আজ আফসোস সালমান শাহ্ ভক্তদের

প্রকাশিত: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫, ০৩:১৩ পিএম

বিনোদন প্রতিবেদক:

বাংলাদেশের ১৯৯০-এর দশকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নায়ক। প্রকৃত নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। এই অভিনেতা সর্বমোট ২৭টি চলচ্চিত্র অভিনয় করেন। এছাড়াও টেলিভিশনে তার অভিনীত গুটি কয়েক নাটক প্রচারিত হয়। ১৯৯৩ সালে তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত কেয়ামত থেকে কেয়ামত মুক্তি পায়। একই ছবিতে নায়িকা মৌসুমী ও গায়ক আগুনের অভিষেক হয়।

জনপ্রিয় এই নায়ক নব্বইয়ের দশকের বাংলাদেশে সাড়া জাগানো অনেক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তিনি ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর অকালে রহস্যজনক ভাবে মৃত্যুবরণ করেন। অভিযোগ উঠে যে, তাকে হত্যা করা হয়; কিন্তু তার সিলিং ফ্যানে ফাঁসিতে হত্যাকান্ডের কোনো আইনী সুরাহা শেষ পর্যন্ত হয়নি।

সোহানুর রহমান সোহানের রেকর্ড পরিমান ব্যবসাসফল ছবি ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। যা পরিচালক ও প্রযোজক ভারত থেকে মুল ছবির প্রযোজক ও পরিচাকের অনুমতি নিয়েই ছবিটি তৈরি করেন। সোহান তখন ইন্ডাস্ট্রির নবীন একজন পরিচালক যিনি বাংলাদেশের ৮০র দশক থেকে ৯০ দশক এর সবচেয়ে সেরা পরিচালক এ জে মিন্টুর সহকারী পরিচালক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছিলেন এবং মিন্টুকেই যিনি ‘গুরু’ মানেন। ৯২ সালে ‘বেনাম বাদশাহ’ দিয়ে সোহান পরিচালকের খাতায় নাম লিখান যেটি ছিল সেই সময়ের অন্যতম ব্যবসাসফল ছবি। প্রথম ছবিতেই সোহান বুঝিয়ে দিয়েছিলেন গুরু মিন্টুর যোগ্য একজন ছাত্রই ছিলেন তিনি। সোহানের ছবি দিয়ে কাজ শুরু করলেও সালমান কে কখনও গুরু এ জে মিন্টুর ছবিতে পাওয়া যায়নি। যা সালমান এর নিজেরও একটা আক্ষেপ ছিল মিন্টুর ছবিতে কাজ না করার জন্য।

প্রথম সাক্ষাতেই দর্শক নড়ে চড়ে বসলো নতুন সুদর্শন তরুন নায়ক সালমান কে দেখে । এরপর যতই ছবির গল্প এগোতে থাকে ততই যেন সালমানকে দর্শকদের ভালো লাগতে থাকে । সেই সাথে ভালো লাগতে থাকে সালমান – মৌসুমি জুটিকে । কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির সুপারহিট সালমান মৌসুমির ২য় সুপারহিট ছবি শিবলি সাদিক এর ‘অন্তরে অন্তরে’। ‘অন্তরে অন্তরে ‘ ছবির আলম খানের গানগুলো ছিল সেই সময়ের রেডিও ও টেলিভিশনের ছায়াছবির গানের মধ্য তুমুল জনপ্রিয় গান। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ও ‘অন্তরে অন্তরে’ ছায়াছবি দুটি সুপারহিট হওয়ার সুবাদে সালমান- মৌসুমি জুটির চাহিদা আকাশতুঙ্গে। ঠিক এমন সময়ই কি এক অজানা কারনে সালমান –মৌসুমি আর জুটি বাঁধতে রাজী হননি। তাঁরা দুজনেই নিজেদের চেনাতে সিদ্ধান্ত নিলেন যে আর একসঙ্গে কোন ছবিতে অভিনয় করবেন না যা পরবর্তীতে মাত্র আরও ২ টি ছবি ছাড়া দুজনের দেখা একসঙ্গে দর্শকরা পায়নি। ফলে পরিচালকগন বেশ বিপাকে পড়ে যান ,কারন ঐ সময় মৌসুমি ছাড়া প্রতিষ্ঠিত সব অভিনেত্রীই ছিলেন ইন্ডাস্ট্রিতে সালমানের সিনিয়র যারা তখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। বিশেষ করে চম্পা ও দিতি। এদের সাথে জুটি করেও লাভ হবেনা। সালমান হয়ে পড়েন মৌসুমি বিহীন একা।

প্রয়াত অভিনেতা ও পরিচালক জহিরুল হক সিদ্ধান্ত নেন যে ইন্ডাস্ট্রির আরেক নতুন মুখ ‘শাবনুর’কে নিয়ে সালমান এর সাথে ছবি বানাবেন। "তুমি আমার" ছবিটি সালমান ও শাবনুর জুটির প্রথম কাজ। তুমি আমার ছবির সাফল্যর পরপরেই পরিচালক জহিরুল হক সালমান -শাবনুর জুটিকে নিয়ে ৭০র দশকের সুপারহিট খান আতাউর রহমান এর ‘সুজন সখী’ (ফারুক কবরী) রিমেক বানানোর ঘোষণা দেন যা পরবর্তীতে তিনি শেষ করে যেতে পারেননি । ছবিটির শুটিং শুরু করার পরপরেই পরিচালক জহিরুল হক মৃত্যুবরণ করেন যার ফলে ছবিটির কাজ থেমে যায়। পরবর্তীতে পরিচালক তমিজ উদ্দিন রিজভি ছবিটির কাজ শেষ করে পরিচালক জহিরুল হক এর নাম দিয়েই ছবিটি মুক্তি দেন। পরিচালক মোহাম্মদ হান্নান তিন সুপারহিট রোমান্টিক ছবির নায়ক সালমান কে নিয়ে তৈরি করেন বাংলাদেশের অন্ধকার ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ ‘বিক্ষোভ’ ছবিটি।

মাত্র তিনবছরের ক্যারিয়ারে প্রয়াত সালমান যে সকল খ্যাতিমান ও গুণী পরিচালকদের ছবিতে কাজ করেছিলেন তাদের নাম ও ছবির তালিকা – সোহানুর রহমান সোহান (কেয়ামত থেকে কেয়ামত), শিবলি সাদিক – (অন্তরে অন্তরে, আনন্দ অশ্রু ও মায়ের অধিকার), জহিরুল হক ( তুমি আমার ও সুজন সখী), গাজী মাজহারুল আনোয়ার (স্নেহ), শফি বিক্রম্পুরি ( দেনমোহর), দিলিপ সোম (মহামিলন), এম এম সরকার (চাওয়া থেকে পাওয়া, প্রেম পিয়াসি), বাদল খন্দকার ( স্বপ্নের পৃথিবী), হাফিজউদ্দিন ( আঞ্জুমান), দেলোয়ার জাহান ঝনটু ( কন্যাদান) , মালেক আফসারি ( এই ঘর এই সংসার), এম এ খালেক ( স্বপ্নের পৃথিবী), জীবন রহমান (প্রেমযুদ্ধ), মোহাম্মদ হান্নান (বিক্ষোভ), মোহাম্মদ হোসেন (প্রিয়জন), মতিন রহমান (তোমাকে চাই) ,শাহ আলম কিরন ( বিচার হবে), জাকির হোসেন রাজু ( জীবন সংসার) তমিজ উদ্দিন রিজভী (আশা ভালোবাসা) ।

যে সকল গুণী ও খ্যাতিমান পরিচালকদের সাথে কাজ করতে পারেননি বা করার সুযোগ হয়নি তাঁরা হলেন , কামাল আহমেদ, এ জে মিন্টু, দেওয়ান নজরুল, মোতালেব হোসেন, দিলীপ বিশ্বাস, রায়হান মুজিব, ফজল আহমেদ বেনজীর , কাজী হায়াত, শহিদুল ইসলাম খোকন, মোস্তফা আনোয়ার, চাষি নজরুল ইসলাম, আমজাদ হোসেন, আবুল খায়ের বুলবুল, অশোক ঘোষ, নাদিম মাহমুদ, সিদ্দিক জামাল নানটু, ইস্পাহানি আরিফ জাহান, নূর হোসেন বলাই, মমতাজুর রহমান আকবর, সৈয়দ হারুন, আওকাত হোসেন, মনোয়ার খোকন, উত্তম আকাশ, ওয়াকিল আহমেদ, বেলাল আহমেদ, এফ আই মানিক, আজিজুর রহমান বুলি, শেখ নজরুল ইসলাম, আলমগীর কুমকুম ।। যাদের ছবি করতে পারেনি উনাদের যদি একটি করে ছবি সালমান জীবিত অবস্থায় উপহার দিয়ে যেতে পারতো তাহলে বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে আরও কিছু কালজয়ী ছবি দর্শকরা পেতো। এই আফসোস রয়ে যাবে সালমান ভক্তদের চিরকাল।

সুত্র-উইকিপিডিয়া

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: