পোস্টার। আগ্রহভরে তার বাবা মাকে সে পোস্টারের বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে চায়। বাবা মায়ের সহজ কিছু উত্তর, “ওসব বড়দের বিষয়,” “একদম পাকামো করবে না,” “ছি!ছি বাবা, ওসব দেখতে নেই,” “বড় হলে সব বুঝতে পারবে,” “ওগুলো পচা”!

শিক্ষকের কাছে জিজ্ঞাসা করলে উত্তর পায় ‘কাল তোমার বাবাকে দেখা করতে বলবে! শিশুটি ভেবেই নেয় পোস্টারের বিষয়বস্তু নিষিদ্ধ কিছু একটা। এবং সে ভেবে নেয় বিষয়টি বড় কারো কাছে জিজ্ঞাশা করলে সঠিক উত্তর পাওয়া যাবে না।” শিশুটি উত্তর খুজতে যায় ক্লাসের পেছনের বেঞ্চে বসা ব্যাড বয়ের কাছে। অবশেষে শিশুটি তার উত্তর পায় সেই ব্যাড বয়ের কাছ থেকে-অনেক নিষিদ্ধ উত্তর! কিছু কিছু উত্তর মোবাইলে ভিডিওর মাধ্যমে শেয়ার করে দেয়!

বাসায় এসে খবরের কাগজে ধর্ষণের খবর পড়ে শিশুটি বাবা মায়ের কাছে জানতে চায় বিষয়টি কী। উত্তর আগের মতই। শিশুটি বুঝে নেয়, ব্যাপারটি ‘বড়দের’। বড়দের মানেই ব্যাপারটি ‘নিষিদ্ধ’! রাতে শিশুটি টিভির রুমে আসে। এসময় বাবা হঠাৎ চ্যানেল পরিবর্তন করে, তখন শিশুটি ভেবেই নেয় বাবা-মা নিষিদ্ধ কিছু দেখছিলো। সে জানতে চায় বাবা-মা কি দেখছিলো!

শিশুটি তার বাবা মাকে যখন জিজ্ঞাসা করে, ‘আমি কিভাবে জন্মগ্রহণ করলাম!’ বাবা-মায়ের উত্তর-‘চাঁদের বুড়ি তোমাকে আমাদের কাছে দিয়ে গেছে’।

শিশুটির মনে অনেক প্রশ্ন কিন্তু কারো কাছ থেকেই সে সঠিক উত্তর পায়নি। সে ভেবেই নেয় তার জানতে চাওয়া উত্তরগুলো নিষিদ্ধ আর বড়দের। আর বড়দের নিষিদ্ধ কোন কিছুই মানে ব্যাপারটি অনেক ‘মজার’।

দিনের পর দিন ‘বড়দের বিষয়’ সম্পর্কে শিশুটি একটি নিজস্ব ধারণা জন্মে। সে নিজের মত করে কিছু উত্তর সাজায়। তার সাজানো উত্তর, সামাজিক অবক্ষয়ের ধারাবাহিকতা, তথ্য প্রযুক্তির কু-প্রভাব, বাবা-মায়ের উদাসীনতা, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন তাকে যৌনতা সম্পর্কে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়। তাকে ধর্ষক হতে অনুপ্রেরণা যোগায়।

যৌনতা সম্পর্কে শিশুদেরকে ছোটবেলা হতেই শিক্ষা দিতে হবে। তারা যৌনতা সম্পর্কে যা জানতে চায় তার সঠিক উত্তরটি স্বাভাবিক ও পরিশীলিতভাবে দিতে হবে। ‘সেক্স এডুকেশন’ এর শুরু হতে হবে পরিবার থেকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সেক্স এডুকেশনকে প্রাতিষ্ঠানিক করতে হবে। শিক্ষকদেরকে সাবলীল ভাষায় শিক্ষার্থীদের সেক্স এডুকেশন বোঝাতে হবে। ‘সেক্স’ শব্দটি নিষিদ্ধ নয়। সেক্স জানার বিষয়, বোঝার বিষয়।

লেখক: মাসুদ রানা,অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার ফর ম্যাস আওয়ারনেস এ্যান্ড কমিউনিকেশনস।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: