এক ‘পরোটা-বিক্রেতা’র ক্রিকেটার হয়ে ওঠার গল্প

প্রকাশিত: ০১ জানুয়ারি ২০১৭, ০৪:৩৫ এএম

স্পোর্টস ডেস্ক:‘চা-বিক্রেতা’কে নিয়ে আলোচনা আপাতত বন্ধ। পাকিস্তানে এখন নতুন আলোচনার বিষয়- একজন ‘পরোটা বিক্রেতা’। অখ্যাত এক পরোটা বিক্রেতার ক্রিকেটার হয়ে ওঠার গল্প। তার পাকিস্তান জাতীয় দলের পথে হাঁটার গল্প। গত বছর পাকিস্তানের এক ‘চা-বিক্রেতা’ আলোচনার ঝড় তোলেন। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যখন যুদ্ধ যুদ্ধ অবস্থা ঠিক তখনই ওই চা-বিক্রেতার ছবি প্রকাশ হয়। নীল চোখের সুদর্শন ওই চা-বিক্রেতাকে নিয়ে বিশ্ব মিডিয়া খবর প্রচার করে। সংবাদমাধ্যম ‘বিবিসি’ তৈরি করে প্রতিবেদন। ভারতের তরুণীরা নাকি পাকিস্তানি ওই নীল-চোখ পুরুষের প্রেমে পড়ে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানান। বিষয়টি নিয়ে ভারতের মিডিয়াও আলোচনায় সরগম করে তোলে। আলোড়ন তোলা ওই পুরুষ পরে মডেলিং ও সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব পান। সে আলোচনা আপাতত বন্ধ। এবার সামনে এলো এক ‘পরোটা-বিক্রেতা’।

করাচির একটি হোটেলে কাজ করেন ১৯ বছর বয়সী হানান খান। পরোটা বানানো তার কাজ। কাজের ফাঁকে যতটুকু সময় পান তা লাগান ক্রিকেটের পেছনে। ছুটি পেলেই ছুটে যান স্থানীয় কোনো ক্রিকেট মাঠে। তরুণদের সঙ্গে নেমে পড়েন ক্রিকেটে। ক্রিকেটের প্রতি প্রবল আগ্রহ-ভালোবাসা ও প্রতিভা ধীরে ধীরে প্রকাশিত হতে থাকে। তার বাড়ি পাকিস্তানের কোয়েটার চামানের প্রত্যন্ত অঞ্চল কিলা আবদুল্লাহতে। গত বছর তৃণমূল থেকে প্রতিভাবান ক্রিকেটার তুলে আনার জন্য ‘ট্যালেন্ট হান্ট’-এর আয়োজন করে কোয়েটার ক্লাব ‘কোয়েটা গ্লাডিয়েটরস’। সেখানেই নজর কাড়েন পরোটা বিক্রেতা হানান খান। বাঁ-হাতি এ ব্যাটসম্যান। প্রতিভা দেখিয়ে জায়গা করে নেন কোয়েটার ঘরোয়া গ্রেড-টুতে। ক্লাবটির অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে বেশ কয়েকটি ম্যাচ খেলেন। তার এমন উত্থান নিয়ে পাকিস্তানের টেলিভিশন চ্যানেল প্রতিবেদন তৈরি করে। এরই ফাঁকে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকমণ্ডলীর প্রধান ইনজামাম-উল হকের সঙ্গে দেখা হয় তার। ইনজি তার খেলায় মুগ্ধ। এখন হানান খানের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা।

কোয়েটা থেকে এবার তিনি ডাক পেলেন পাকিস্তানের জাতীয় ক্রিকেট একাডেমিতে (এনসিএ)। মালয়েশিয়া ক্রিকেট দলের বিপক্ষে চলতি মাসে দু’টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে পাকিস্তান। ওই ম্যাচের জন্য বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়কে জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ডাকা হয়েছে। তারমধ্যে অন্যতম ‘পরোটা বিক্রেতা’ হানান খান। ১৪ই জানুয়ারি লাহোরের গাদ্দাফী স্টেডিয়ামে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই পাকিস্তানের হয়ে মাঠে দেখা যেতে পারে তাকে। এমন সুযোগ সামনে আসায় খুশির শেষ নেই হানান খানের।

বলেন, ‘এমন সুযোগ পেয়ে সত্যিই আমি অনেক খুশি। আমার কাছে প্রথম ফোন আসে লাহোর থেকে। তখন আমি একটি ম্যাচ খেলছিলাম। পরে আমি ফোন নম্বরে কল ব্যাক করি। তখনই আমাকে এনসিএ-তে নির্বাচিত করার কথা জানানো হয়। আমি প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি। মনে করেছিলাম কেউ মিথ্যা কথা বলছে। এরপর আমি আমার নির্বাচকদের কাছে ফোন করি। তিনি আমাকে এ বিষয়ে নিশ্চিত খবর দেন।’ হানান খান পাকিস্তান জাতীয় দলে খেলতে চান। বলেন, ‘আমি ক্রমান্বয়ে সামনের দিকে এগুতে চাই। নিজের প্রতিভা ও নৈপুণ্য দিয়ে একদিন পাকিস্তান জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করতে চাই।’ ব্যাটিংয়ে তিনি পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক সালমান বাটের ভক্ত।

স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে পড়ে বাট ৫ বছর নিষিদ্ধ হন। নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ কাটিয়ে তিনি ফের ক্রিকেটে ফিরেছেন। হানান খান সালমান বাটের কিছু শটের দারুণ ভক্ত। বলেন, ‘ভারতের বিপক্ষে সালমান বাটের খেলা কিছু শটের দারুণ ভক্ত আমি। একদিন আমিও টপ ক্লাস ব্যাটসম্যান হতে চাই। ভারত ও অন্যান্য বড় দলগুলোর বিপক্ষে অনেক রান করতে চাই।’-মানবজমিন

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: