খুন-খারাবি ছেড়ে হয়ে যান গ্রিলমিস্ত্রি!
নিউজ ডেস্ক: ওয়ারেন্ট জারির পাঁচ বছর পর অবশেষে গ্রেফতার হয়েছে রাজধানীর কদমতলীতে চাঞ্চল্যকর ট্রিপল মার্ডারের অন্যতম আসামি সিরিয়াল কিলার মো. মাসুম (৩৫)। বৃহস্পতিবার ভোরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এতদিন গ্রেফতার এড়াতে অভিনব কৌশল অবলম্বন করে সে। ছেড়ে দেয় অপরাধ কর্মকাণ্ড। নিজ এলাকাতেও সে থাকত না। তাই কিছুতেই তাকে গ্রেফতার করা যাচ্ছিল না।
পুলিশের খাতায় পেশাদার খুনি মাসুম রাজধানীর শ্যামপুর, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা ও কদমতলী থানা এলাকায় কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। শুক্রবার সকালে কদমতলী থানা হেফাজতে থাকাবস্থায় কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে মাসুম। এসবের মধ্যে রয়েছে- ২০১১ সালে জিয়া সরণিতে ত্রিপল মার্ডার (বাবু, জনী ও হাসান), ১৯৯৯ সালে মেরাজনগরের ডিসবাবু মার্ডার মামলা, ওয়াসা এলাকায় স্বপন মার্ডার, মোহাম্মদবাগ বরিশাল ক্লিনিকে কালু মার্ডার ও ১৯৯৮ সালে পুলিশের কনস্টেবল শহীদ হত্যার ঘটনা।
মাসুম জানায়, ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় ২০১২ সালে তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করা হয়। ১৯৯৮ সালে হবিগঞ্জের একটি মাদক মামলায় সে প্রথম গ্রেফতার হয়। এ মামলায় জামিন পাওয়ার পর সে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। ওই বছর রাজধানীর ডেমরা এলাকায় পুলিশ কনস্টেবল শহীদকে হত্যা করা হয়। এ মামলায় ১৯৯৮ সালে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সে শহীদ হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি।
পরে জামিন পেয়ে ১৯৯৯ সালে তার নেতৃত্বে তিনটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ২০০০ সালে তাকে ফের গ্রেফতার করা হয়। এরপর টানা আট বছর জেলে থাকার পর ২০০৮ সালে সে জামিন পায়। ২০১১ সালে মাসুম জড়িয়ে পড়ে ট্রিপল মার্ডারে। এ মামলায় তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করা হলে গ্রেফতার এড়াতে সে কদমতলী থানার শ্যামপুর এলাকা ছেড়ে আশ্রয় নেয় কাঁচপুর এলাকায়। সেখানে দ্বিতীয় বিয়ে করে সংসার করতে থাকে। অপরাধ কর্মকাণ্ড ছেড়ে দিয়ে পেশা বদলে ফেলে। গ্রিলমিস্ত্রি হিসেবে মানুষের বাসাবাড়িতে গিয়ে জানালা-দরজা মেরামতের কাজ শুরু করে। কেউ অনুমান করতে পারেনি যে, মাসুম একজন সিরিয়াল কিলার। কিন্তু কদমতলী থানা পুলিশের একটি বিশেষ সিদ্ধান্তের কারণে তাকে গ্রেফতার হতে হল।
কদমতলী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী জানান, সম্প্রতি তার থানার পুরনো হত্যা ও ডাকাতি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের ওয়ারেন্ট তামিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ জন্য বিশেষ কৌশল হাতে নেয়া হয়। প্রত্যেক মামলার বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। আসামিদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হয়।
এতে জানা যায়, কিছু আসামি জামিনে আছে। কিছু আছে জেলখানায়। আবার কিছু পলাতক। পুলিশ তাদের একটি তালিকা করে। পলাতক আসামিদের ধরতে পুলিশ বিশেষ টিম গঠন করে। একপর্যায়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সিরিয়াল কিলার মাসুম মানুষের বাসাবাড়িতে গ্রিলমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করছে। গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে জানা যায়, কাঁচপুরের একটি বাড়িতে সে অবস্থান করে। পরে এসআই আজহারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল অভিযান চালিয়ে তাকে তার বাসা থেকে গ্রেফতার করে।
মাসুম জানায়, রাজধানীর শ্যামপুরে তার বাসা। সেখানে তার একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছিল। গ্রেফতার এড়াতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দ্বিতীয় বিয়ে করে সে কাঁচপুরে বাসা নেয়। কিন্তু সেখানে সে খুব একটা থাকত না। ঢাকার বাইরেই বেশি থাকত। অন্যদিকে তার তিন ছেলে ও এক মেয়ের দিকে তাকিয়ে মাসুম খুন-খারাবি থেকে সরে আসে।
সিরিয়াল কিলার মাসুম জানায়, ২০১১ সালে পর সে কোনো মামলাতেই হাজিরা দেয়নি। এর কারণ হিসেবে সে বলে, ‘টানা আট বছর জেল খেটেছি। এরপর আর জেলে যেতে চাইনি। এ কারণে খুন ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাজিরা দিতে গেলে ফের গ্রেফতার হওয়ার আশংকা আছে। তাই হাজিরা দিইনি।’
ট্রিপল মার্ডারের বিষয়ে মাসুম জানায়, ২০১১ সালের ৮ মার্চ রাত ১টার দিকে মোহাম্মদবাগ এলাকায় জনির বাসা থেকে জনি, বাবু ও হাসানকে পুলিশ পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে জনি, বাবু ও নাবিলকে মোহাম্মদবাগ এলাকার জিয়া সরণির পাশে শাহজাহান মিয়ার খোলা জমিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের তিনজনকেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এরপর পাশের একটি পুকুর থেকে হাত-মুখ ধুয়ে মাসুমসহ অন্যরা বাসায় চলে যায়। পুলিশের তৎকালীন সোর্স জাহাঙ্গীরের নির্দেশে ওই তিনজনকে হত্যা করা হয়। ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার টাকার ভাগাভাগি নিয়ে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে ওই তিনজনের দ্বন্দ্ব চলছিল।-যুগান্তর
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: