মাতৃভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে

প্রকাশিত: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১২:৫০ এএম

ঢাকা: ফাগুনের আগুন ঝরা দিনে কয়েকটি লাল পলাশের আত্মাহুতির রক্তে রঞ্জিত ঢাকার রাজপথ বাঙ্গালির সত্তার গভীরে লুকিয়ে থাকা চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছিল। ১৯৫২ সালে মাতৃভাষা বাংলার জন্য একমাএ জাতি বাঙ্গালীরাই লড়াই করেছেন এবং জীবন বিলীয়ে দিয়েছেন।

সর্বপ্রথম বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে নিজেদের মাতৃভাষাকে রক্ষা করার ইতিহাস একমাএ পৃথিবীতে বাঙ্গালী জাতিরই আছে।সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের এই দিনটিকে জাতিসংঘ ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর লিংগুয়েষ্টিক,কালচারাল ভাইভারসিটি ও মাল্টিলিংগুয়ালিজম এর ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের ঘোষণা দিয়েছে।

আর সেই ঘোষণা অনুযায়ী ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে আমাদের শহীদ দিবসকে প্রতিবছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।২২ কোটি মানুষের মাতৃভাষা বাংলা হলেও বিশ্বে সর্বমোট ২৫ কোটি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে।অর্থাৎসংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম ভাষা হচ্ছে বাংলা।

সুতরাং বাঙ্গালি জাতির একমাত্র গর্বের ও অহংকারের বিষয় তার ভাষা,বাংলা ভাষা।গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে সরকার বাংলা ভাষাকে দেশের একমাএ রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দান করেছেন, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে মাতৃভাষা বাংলা আজ স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত।

সরকার দেশের অফিস আদালতে কাজকর্মের ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকে ব্যাবহার করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দান করেছেন।দীর্ঘদিন থেকে অফিস আদালতের কাজকর্মের ভাষা হিসেবে ইংরেজি ভাষার প্রচলন রয়েছে।ইংরেজী শাসনামলে ইংরেজি ভাষার একচ্ছএ আধিপত্য ছিল।বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দানের পরিপ্রেক্ষিতে ইংরেজির পরিবর্তে বাংলা ভাষা ব্যাবহারের নির্দেশে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।ইংরেজিতে শিক্ষা লাভের ফলে এবং অফিস আদালতে ইংরেজিতে কাজকর্ম পরিচালনায় অনভ্যস্ত হওয়ায় কোনো প্রকার অসুবিধে দেখা দেয়নি।কিন্তু বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর অফিস আদালতে বাংলা ভাষায় কাজকর্ম করতে গিয়ে অনভ্যস্ত হওয়ায় কিছুটা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছে।

বাংলাদেশে প্রায় সব মানুষের মাতৃভাষা বাংলা।বাংলা ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যমে হিসেবে স্বীকৃতিদান করা হলেও এখন পর্যন্ত উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেএে এবং কারিগরি ও চিকিৎসা ক্ষেএে বাংলা ভাষা প্রচলন সম্ভবপর হয়নি ও সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষা ব্যাবহারের প্রয়োজনীয়তা আমরা অনুভব করিনি।এ বিষয়ে আমাদের নেই কোনো প্রস্তুতি।

এছাড়াও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলা এখনও নিজের যথাযথ অবস্থান তৈরী করতে পারেনি।আইনি ভাষা এবং উচ্চতর ডিগ্রির পাঠ্যবই এখনও ইংরেজিতে রচিত হয়।আজও কোর্টে রায় লেখা হয় ইংরাজিতে।ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোতে এখনও বাংলা পাঠ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ইংরেজি শিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়ায় মাতৃভাষা হিসেবে বাংলা তেমন গুরুত্ব পায়না এবং হয় না ভাষার যথাযথ ব্যাবহার।

এভাবে বাংলা ভাষাকে বিভিন্ন দিক থেকে খাটো করা হয়েছে।মাতৃভাষা বাংলার পরিবর্তে ইংরেজি ভাষার ব্যাবহার ও মাতৃভাষার প্রতি উদাসীনতা এবং অবহেলা রয়েছে।আমাদের মাতৃভাষা কখনই দীন নয়।পৃথিবীর অন্যান্য শক্তিশালী ভাষার মতো বাংলা ভাষা বিশ্বসাহিত্যে স্হান লাভের গৌরব অর্জন করেছে। তাই বায়ান্নর রক্তঝরা সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই বাংলা ভাষা যেন তার যথাযথ ব্যবহার ও যথার্থ মর্যাদা লাভ করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে সবাইকে।

লেখক: শিক্ষার্থী মোঃ আবু ইউসুফ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: