বাঙ্গালিয়ানার এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ মৃৎ‌শিল্প

প্রকাশিত: ০২ মার্চ ২০১৭, ১০:২২ এএম

বাংলা‌দে‌শের হাজার বছরের ঐতিহ্য মৃৎ‌শিল্প, যা বাঙ্গালিয়ানার এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। প্রাচীন এ শিল্পটি এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় অনেক সমৃদ্ধ। প্লাস্টিক আর সিরা‌মিকের যুগেও টিকে আছে দাপটের সঙ্গে।

বাঙ্গালিয়ানার ছাপ ফেলতে মৃৎশিল্প গৃহসজ্জা ও অফিস সাজা‌নোর কা‌জেও ব্যবহার করা হয়। এতে একদিকে যেমন সৌন্দর্যের প্রকাশ ঘটে, আবার ব্যবহারকারীর রুচির পরিচয়ও পাওয়া যায়। রাজধানীতে যে কয়টি জায়গায় মৃৎশিল্প সামগ্রী পাওয়া যায় তার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকার দোয়েল চত্ত্বর অন্যতম।

দোয়েল চত্ত্বরের রাস্তার ফুটপাতে মৃৎশিল্পের দোকান আছে ৫২টি। এ মৃৎ‌শিল্প গু‌লোর দাম আকার, মান ও নকশা অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। ছোটগুলোর দাম ২০ থেকে ৩০০ টাকা। বড়গুলো ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত।

আছে কাঠের তৈরি নানা সামগ্রী। দাম সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে,কেউ অর্ডার দিয়ে বানিয়ে নি‌লে সেগুলোর দাম অনেক সময় ২০/৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। বলছিলেন ৩০ বছর ধরে মৃৎশিল্পের ব্যবসা করা দোয়েল মৃৎশিল্প অ্যান্ড হ্যান্ডি ক্রাফটসের স্বত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম।

তিনি বিডি২৪লাইভকে বলেন, “এগুলোতো সৌখিন জিনিস। মৌলিক চাহিদা পূরণের পর টাকা থাকলে মানুষ এসব কেনে। আগে দেশ-বিদেশ থেকে অনেক লোক আসতো। এখন আর বিদেশিরা তেমন আসে না। তবে আমাদের যদি একটা স্থায়ী জায়গা থাকতো তাহলে খুব সুবিধা হতো, অনেকে কাজের অর্ডার দিতো। এখন তো অর্ডার তেমন পাই না।

কারণ, তারা আমাদের ওপর ভরসা রাখতে পারেন না। মনে করেন, দোকান থাকে কিনা। এছাড়া, স্থায়ী জায়গা থাকলে আমরা বিদেশেও অনেক জিনিস রপ্তানি করতে পারতাম।”

মাটির দোকানের দোকানী বাদল মিয়া বলেন, “২৫ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করি। এখন ব্যবসা মোটামুটি ভালো। যেহেতু প্রতিযোগিতা অনেক বেশি তাই পণ্যের মানও অনেক ভালো করতে হয়। আমার দোকানে দিনে ২ থেকে ৫ হাজার টাকার বিক্রি হয়।”

কোথা থেকে এসব জিনিস আনেন জিজ্ঞাসা করলে তিনি বিডি২৪লাইভকে জানান, তারা সাভার, কুমিল্লা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ফরিদপুর, টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাল সম্প্রদায়ের তৈরি করা এসব পণ্য ঢাকায় এনে বিক্রি করেন।

তবে তারও আক্ষেপ স্থায়ী জায়গা নিয়ে। বলেন, “সরকার যদি আমাদের একটা স্থায়ী জায়গার বন্দোবস্ত করে তাহলে খুব উপকার হয়। স্থায়ী জায়গার জন্য আমরা অনেকদিন থেকেই দাবি জানিয়ে আসছি। এখানে আমাদের অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। বৃষ্টি আসলে অনেক জিনিস নষ্ট হয়ে যায়।”

এখা‌নে মা‌টির গহনা কিন‌তে আশা ইডেন ক‌লে‌জের জেয়াস‌মিন ও তামান্নার কাছে মৃৎশিল্প কেনার কারণ জান‌তে চাইলে তারা জানান, এগু‌লো আমা‌দের দে‌শের ঐতিহ্য বহন ক‌রে আর বাহারী ডিজাই‌নের মা‌টির এ গহনা দেখ‌তে খু‌বি সুন্দর কিন্তু তুলনা মূলক দাম কম এজন্য এগু‌লো ব্যবহার ক‌রে থা‌কি।

কথা হয় ফার্ম‌গেট থে‌কে টব কিনতে আসা গৃহিণী নুরুন্নাহা‌রের সা‌থে তিনি বলেন, ঘর সাঝা‌তে মা‌টির তৈরী জি‌নি‌সের প্র‌তি আমার ঝোকটা বেশী আর এসব জিনিস ব্যবহারের একটা সুবিধা হলো, ব্যবহার করতে করতে যদি রঙ উঠে যায় তাহলে সিরিজ কাগজ দিয়ে ঘষে আবার রঙ করা যায়।

দোয়েল চত্ত্বরের এসব দোকানে পাওয়া যায় ছোট বড় ফুলদানী, ল্যানসেট, ঝুলন্ত পাখির বাসা, নকশি ঘণ্টা, টব, মাটির বাসন, প্লেট, মগ, ঘটি-বাটি, কয়েল স্ট্যান্ড, আগরদানী, কলমদানী, প্রদীপদানী, গয়নার সেটসহ শোপিসের হরেক জিনিস। সেইসঙ্গে পাওয়া যায় চমৎকার নকশার টেরাকোটা। যা এখন অনেকে ব্যবহার করছেন টাইলসের বিপরীত হিসেবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: