মক্কায় হতাহতদের পরিবারের জন্য কোটি টাকা সহায়তা

প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫, ০৪:৫৮ এএম

সাগর চৌধুরী,
সৌদি আরব:

মক্কায় মসজিদুল হারামে ক্রেন দুর্ঘটনায় হতাহতদের পরিবারের জন্য কোটি টাকার অর্থ সহায়তা ঘোষণা করেছেন সৌদি বাদশাহ সালমান। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ১০ লাখ রিয়াল অর্থাৎ প্রায় ২ কোটি টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া যারা আঘাতের কারণে একেবারে স্থায়ী পঙ্গুত্বের শিকার হয়েছেন, তাদের ১০ লাখ রিয়াল ও আহত ব্যক্তিদের ৫ লাখ রিয়াল বা ১কোটি ৪ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। এছাড়া আহত যারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের দেখাশোনার জন্য পরিবারের সদস্যরা সৌদি যেতে পারবেন। সেজন্য ভিসাসহ সব কিছুর ব্যবস্থা করবে সৌদি সরকার। যেসব মুসল্লি নিহত হয়েছেন তাদের প্রত্যেকের দুইজন আত্মীয় সৌদি বাদশাহের অতিথি হিসেবে আগামী বছর হজ করতে পারবেন। আহত মুসল্লিরাও আগামী বছর সৌদি বাদশাহের অতিথি হিসেবে হজ করতে পারবেন।মঙ্গলবার এক ফরমানে সৌদি বাদশাহ সালমান এ ঘোষণা দিয়েছেন। তবে সৌদি আদালতে ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ের করলে যে অর্থ পাওয়ার কথা, এর মধ্যে তা অন্তর্ভুক্ত নয়। অর্থাৎ এটি কেবল সৌদি বাদশাহর পক্ষ থেকে দেওয়া ক্ষতিপূরণ।

নিহতদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি হজযাত্রীকে শনাক্ত করা হয়েছে। তার নাম মোহাম্মদ আবুল কাশেম (৪৫), বাড়ী চট্টগ্রামের কর্ণফুলিতে। পাসপোর্ট নম্বর বি ই ০১৯১৫৮৬, হাজী নম্বর ০২০৪২২৬ । দুর্ঘটনায় ২৫ জন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন । পূর্বে যদিও এর সংখ্যা ছিল ৪০ জন।

এছাড়াও ভয়াবহ ক্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৬০ লাখ টাকা করে পরিশোধ করবে বীমা কোম্পানি।এই টাকার পুরোটাই হারাম শরীফ সম্প্রসারণ প্রকল্পের ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ব্লাড মানি হিসাবে প্রদান করবে। বীমা বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সংবাদটি প্রকাশ করেছে স্থানীয় আরবি দৈনিক আল হায়াত।ইন্স্যুরেন্স বিশেষজ্ঞ আদহাম জাদ, আল হায়াতকে বলেন, সৌদি আরবে ভ্রমণকারীদের জন্য ন্যূনতম ১ লাখ রিয়াল পর্যন্ত বিমা ঝুঁকি গ্রহণ করা হয়। কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষে এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে। বিশেষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অন্যান্য বড় ধরনের আপদকালীন সময়ে তা বাড়ানো হয়।

বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ এক ফরমান জারি করে সৌদি বিন লাদেন কোম্পানির সব নির্মাণ তৎপরতার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সৌদি নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে সৌদি গেজেট এবং আরব নিউজ এ স্থগিতাদেশের কথা জানায়। প্রতিষ্ঠানটির কাজের সার্বিক মূল্যায়ন শেষেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে জানানো হয় ওই বিবৃতিতে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ক্রেনটি ভুল অবস্থানে রাখা হয়েছিল এবং প্রচন্ড বাতাসের কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে তিন সদস্য বিশিষ্ট জার্মানী বিশেষজ্ঞ দল সৌদি পৌঁছেন।

সৌদি আরবের পবিত্র নগরী মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদে (মসজিদ-উল-হারাম) হজযাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে মসজিদটির সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজে ক্রেনের ব্যবহার স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পবিত্র হজ শেষে ফের সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজে ক্রেন ব্যবহার করা হবে। হজব্রত পালনে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে যাওয়া হজযাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এ পর্যন্ত বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সৌদি আরব।
গত শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার দিকে প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টির পর আল হারামের (গ্র্যান্ড মসজিদ) বর্ধিতাংশের নির্মাণ কাজের সময় ছাদ থেকে ক্রেন ভেঙে পড়ে। এ ঘটনায় একশ এগার হজযাত্রী নিহত হন। এছাড়া আহত হন আরও অন্তত তিন শতাধিক। দুর্ঘটনার পর মসজিদুল হারামের ইমাম, মক্কার গর্ভনর, সৌদি বাদশাহ দুর্ঘটনাস্হল পরির্দশণ করেন এবং হাসপাতালে ছুটে গিয়ে হতাহতদের খোঁজ খবর নেন । আহতের রক্তদানের জন্য শতশত প্রবাসী হাসপাতালে ছুটে যান ।

এই বর্ধিতাংশের কাজ করছিল সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি বিন লাদেন গ্রুপ।

সৌদি বিন লাদেন গ্রুপটির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সাবেক আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের বাবা মোহাম্মদ। সৌদি আরবে এ কোম্পানির ব্যাপক এবং লক্ষণীয় প্রভাব রয়েছে। বিন লাদেন পরিবারের এ সংস্থা ১৪০ কোটি পাউন্ড স্টারলিং ব্যয়ে মসজিদুল হারামের সমপ্রসার কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছে। হারামাইন হাইস্পিড রেল লিংক বা মক্কা-মদিনা হাইস্পিড রেলওয়ে নামের প্রকল্পসহ সৌদি আরবে আরো বড় বড় প্রকল্প বাস্তাবায়নে জড়িত ছিল সৌদি বিন লাদেন গ্রুপ।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: