তারপরও ঢাকা-বরিশাল রুটে চলছে কালাম খান-১!

প্রকাশিত: ২৩ মার্চ ২০১৭, ০৩:০৫ পিএম

২২ মার্চ বুধবার সন্ধ্যা। ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী এম ভি কালাম খান-১ লঞ্চে উঠলেন বিডি২৪লাইভের প্রতিবেদক, গন্তব্য বরিশাল। শিতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) কেবিন নং-২১২। কেবিনে ঢুকতেই চমকে ওঠার মতো ঘটনা। জরাজীর্ণ পরিবেশ, এসি নষ্ট, মশার কামড়ে ঘুমানো যাচ্ছে না। বিনোদনের জন্য রাখা টেলিভিশনটিও নষ্ট।

এত গেল প্রথম দফা। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আবিস্কার ঘটতে থাকলো আরো নতুন নতুন সমস্যার। বিছানায় ছারপোকা আর জানালার ফাকে আরশোলার (তেলাপোকা) অনাগোনা বেড়ে গেল। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, অধিকাংশ কেবিনের অবস্থা প্রায় একই। বেশ কিছু কেবিনের এসি বা ফ্যান বিকল হয়ে আছে। প্রশ্ন আছে খাবারের মান নিয়েও। আর যাত্রী সেবার জন্য নেই পর্যাপ্ত লোকবল। সব মিলিয়ে ঢাকা-বরিশাল নৌ-রুটের যে আধুনিক ও বিলাসবহুল যাত্রী সেবা তার সঙ্গে মিল নেই এম ভি কালাম খান-১ এর।

অথচ অন্যসব আধুনিক লঞ্চ সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যে ভাড়া নেয়, কালাম খানও তার চেয়ে কম ভাড়া আদায় করে না। ডেক জন প্রতি ভাড়া ২০০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ৮৫০ টাকা, ডাবল কেবিন ১৬০০, ভিআইপি কেবিনে নেয়া হয় ৫০০০ টাকা।

ঢাকা গাইডে বলা হয়েছে- এম ভি কালাম খান-১ লঞ্চটি ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচল করে। ঢাকার সদরঘাট টার্মিনাল থেকে দু’দিন পর পর বরিশালের উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে পুরো লঞ্চটি রিজার্ভও করা যায়। লঞ্চটির ধারণক্ষমতা ৯০০ জন। লাইফ বয়া রয়েছে ১০০ টি।

লঞ্চটি রাত সাড়ে ৮ টায় সদরঘাট থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভোর ৪ টায় বরিশাল পৌঁছায়। বরিশাল থেকে একই সময়ে সদরঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে ভোর ৪ টায় ঢাকা পৌঁছায়। কিন্তু এর সঙ্গে বাস্তবের মিল পাওয়া যায়নি। রাত সাড়ে ৮টার পরিবর্তে সরদরঘাট থেকে ছেড়েছে রাত ৯টায়। আর পৌঁছেছে নির্ধারিত সময়ের ২ ঘণ্টা পর সকাল ৬টায়।

এসব বিষয়ে কথা হয় এম ভি কালাম খান-১ এর মালিক সিদ্দিক খানের সঙ্গে। তিনি বিডি২৪লাইভকে বলেন, যাত্রীসেবা যদি খারাপ হয়ে থাকে তাহলে যাত্রীরা আমার লঞ্চে চড়বেন না। সুতরাং এতে যাত্রীদের কোন লোকসান হবে না, লোকসান হবে আমার।

শিতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসি) ও কিছু কেবিনের টিভি অচল স্বীকার করে তিনি বলেন, এই সময়টায় এসি প্রয়োজন হয় না। এসি প্রয়োজন হলে আমরা সার্ভিস করে দেই। এখন ফ্যান ব্যবহার করতে পারে যাত্রীরা। অনেক কেবিনেই ফ্যান অচল আছে জানালে তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, এটা নিয়ে আপনাকে চ্যালেঞ্জ করলাম, আসেন। তাছাড়া কারো বাড়ির ফ্যানওতো বিকল হতে পারে।

একজন যাত্রী টাকা দিয়ে যাবে, তার কেবিনের ফ্যান কেন নষ্ট থাকবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কেবিন নিয়ে আমরা খুব ভাবি না, আমরা ডেকের যাত্রীদের গুরুত্ব দেই। আর কেবিনে যদি ভালো সেবা না দিতে পারি তবে ভাড়া কম দিবেন, কেবিন দেখে ভাড়া দিবেন।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফিটনেস না থাকায় ২০১৫ সালে যাত্রী বোঝাই অবস্থায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিটিএ) বরিশাল অফিসের কর্মকর্তারা লঞ্চটির রুট পারমিট বাতিলের ঘোষণা করেন। তখণ বরিশাল নৌ-নিরাপত্তা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, লঞ্চটির তলায় ওজন বৃদ্ধি ও চতুর্থ তলার অবকাঠামো পরিবর্তনের জন্য সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর থেকে লঞ্চ মালিককে নোটিশ দেয়া হয়। তারপরও অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছিলো। সেমতে লঞ্চটিতে থাকা যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে রুট পারমিট বাতিল ঘোষণা করা হয়।

এ বিষয়ে সিদ্দিক খান জানান, বলা হয়েছিল লঞ্চের তলায় ওজন বেশি, অথচ ভারসম্য রক্ষার ক্ষেত্রে তলায় ওজন থাকা খারাপ কিছু নয়। আর অবকাঠামোগত সমস্যারও সমধান করা হয়। আসলে পুরো বিষয়টি ছিলো ভুল বুঝাবুঝি। লঞ্চটির ফিটনেস ঠিকই ছিল।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: