জাবিতে মুক্তিসংগ্রাম নাট্যোৎসবের দ্বিতীয় দিন আজ

প্রকাশিত: ২৬ মার্চ ২০১৭, ১০:০৬ পিএম

‘মুক্তির আলোয় আলোকিত করি ভুবন’ এই স্লোগানকে সামনে রেখেএবং গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সপ্তাহব্যাপী মুক্তিসংগ্রাম নাট্যোৎসবের আজ দ্বিতীয় দিন চলছে।বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র এই উৎসবের আয়োজন করেছে। এর আগে গতকাল উদ্বোধনী দিনে১৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

নাটকসমূহকে কেন্দ্র করে একের পর এক আয়োজিত হচ্ছে আলোচনা সভা, গান, আবৃত্তি, আর্ট ক্যাম্প, মুক্তিযুদ্ধের স্মারক প্রদর্শনীসহ যাবতীয় সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড। শনিবারসন্ধ্যা পৌনে ৬ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে উৎসবের উদ্বোধন করেন মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি (বীর প্রতীক)। উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক রাজধানী জাহাঙ্গীরনগরের এই সাত দিনের রণযাত্রা শুরু হয়।

এসময় প্রধান অতিথি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর, বিশেষ অতিথি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, নাট্য ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, বাংলাদের কর্মকমিশনের সদস্য ও সাবেক জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবাদুল করিম বুলবুল এবং অনুষ্ঠানেরসভাপতি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আয়োজিত নাট্যোৎসবের আজ ২৬ শে মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদকে মরণোত্তর স্মারক প্রদান করা হবে। তাজউদ্দিন আহমদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমি এমপি বাবার পক্ষে স্মারক গ্রহণ করবেন।

২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে অনুষ্ঠান শুরু হবে এক অভিনব কর্ম সম্পাদনের মধ্যে দিয়ে। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ দেশব্যাপী ৩০ লাখ বৃক্ষ রোপণের উদ্বোধন করবেন। এর সাথে সঙ্গতি রেখে দুপুর তিনটায় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির মুখপাত্র অধ্যাপক শাহরিয়ার কবিরের পরিচালনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও শুরু হবে বৃক্ষরোপণ। বৃক্ষরোপণ শেষে শুরু হবে স্মারক সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক পর্ব পরিচালনা করবে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, জাবি, শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদ, জাবি এবং জয় বাংলা সাংস্কৃতিক জোট।

২৭ মার্চ তারিখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা ও সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করতে উপস্থিত থাকবেন গাজী গোলাম দস্তগীর গাজী এমপি, নাট্যব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান, অভিনয় ব্যক্তিত্ব ফেরদৌসী মজুমদার। প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেবেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। ঢাকার বেইলি রোডের ‘থিয়েটারের পরিবেশনায় মঞ্চস্ত হবে নাটক ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’।

২৮ মার্চথেকে ৩১ শে মার্চ পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের গুণী ব্যক্তিত্বরা আসবেন। শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সামনে নিজেদের অভিজ্ঞতা, চিন্তা, ভাবনা তুলে ধরে জ্ঞান আলোকের বিকাশ ঘটাবেন। অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত থাকবেন বধ্যভূমির আবিষ্কারক ডা. মো. আবুল হোসেন, সাংবাদিক মনজরুল আহসান বুলবুল, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা আকম মোজাম্মেল হক, সিআরপির প্রতিষ্ঠাতা ভেলরি এন্ড টেলর, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, নারায়ণগঞ্জের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভি, বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদ ও ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, ইউজিসির বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, অভিনেতা তারিক আনাম খান, ডাক্তার নুজহাত চৌধুরী, মাহাবুব আরা গিনি এমপি, পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আবু নাসের কামাল চৌধুরী, নাট্য ব্যক্তিত্ব সারা যাকের, রামেন্দু মজুমদার, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব এন্ড্রু কিশোর।

শেষের দিন মরণোত্তর সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হবে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মিশুক মুনিরকে। ২৮, ২৯, ৩০ ও ৩১ মার্চ নাটকমঞ্চস্ত হবে যথাক্রমে সময়ের প্রয়োজনে, নটপালা, মৃত্যুপাখি ও জেরা। গতকাল রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৫শে মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। জাতির এই চির আকাঙ্খিত সময়কে প্রলম্বিত হতে দিতে চায় না জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। আর তাই সাত দিনের কর্মসূচির শুরু হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল ২৫শে মার্চ তারিখটিকে। তাই জাহাঙ্গীরনগরে ২৫শে মার্চ বিকাল থেকেই শুরু হয়েছে চেতনার এই সপ্তাহব্যাপী কর্মযজ্ঞ।

উদ্বোধনের পর অতিথিরা ক্যাফেটেরিয়ায় মুক্তিসংগ্রামের আর্ট ক্যাম্প ও স্মারক প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন। সন্ধ্যা ৬ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন ও মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়।

এরপর অনুষ্ঠিত আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মহিউদ্দিন খান আলমগীর বলেন, ‘২৫ মার্চের কালরাতে হানাদার বাহিনীর বর্বরতার মহোৎসব আমি দেখেছি। এই নৃশংসতার প্রতিরোধ গড়েছিল স্বাধীনতাকামী বাঙালিরা। মুক্তিসংগ্রামের চেতনাবোধ এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে যাবে।’

উৎসবের উদ্বোধক তারামন বিবি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা না পেলে ২৫ মার্চ কালরাতে গণহত্যা চালানো সেই অমানুষদের সাথেই আমাদের থাকতে হতো। তারা আমাদেরকে মানুষ বলে গণ্য করতো না। এসব মাথায় রেখেই আমরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। যুদ্ধ মোটেও সহজ ছিল না। এমনি এমনি এই স্বাধীন দেশের জন্ম হয়নি।’

বিশেষ অতিথি ডা. দীপু মনি বলেন, ‘২৫ মার্চের গণহত্যা ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যা। কিন্তু এটি সারাবিশ্বে সেভাবে পরিচিতি পায়নি। কারণ ৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশে যে সামরিক শাসন এসেছে, তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ধারায় পরিচালিত করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে গণহত্যার ইতিহাস বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা হয়নি। বরং ইতিহাস বিকৃত করে পাকিস্তানের দোসরদের ক্ষমতায় বসানো হয়েছিল। শীঘ্রই গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবো বলে আমরা আশাবাদী। এর মধ্য দিয়ে আমরা গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারীদের বিচারের পথ সুগম করতে পারবো।’

আলোচনা সভা শেষেনাট্যাচার্য সেলিম আল দীন (মরনোত্তর), অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদী (মরনোত্তর), সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক (মরনোত্তর),জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি (বীর প্রতীক), সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ সহ ১৫ জনবিশিষ্ট ব্যক্তিকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।সবশেষে মঞ্চস্থ হয় পদাতিক নাট্য সংসদের নাটক ‘কালরাত্রি’।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: