দেশের প্রায় সব পোশাক কারখানাতেই নিরাপত্তার সমস্যা

প্রকাশিত: ১৫ অক্টোবর ২০১৪, ০৪:৪৯ এএম

বাংলাদেশের এগারোশোর বেশি পোশাক কারখানা পরিদর্শন শেষে এর প্রায় সবগুলোতেই নানা ধরণের সমস্যা দেখতে পেয়েছে পশ্চিমা পোশাক ব্রান্ডগুলোর জোট ‘একর্ড অন ফায়ার এন্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ’।

একর্ডের প্রধান নিরাপত্তা পরিদর্শক ব্রাড লোয়েন জানিয়েছেন, প্রায় সব কারখানাতেই তারা নানা ধরণের নিরাপত্তা ঝুঁকি দেখতে পেয়েছেন। এর মধ্যে ছোট-খাট সমস্যা থেকে শুরু করে মারাত্মক ঝুঁকিও আছে।

তিনি বলেন, একর্ডের টিম এখন বাংলাদেশের কারখানা মালিক, পোশাক ব্রান্ডগুলো এবং শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে মিলে এসব সমস্যা দূর করার চেষ্টা করছে।

আমস্টারডাম থেকে একর্ডের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মোট এক হাজার একশো ছয়টি কারখানা তারা পরিদর্শন করে। এর মধ্যে চারশো কারখানার জন্য ইতোমধ্যে তারা একটি সংস্কার পরিকল্পনাও চূড়ান্ত করেছে।

এতে আরও বলা হয়, এসব কারখানা পরিদর্শনের সময় তারা প্রায় আশি হাজার সমস্যা বা ত্রুটি-বিচ্যূতি দেখতে পেয়েছে। এর মধ্যে কারখানা ভবনের ওপর ওজনের চাপ কমানোর মতো ব্যবস্থাগুলো ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

একর্ডের পরিদর্শকরা দেখতে পেয়েছেন, অনেক কারখানা ভবনে ‘অগ্নিনিরোধক দরোজা (ফায়ার ডোর) এবং স্বয়ংক্রিয় সতর্কীকরণ ব্যবস্থা (অটোমেটিক ফায়ার এলার্ম) নেই। আগুন লাগার পর যেরকম অগ্নি প্রতিরোধী নির্গমণ পথ থাকা দরকার সেই ব্যবস্থাও নেই। অনেক কারখানা ভবনের কাঠামো আরও শক্ত করার প্রয়োজন হবে।

অন্তত ১৭ টি ভবনের কাঠামো প্রত্যাশিত নিরাপত্তা মানের নীচে রয়েছে। এসব ভবনকে অনুপযোগী ঘোষণা করে সেগুলো খালি করার সুপারিশ করেছে একর্ডের পরিদর্শক টিম। এ সংক্রান্ত রিপোর্ট তারা সরকারের কাছেও জমা দিয়েছে।

তিন গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি
বাংলাদেশে একর্ডের নির্বাহী পরিচালক রব ওয়েজ বলেছেন পরিদর্শনের সময় কারখানাগুলোতে আগুন, বিদ্যুৎ ও ভবনের কাঠামো –এ তিনটি বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, “মোটামুটি সব কারখানাতেই সার্টিফায়েড অগ্নি নিরোধক দরজা ও অটোমেটেড ফায়ার এলার্ম বা স্বয়ংক্রিয় সতর্কীকরণ ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন। প্রতিটি কারখানায় আগুন প্রতিরোধে বা আগুন লাগলে তা যেন ছড়াতে না পারে তেমন ব্যবস্থা থাকতে হবে। থাকতে হবে লোড ম্যানেজমেন্ট প্লান। অনেক কারখানা এমন ভবনে রয়েছে যেগুলোর কাঠামো শক্তিশালী করা দরকার। এছাড়া প্রায় সব কারখানাতেই ইলেকট্রিক সার্কিট বক্সের উন্নয়ন ও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করা প্রয়োজন।”

মিস্টার ওয়েজ বলেন এখন তারা কারখানাগুলোতে প্রয়োজনীয় সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও মনিটরিং নিয়ে পোশাক কারখানার মালিক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে একযোগে কাজ করবেন। এর পাশাপাশি তারা ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সংস্কার বা স্থানান্তরের সময় যেন কারখানার কাজ বন্ধ না হয়ে যায় সেদিকেও সতর্ক রয়েছেন।

তবে সব কারখানাতেই নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে এমনটি মানতে রাজী নন পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ র সহ সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম।

তিনি বলেন একর্ডের পরামর্শ মতো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ মালিকরাও নিয়েছেন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কারাখানা গুলোতে সামান্য কিছু সংশোধন বা সংস্কারই যথেষ্ট বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, “একর্ড মাত্র ১৭টি কারখানা ঝুঁকিপূর্ণ পেয়েছে যা মোট কারখানার মাত্র ১ দশমিক ৫ শতাংশ। বাকী যা আছে তা সহজেই সমাধানযোগ্য। হয়তো কোথাও বিশটি অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র আছে, কিন্তু সেখানে হয়তো বাইশটি দরকার। এ ধরনের ছোটখাটো বিষয়।”

মিস্টার আজিম বলেন অনেক কারখানাকে পরিদর্শনের পর একর্ডই গ্রীন মার্ক দিয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এক জিনিস আর সংশোধন আরেক জিনিস বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব মিকাইল শিপার বলেছেন একর্ডের রিপোর্ট তারা পেয়েছেন এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন নিরাপত্তা ইস্যুতে সরকার কোন ছাড় দেবেনা আর এ কারণেই একর্ড, এলায়েন্স ও বুয়েটের পরামর্শ অনুযায়ী অন্তত ২৯টি কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, “সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ যেগুলো চিহ্নিত করেছিলো সেগুলো বন্ধ করে দিয়েছি। যেগুলো ছোটখাটো সেগুলো মালিকরা ঠিক করবেন। আমাদের পরিদর্শকরা দেখবে মালিকরা তা করছেন কিনা।”
ওদিকে একর্ড আরও জানিয়েছে কারখানা গুলোর বিষয়ে তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ হবে সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণ।

উল্লেখ্য ইউরোপীয় পোশাক ব্রান্ডগুলো বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর নিরাপত্তা মান উন্নয়নের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয় রানা প্লাজা ট্র্র্যাজেডির পর। রানা প্লাজা ধসে এগারোশোর বেশি শ্রমিক নিহত হয়েছিল। এই ঘটনার পর বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের নিরাপত্তা নিয়ে বিশ্ব জুড়ে উদ্বেগ তৈরি হয়।-বিবিসি

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: