নিউইয়র্কে ইমিগ্রেশন বিষয়ক ওয়ার্কশপ

প্রকাশিত: ০৭ মার্চ ২০১৭, ০৯:০৮ পিএম

বিশেষ প্রতিনিধি:নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসে ইমিগ্রেশন বিষয়ক এক গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্কশপে আইনজীবী ও ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞরা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশিসহ প্রবাসীদের কঠোরভাবে আইন মেনে চলার এবং কোন প্রকার অপরাধের সঙ্গে জড়িত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে না যেয়ে আইনি লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দেন তারা। সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নিতেও বলেন তারা।

ওয়ার্কশপে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ, অভিবাসন সংস্কার ও বিতাড়ন প্রক্রিয়ার ঘোষণার বাস্তবতায় এ ধরনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট -আইস এর সঙ্গে ইমিগ্রেন্টদের অধিকারসহ ইমিগ্রেশন বেনিফিট বিষয়ক নানা তথ্য তুলে ধরা হয় এ ওয়ার্কশপে।

ব্রঙ্কসে বাঙালী অধ্যুষিত পার্কচেস্টার সেন্ট হেলেনা’স চার্স হলে গত ৫ মার্চ রোববার ’নো ইউর রাইটস’ ওয়ার্কশপ ফর ইমিগ্রেন্টস শিরোনামে এই ওয়ার্কশপটি অনুষ্ঠিত হয়। নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর রুবিন ডিয়াজ, স্টেট সিনেটর জেফ ক্লিইন, এসেম্বলিম্যান লুইস সিপুলভেদা এবং সেন্ট হেলেনা’স চার্সের ফাদার নেলসন হেনাও এর যৌথ আয়োজনে এই ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়।

এসেম্বলিম্যান লুইস সিপুলভেদার সঞ্চালনায় ওয়ার্কশপে বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় অংশ নেন পিআরএলডিইএফ লেটিনো জাস্টিস জ্যাকসন চিন, বিশিষ্ট আইনজীবী বাংলাদেশ-আমেরিকান কমিউনিটি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ও ব্রঙ্কস কমিউনিটি বোর্ডের ফাস্ট ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এন মজুমদার মাস্টার অব ল, নিউইয়র্ক লিগেল এসিটেন্স গ্রুপের সুপাভাইজিং প্যারালিগেল ডেভিড মুলিন্স, নর্দান ম্যানহাটান কোয়ালিশন ফর ইমিগ্রেন্ট রাইটস এটর্ণী এন্থনী আলবা, মেয়র অফিসের ইমিগ্রেন্ট এ্যাফিয়ার্স’র সুরিই মিরান্ডা এলাকন, ইমিগ্রেন্ট এ্যাফিয়ার্স ইউনিটের ব্রঙ্কস ডিস্ট্রিক্ট এটর্ণী অফিসের ডাইরেক্টর’স মিরিয়াম বেল ব্লেয়ার, নিউইয়র্ক সিটি মানবাধিকার কমিশনের অস্কার এসেনসিও, নিউইয়র্ক সিটি কনজুমার এ্যাফিয়ার্স’র তানজিলা রহমান প্রমুখ।

ওয়ার্কশপে প্যানেল আলোচকগণ বলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন নতুন আদেশ জারি করলেও আইন মেনে চললে এবং কোন প্রকার অপরাধের সঙ্গে জড়িত না হলে নিউইয়র্ক সিটির অভিবাসীদের ভয়ের কিছু নেই। নিউইয়র্কের গভর্ণর ও মেয়র অভিবাসী বান্ধব।

তবে ইমিগ্রেশন বিষয়ক কোন সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নিতে বলা হয়েছে। তারা বলেন, ইমিগ্রান্ট কান্ট্রি আমেরিকায় সবার সমানাধিকার। কংগ্রেস-সিনেটকে পাশ কাটিয়ে প্র্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার ইচ্ছেমত সব কিছু করতে পারবেন না। তারা সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, আমেরিকা আইনের দেশ। আইন মেনে চললে এবং কোন অপরাধের সঙ্গে জড়িত না হলে ভয়ের কিছু নেই।

ওয়ার্কশপে প্যানেল আলোচকগণ জানান, মার্কিন সরকার নির্দিষ্টভাবে কতিপয় ইমিগ্রেন্টদের ডিপোর্ট করতে পারে। এরমধ্যে রয়েছে যাদের আইসম্মত ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস নেই এবং আইসম্মত ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস থাকা সত্ত্বেও যাদের ক্রিমিনাল রেকর্ড আছে।

ওয়ার্কশপে জানান হয়, আইস প্রাথমিকভাবে কাকে টার্গেট করবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এডমিনিস্ট্রেশন সে তথ্যও প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে, যাদের আগের ক্রিমিনাল রেকর্ড আছে অথবা যাদের যাদের ক্রিমিনাল কেস বিচারাধীন আছে। যাদের ডিপোর্টের ফাইনাল অর্ডার দেয়া আছে। যারা জালিয়াতির অপরাধ করেছে কিংবা নকল এপ্লিকেশন/সরকারি এপ্লিকেশনে মিথ্যা বর্ণনা দিয়েছে এবং যাদেরকে আইস নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখে।

ওয়ার্কশপে মার্কিন এবং বাংলাদেশি আইনজীবী ও ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞরা ইমিগ্রান্টদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা তুলে ধরে সংশ্লিষ্ট সকলকে ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত তথ্য হাল নাগাদ করার পরামর্শ দেন।

ওয়ার্কশপে প্যানেল আলোচক বিশিষ্ট আইনজীবী মোহাম্মদ এন মজুমদার আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, কমিউনিটির আইনগত সহায়তার জন্য এ ধরনের ওয়ার্কশপের গুরুত্ব অপরিসীম। ইমিগ্রেশনসহ বিভিন্ন আইনি পরামর্শ নেওয়ার জন্য অভিজ্ঞ এটর্নীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।

মোহাম্মদ এন মজুমদার বলেন, এ ওয়ার্কশপে অভিবাসীদের বিভিন্ন আইনি জটিলতা সমাধানে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা তুলে ধরা হয়েছে। যাতে কমিউনিটির মানুষ প্রচলিত আইন ও বিধানের আওতায় সর্বোচ্চ নাগরিক সুবিধা ভোগ করতে পারেন। এসময় মোহাম্মদ এন মজুমদার ট্রাম্প প্রশাসন ও নতুন অভিবাসন আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশিসহ অভিবাসীদের নির্ভয়ে থাকার পরামর্শ দেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা করে কীভাবে গ্রিন কার্ড পাওয়া যায়, পুরোনো মামলা কীভাবে পুনরুজ্জীবিত করে গ্রিন কার্ড পাওয়া যায় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

ওয়ার্কশপে ব্যবসা প্রসার ও ব্যবসা স্থাপনের মাধ্যমে গ্রীনকার্ড পাওয়ার তথ্য, পুরনো ইমিগ্রেশন মামলা পুনরুজ্জীবনের পদ্ধতি, অন্যান্য আইন বিষয়ে আলোচক, আইনজীবী ও ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। সকলের জন্য উম্মুক্ত ‘ইমিগ্রেন্টসদের অধিকার‘ বিষয়ক এ ওয়ার্কশপে বাংলাদেশি কমিউনিটি এক্টিভিস্টসহ বিভিন্ন কমিউনিটির বিপুল সংখ্যক প্রবাসী অংশগ্রহণ করেন।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: