দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে ভাবনার পাঁচ দিন... (ভিডিও)

প্রকাশিত: ০৪ মার্চ ২০১৫, ০৫:৩৫ পিএম


পতিতা! শব্দটা শুনেই নাক সিঁটকাই আমরা। তাদের কষ্ট বুঝেও দেখলেই দূরে সরে যাই। এভাবেই যৌনকর্মীদের আমরা হেয় করে চলেছি। কিন্তু তাদের জীবনের গভীর বেদনা অনুভব করে তাদের অবর্ণনীয় কষ্টের জীবনচিত্র ফুটিযে তুলতে বরাবরই উদ্যোগী হয়েছেন দেশের নির্মাতারা। যৌনকর্মী চরিত্রে অভিনয়ের জন্যে এগিয়ে এসেছেন অনেক অভিনেত্রীও। যৌনকর্মীর জীবনের ভেতর ডুব দিয়ে তারা পর্দায় তুলে এনেছেন তাদের জীবন কে। তেমনই কয়েকজন জনপ্রিয় অভিনেত্রীর মুখোমুখি হয়েছে । ধারাবাহিক এ আয়োজনে আজ প্রকাশিত হল আশনা হাবীব ভাবনার অভিজ্ঞতার কথা..

টেলিফিল্ম ‘প্রতিদিন শনিবার’। দীপংকর দীপনের নির্মানে এ নাটকে যৌনকর্মীর নাম ‘বিজলি’। চরিত্রটি রূপায়ণ করেছেন অভিনেত্রী ভাবনা। শুনুন তার মুখেই…
এটি আমার অন্যতম সেরা কাজ বলে আমার মনে হয়। কাজটা করতে গিয়ে আমাকে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে যেতে হয়েছে। তাদের মতো করে সেখানে থাকতে হয়েছে। সেখানে না গেলে তাদের জীবনকে এত কাছ থেকে দেখা হতো না। তাদের জীবনকে অনুভব করা হতো না। বুঝতেই পারতাম না তারা কেমন কষ্টে থাকে। আমি সেখানে থেকেছি। তাদের সাথে কাজ করে মনে হয়েছে তারা অনেক ভালো। তাদের প্রত্যাশা অনেক কম। আমাদের এত কিছু লাগে জীবন-যাপন করতে।
আর একটা মানুষ জানেইনা যে পরের বেলায় কি খাবে। ওরা কোন রান্না করে না। ওরা ভাত কিনে খায়। এমন না যে ওদের অনেক আয়। অনেকের সাথে আমার যোগাযোগ আছে। মায়া খালা, বেগম খালা, স্নিগ্ধাসহ অনেকের সাথে ছিলাম। ওরা আমাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছিলো। মায়া খালা আমাকে একটা কানের দুল, বেগম খালা গলার চেইন, আদুরী নামে একটা মেয়ে আমাকে একটা চিঠি লিখে দিয়েছে।
একটানা বলে যান ভাবনা, ওদের সবাই বেশ্যা বলে, নটী বলে। তাদের কষ্টের কথা সবাই জানে, কিন্তু তাদের পাশে কেউ দাঁড়ায় না। কিন্তু তাদের প্রত্যেকের জীবনেই কঠিন সব কষ্টের সব গল্প আছে। আমার সাথে ওদের এখনো কথা হয়। যোগাযোগ হয়। ইচ্ছে থাকা স্বত্ত্বেয় আমি ওদের জন্য তেমন কিছু করতে পারি না।’ বলতে বলতে গলা ভিজে উঠছিলো ভাবনার।

আদুরীকে ৬৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছিলো তার প্রেমিক। যতদিন না আদুরী পুরো টাকাটা শোধ দিতে পারবে ততদিন সে এখানে বন্দী। কিন্তু ট্র্যাজেডি হল আদুরীর পরিবার আর আদুরীকে ফেরত নিতে চায়না। মায়াকে বিক্রি করে দিয়েছিলো তার সৎ মা। এখন ওই বৃদ্ধা সৎ মাকেই মায়া খালা চালায়। ওখানে নাচঘর আছে। নাচলে এক্সট্রা টাকা পাওয়া যায়। মায়া খালা সেখানে নাচে। বলছিলেন ভাবনা।

টানা পাঁচদিন একটানা শ্যুটিং করতে হয়েছে ভাবনাকে। রাতে ছিলেন পাশের একটা সরকারী রেস্টহাউজে। কিন্তু সারাদিন থেকেছেন তাদের সঙ্গেই। প্রথম যেদিন সেখানে গেলেন, শ্যুটিং ইউনিটের কেউই দাঁড়াতে পারছিলেন না উৎকট গন্ধে। খাবারও খেতে পারেননি প্রথম দিন। ভাবনা বলেন, আমার মনে হয়েছে ওটা একটা আলাদা জায়গা। আলাদা পৃথিবী। আমাদের চারপাশের জগতের সঙ্গে ওখানকার কোন মিল নেই। প্রথমদিন একটু কষ্ট হলেও আমি পরে অভ্যস্ত হয়েছি।
নাটকটি গতবছর রোজার ঈদে প্রচার হয়। নাটক দেখে সবাই অনেক প্রশংসা করেছিলো। জিগেস করেছিলো ওদের মতো করে দাঁড়ানোর ভঙ্গিও কিভাবে আমি রপ্ত করলাম। আমি আসলে তাদের জীবনের ভেতর ডুব দিয়েছিলাম। তাদের কষ্টের সাথে তাদের যাপনের সাথে…

এবার নির্মাতা দীপনের মুখে শুনুন, কেন তিনি গিয়েছিলেন দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে-‘বিজলীর মধ্যে একেবারে বিপরীত বৈশিষ্ট গুলো সহাবস্থান করে। বিজলী কল্পনায় বাস করে খুব কঠিন বাস্তবতার মধ্যে, বিজলী ভালবাসে খুব ভালবাসা হীনতার মাঝে। বিজলী অপরিপক্ক অথচ, বিজলী ফিরিয়ে দিতে জানে। বিজলী খুব সৎ। খুব সততা না থাকলে বিজলীকে পোট্রেট করা যায় না। যেটা একজন শিল্পীর সবচেয়ে বড় গুন। তা ভাবনার আছে। তাই বিজলী এত প্রাণবন্ত, তাই বিজলী এত টানে। আমি বিজলীকে দেখতে চেয়েছি, তাই ফ্রেমের এর সাথে আমার দীর্ঘদিনের প্রেম কে দুরে ঠেলেছি। বিজলী তো আর রোজ রোজ আসেনা,শুধু শনিবারেই আসে।’
‘প্রতিদিন শনিবার’ এর কাহিনী সংক্ষেপ
যৌনপল্লীর মেয়ে বিজলি। তার স্বপ্ন ফরহাদকে বিয়ে করে সংসারী হওয়ার। তাদের গভীর ভালোবাসার এ সর্ম্পকে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ফরহাদের মুসলমান পরিবার। পরিবারের চাপে অন্যত্র বিয়ে করেন ফরহাদ। এ যৌনপল্লী থেকে ফরহাদের বাড়ি ঊনসত্তর কিলোমিটার দূরে। বিয়ের আগে প্রতি শনিবার এই দীর্ঘ রাস্তা পার হয়ে বিজলির সঙ্গে দেখা করতে আসতো ফরহাদ। এ পাড়ায় বিজলির অনেক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও শনিবার ঘরে কোনো কাস্টমার তুলতে না।

ভালোবাসার এ গল্প শুনেই রবার্ট বিজলির প্রেমে পড়ে। প্রফেশনাল কাজে বাংলাদেশে আসা ব্রিটিশ রবার্ট প্রথমে এ পাড়ায় এসেছিল ছবি তোলার জন্য। বিজলিকে দেখার পর রবার্ট সেদিন ফিরে যেতে পারেনি। টানা তিনদিন বিজলির ঘরে ছিল। রবার্ট আরো একদিন থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেনি। এমন গল্প অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে টেলিফিল্ম ‘প্রতিদিন শনিবার’।





পাঠকদের জন্য নাটকটির ইউটিউব লিংক টি দেওয়া হল -https://www.youtube.com/watch?v=zOQ1OFxkWSQ&t=678

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: