আশুতোষ কোথায়?

প্রকাশিত: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬, ০৯:২২ এএম

খোঁজ নেই আশুতোষ দাসের। ঘটনার দু’-চারদিন পর থেকেই লাপাত্তা সে। রসরাজের ফেসবুক পোস্ট সংশ্লিষ্টতার কারণে তার সাক্ষাৎ গুরুত্বপূর্ণ এখন পুলিশের কাছে। তার সঙ্গে কথা বললেই পোস্টটি কে দিয়েছিল তার খোঁজ মিলবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। আশুতোষ ছাড়াও রসরাজের ছোটভাই পলাশ ও আত্মীয় হ্নদয়কে খুঁজছে পুলিশ। পোস্ট সংক্রান্ত এ ৩ জনই গুরুত্বপূর্ণ পুলিশের কাছে। ফেসবুকে ওই পোস্ট দেয়ার সঙ্গে এ ৩ জনের একজন সংশ্লিষ্ট বলে ধারণা পুলিশের।

পুলিশ জানিয়েছে, রসরাজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছিল হ্নদয়। হ্নদয় ছাড়াও ওই ফেসবুকের পাসওয়ার্ড জানতো রসরাজের ছোট ভাই পলাশ। পাসওয়ার্ড জানতো আশুতোষ। পোস্ট দেয়ার ২০/২২ ঘণ্টা পর বিদেশ থেকে কয়েকজনের ফোন পেয়ে আশুতোষ মুসলমান সম্প্রদায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে এবং শান্ত থাকার অনুরোধ জানিয়ে রসরাজের ফেসবুকে একটি পোস্ট দেয়। এ ৩ জনই পুলিশের ধরাছোয়ার বাইরে। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে আশুতোষ ভারতে পালিয়েছে। কেননা তার পরিবারের সদস্যদের মোবাইল নম্বরগুলোতে ভারতীয় নম্বর থেকে প্রচুর ফোন এসেছে এই ক’দিনে। হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের অনুকূল চন্দ্র দাশের (মনা মাস্টার) ছেলে আশুতোষ দাস। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে মাঠকর্মী হিসেবে হরিপুর ইউনিয়নে কাজ করে সে।

হামলার ঘটনার ৪-৫ দিন পর থেকে কর্মস্থলেও অনুপস্থিত আশুতোষ। তার বাড়ি আর রসরাজে বাড়ির দূরত্ব কয়েকটি বাড়ির ব্যবধানে। ঘটনার পর থেকেই পোস্ট সংক্রান্তে পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে শনাক্ত করে আশুতোষকে। হরিপুর আল আমিন সাইবার ক্যাফের মালিক জাহাঙ্গীর আলমও গত ৮ই ডিসেম্বর আদালতে তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ বিষয়ে আশুতোষের সংশ্লিষ্টতার কথা বলেছেন। স্বীকারোক্তিতে বলা হয়, আশুতোষ ২৯শে অক্টোবর বাজারে খালেদ মোবারক, ফারুক মিয়া, নয়ন, ইউপি সদস্য প্রফুল্ল চন্দ্র দাশ এবং আমার (জাহাঙ্গীর) নিকট জানায়, রসরাজের ফেসবুক আইডি থেকে ২৭শে অক্টোবর কে বা কারা ধর্মীয় অবমাননাকর ছবিটি পোস্ট করেছে। ২৮শে অক্টোবর বিদেশ থেকে ফোন করে জানালে আমি (আশুতোষ) রসরাজের ফেসবুক আইডি থেকে ক্ষমা চেয়ে পোস্ট দিয়েছি রসরাজের পক্ষে। আশুতোষ আরো জানায়, তার কাছে রসরাজের ফেসবুকের পাসওয়ার্ড আছে। পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে গত ইউপি নির্বাচনে সদস্য পদে নির্বাচন করার কথা ছিল রসরাজের। মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করা হয়েছিল। ওই সময়ে আশুতোষ রসরাজকে নিয়ে মাধবপুর গিয়ে টাই পরা ছবিটি ওঠায়। এই ছবিটিই ফেসবুক খোলার সময় ব্যবহার করা হয়।

একটি সূত্র জানিয়েছে, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা আশুতোষের পরিবারের সব সদস্যের কল রেকর্ড পর্যালোচনা করেছে। এতে দেখা গেছে ভারতের একটি নম্বর থেকে তাদের সবার নম্বরে অনেকবার কল হয়েছে। ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা থেকে এই কলগুলো করা হয়েছে। এই কলগুলো আশুতোষই করেছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরিবারের সঙ্গে আশুতোষের ফোনে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। তবে পরিবারের লোকজন বলছেন আশুতোষ কোথায় আছে সেটি তাদেরও অজানা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিবারের কাছে আশুতোষের সন্ধান চাইছে। সে যদি ভারতে পালিয়ে থাকে তাহলে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য পরিবারকে বলা হচ্ছে। আশুতোষের বাবা অনুকূল চন্দ্র দাশের (মনা মাস্টার) বলেন, এই ঘটনায় আমার ছেলে জড়িত কিনা তা জানি না। তবে জড়িত থাকলে আমিও তার বিচার চাই। সে কোথায় আছে এই বিষয়ে কিছু বলতে পারিনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন বলেন- আশুতোষ রসরাজের ফেসবুক সংক্রান্ত বিষয়ে খু্‌ব ভালো জানে এমন একজন। ঠিক কি ঘটেছিল সেই ভালো বলতে পারবে। সে কারণে তাকে আমাদের দরকার। আশুতোষের বাবার সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করছি। বলছি আশুতোষকে নিয়ে আসার জন্য।

তার বাবা দায়িত্ব নিয়েছেন। ছেলেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন তিনি। তার বাবা আমাদের বলেছেন সে বাংলাদেশেই আছে। তিনি আরো জানান, রসরাজের ফেসবুকে পোস্টটি দেয়ার পর আশুতোষের কাছে ওই এলাকার বাসিন্দা প্রবাসে বসবাসকারী ফেসবুক বন্ধুদের অনেকেই ফোন করে। তাদের একজন মামুন। তারা আশুতোষসহ আরো কয়েকজনকে ফোন করে বলে রসরাজ এই কাজটা ভালো করেনি। বিদেশ থেকে ফোন পাওয়ার পর আশুতোষ রসরাজের নম্বরে ফোন করলে ফোনটি ধরে তার ভাই। তখন সে জানায় রসরাজ বিলে আছে।


তার ভাই পলাশের সঙ্গে কথা বলেই আশুতোষ রসরাজের পক্ষে ক্ষমা চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়।
উল্লেখ্য, রসরাজের ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর ছবি পোস্ট দেয়ার ঘটনায় তুলকালাম হয় নাসিরনগরে। এ ঘটনায় গত ২৯শে অক্টোবর স্থানীয় নেতৃস্থানীয় লোকজন রসরাজকে বাড়ি থেকে ধরে এনে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। তথ্য-প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয় তাকে। ঘটনার প্রতিবাদে এবং রসরাজের ফাঁসি চেয়ে পরদিন (৩০শে অক্টোবর) মাইকিং করে নাসিরনগর উপজেলা সদরে সমাবেশ ডাকে দুটি ইসলামী সংগঠন। সমাবেশ শেষ হওয়ার পরপরই নাসিরনগর উপজেলা সদরে তাণ্ডব চালিয়ে ১৫টি মন্দির ও অর্ধশতাধিক ঘর-বাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

সূত্র: মানব জমিন

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: