আমাজনের রানি নগ্ন বাঙালি তরুণীকে ঘিরে তোলপাড়

প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪, ০৪:০৭ পিএম

লাতিন আমেরিকার আমাজনের গভীর বনানিতে বসবাস করেন এমন এক শ্রেণির আদিবাসী, যারা এখনো লজ্জা নিবারণের জন্য পোশাক পরতেও শেখেনি। অনেকে তাদের হিংস্র বললেও এই আদিবাসীদের সঙ্গেই বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছেন বাঙালি এক তরুণী। এমনকী সেখানকার এক আদিবাসী পুরুষকে বিয়েও করেছেন বাঙালি বংশোদ্ভূত এই কন্যা।

বাঙালি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ চলচ্চিত্র নির্মাতা সারাহ বেগম লন্ডনের কিংস্টোন কলেজ থেকে তখন মাত্র ডিগ্রি শেষ করেছেন। তাঁর স্বপ্ন জীবনে তিনি ব্যতিক্রমী কিছু করবেন। যেই ভাবা সেই কাজ। নিজের জমানো সঞ্চয়টুকু দিয়ে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরের বিমান টিকিট কিনলেন। সেই সঙ্গে ভাড়া করলেন একজন সিনেমাটোগ্রাফার। ব্যাস, ছুটলেন আমাজান জঙ্গলে বসবাসরত হুয়ারোয়ানি আদিবাসীদের গ্রামে। উদ্দেশ্য- তাদের ওপর একটি ডকুমেন্টারি বানাবেন। জঙ্গলের ভূমিপুত্রদের উপর তেল অনুসন্ধানকারী বড় বড় কোম্পানিগুলোর হুমকির বিষয়টি তুলে ধরবেন।

কিন্তু সেখানে যাওয়ার কয়েকদিনের মাথায় বিয়ে করে ফেললেন সভ্যতার আলো থেকে বহু দূরে থাকা আদিবাসীটির এক শিকারি পুরুষকে। তাও আবার কনের বয়স যেখানে ২১, বরের বয়স ৫০! অবাক হচ্ছেন?

নিজের গল্পের পুরোটাই সারাহ ব্যাখ্যা করেছেন মেল অনলাইনের কাছে। তাঁর বক্তব্য, হুয়ারোয়ানির লোকেরা বাস করে দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে তেল সমৃদ্ধ এলাকায়। তাই সেখানে তেল অনুসন্ধানকারী সংস্থাগুলির আনাগোনা বেশি। ইতিমধ্যে সেখানে ঘাঁটি গড়ার প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে বড় বড় অন্তত পাঁচটি সংস্থা। এর ফলে হুমকির মুখে পড়েছে এলাকার বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্র ও জীববৈচিত্র্য। এ বিষয়টি বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার জন্য ২০১০ সালে ইকুয়েডের যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সারাহ।

সারাহ সে সময় একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। জীবনে ব্যতিক্রমী কিছু একটা করছেন- এ বিশ্বাস থেকে চাকরিটা ছেড়ে দেন। হাতে জমানো টাকা দিয়ে কিনে ফেললেন ইকুয়েডরের বিমান টিকিট। সঙ্গে নিলেন একজন সিনেমাটোগ্রাফার। ইকুয়েডরে গিয়ে নিলেন একজন গাইড। এরপর চললেন হুয়ারোয়ানিদের গ্রাম বামেনোতে।

হুয়ারোয়ানিদের মোট জনসংখ্যা তিন হাজার। বিদেশিদের ব্যাপারে তাদের অভিজ্ঞতা অত্যন্ত তিক্ত। তবে সারাহ যখন তাঁর নিজের উদ্দেশ্যের কথা জানালেন গ্রামবাসী বেশ ভালোভাবেই গ্রহণ করেন।

সারাহ বলছেন, গ্রামে যাওয়ার কয়েকদিন পর তাঁকে একটি কুঁড়েঘরে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘরের নারীরা সব নগ্ন। তারাই সারাহকে জানালো, তাঁর জন্য জঙ্গলের ঐতিহ্যবাহী পোশাকটি তৈরি করছে। গাছের আঁশ দিয়ে তৈরি এ জামাটি কেবল কটিদেশে জড়ানো হয়। সারাহর প্রথমে মনে হয়েছিল, যেহেতু এগুলো রেকর্ড করা হচ্ছে তাই তিনি নগ্ন হতে পারবেন না। এক সময় মনে হলো তিনি সেখান থেকে ছুটে পালাবেন। পরে অবশ্য মনে হলো তিনি জঙ্গলকে খুব কাছ থেকে বুঝতে চান। নগ্ন সারাহকে ম্যাকাও পাখির পালকের একটি মুকুট পরিয়ে দেওয়া হয়।

তখনই সেই জঙ্গলের সবথেকে জনপ্রিয় যোদ্ধা গিনক্তোর সঙ্গে সারাহ-র বিয়ে দেওয়া হয়। প্রথম প্রথম রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সারাহ। পরে উপজাতির লোকেরা তাঁকে জানায়, বিয়ে মানা কিংবা না মানা সারাহর ইচ্ছা। এটা কেবল একজন বহিরাগত হিসেবে জঙ্গলের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার প্রতীক হিসেবে করা হয়েছে।

স্থানীয় ভাষা না জানলেও সারাহ নতুন স্বামীর সঙ্গে কাজ চালিয়েছেন তার সঙ্গে থাকা গাইডের মাধ্যমে। যে কাজের জন্য সেখানে গিয়েছিলেন সেটা বেশ ভালোভাবেই শেষ করেছেন সারাহ। এক পর্যায়ে সঙ্গে থাকা সিনেমাটোগ্রাফার বুলের হাত কেটে গেলে তাতে সংক্রমণ দেখা দেয়। সারাহ-রও কৃমির সমস্যা দেখা দেয় এবং তা পাকস্থলিতে সংক্রমিত হলে তাঁরও চিকিৎসার প্রয়োজন দেখা দেয়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ফিরে আসেন আধুনিক দুনিয়ায়।

হুয়ারোয়ানিদের ওপর নির্মিত সারাহর প্রামাণ্যচিত্র গত বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে জায়গা পেয়েছিল। এছাড়া শেফিল্ড ডকুমেন্টারি ফেস্টিভ্যাল ও অ্যাডভেঞ্চার ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও জায়গা করে নিয়েছিল আধঘণ্টার এই ডকুটি।-ডেইলি মেল।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: