শিক্ষায় এগিয়ে সীমা সম্পদে সাক্কু

প্রকাশিত: ০৫ মার্চ ২০১৭, ১২:৫৭ পিএম

সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নৌকা ও বিএনপির ধানের শীষের লড়াই হলেও আরও ৪ মেয়র প্রার্থী ও ১৯২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এর মধ্যে ৫ মেয়রের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ মামুনুর রশিদ এমবিএ পাশ করেছে। তারপর প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের (পিডিপি) সোয়েবুর রহমান এলএলবি পাশ করেছে। আঞ্জুম সুলতানা সীমা বিএ বিএম ও মনিরুল হক সাক্কু-শিরিন আক্তার এসএসসি পাস করেছে। এছাড়াও ৮ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে সম্পদে এগিয়ে আছেন বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী মো. মনিরুল হক সাক্কু।

দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা। মনিরুল হক সাক্কু ছাড়া অন্য প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। মনিরুলের বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে। মনিরুল হকের বিরুদ্ধে বর্তমানে ঢাকার রমনা থানায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে একটি এবং আয়কর অধ্যাদেশ আইনে কুমিল্লায় একটি মামলা রয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী অন্য তিন প্রার্থী হলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি-রব) শিরিন আক্তার, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের (পিডিপি)

সোয়েবুর রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মামুনুর রশীদ। আঞ্জুম সুলতানা পেশা শিক্ষকতা, মনিরুল হক সাক্কু পেশায় ব্যবসায়ী, শিরিন আক্তার রাজনীতি ওমৌসুমি ব্যবসায়ী, সোয়েবুর রহমান পেশায় আইনজীবী, মামুনুর রশীদ পেশা ওষুধের ব্যবসা করছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডলের কাছে প্রার্থীদের জমা দেওয়া হলফনামা ঘেঁটে এ তথ্য পাওয়া গেছে। নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীদের জমা দেয়া হলফনামা অনুযায়ী প্রধান দুই দলের প্রার্থীর মধ্যে সাক্কু সম্পদে এগিয়ে থাকলেও সীমার তুলনায় শিক্ষায় পিছিয়ে রয়েছেন। শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত সীমার শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ/বিএড।

নির্বাচন অফিস সূত্রে আরও জানা যায়- আঞ্জুম সুলতানার বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে আয় ৫৪ হাজার টাকা। তিনি শিক্ষকতা পেশা থেকে আয় করেন আড়াই লাখ টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা ৪৬ লাখ টাকা, সঞ্চয়পত্র বাবদ ২০ লাখ টাকা ও স্বর্ণ ৩০ তোলা। এ ছাড়া তাঁর স্বামী নিসার উদ্দিন আহমেদের রয়েছে ৩০ তোলা সোনা। আঞ্জুম সুলতানার স্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে অকৃষি জমি ১০ শতক ও টিনশেড দালান। তাঁর স্বামীর অকৃষি জমি আছে ২০ শতক, ২ হাজার বর্গফুটের দ্বিতলবিশিষ্ট আবাসিক দালান ও ১ হাজার ২০০ বর্গফুট তিনতলা আবাসিক দালান।

মনিরুল হক সাক্কু সম্পদ সবচেয়ে বেশি। তাঁর স্ত্রীর সম্পদ তাঁর চেয়েও বেশি। বাড়িভাড়া থেকে পান ৭২ হাজার টাকা, ব্যাংক সুদ ২ লাখ ১২ হাজার টাকা ও সম্মানী ভাতা ১১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নগদ রয়েছে ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। তাঁর স্ত্রীর নামে নগদ আছে ৫৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকা ও ব্যাংকে জমা ৮৭ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্র বাবদ মনিরুলের রয়েছে ২ লাখ টাকা। তাঁর স্ত্রীর এ খাতে আছে ২৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকা।

তাঁর গাড়ি আছে দুটি। দুজনের স্বর্ণ আছে ১০ তোলা করে। তাঁর স্ত্রী ব্যবসায় পুঁজি খাটিয়েছেন ২ কোটি ১২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে মনিরুলের অকৃষি জমি আছে দশমিক ০৯২৩ একর। অন্যদিকে তাঁর স্ত্রীর রয়েছে দশমিক ০৫ একর জমি। তাঁর স্ত্রীর আবাসিক ও বাণিজ্যিক সম্পদের মধ্যে কুমিল্লা নগরের রেসকোর্স এলাকায় সেল নিশা টাওয়ারে রয়েছে তিনটি বাণিজ্যিক দোকান, দ্বিতীয় তলায় ১২টি দোকান, তৃতীয় ও চতুর্থ তলার ৭ হাজার ২৫৬ বর্গফুটের দুটি স্পেস, ফাতেমা জাহানারা টাওয়ারে ষষ্ঠ ও সপ্তম তলায় দুটি ফ্ল্যাট এবং ৩ হাজার ২২৯ বর্গফুটের স্পেস।

জেএসডির শিরিন আক্তারের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ রয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা, স্বর্ণ ৩০ ভরি ও ঋণপত্র ৫০ হাজার টাকা। আর তাঁর স্থাবর সম্পদ আছে ১৪ শতক জমি। পিডিপি প্রার্থী সোয়েবুর রহমানের পেশা থেকে আয় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তাঁর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে নগদ ১ লাখ টাকা ও ব্যাংকে জমা ২ লাখ টাকা। স্বতন্ত্র প্রার্থী মামুনুর রশীদের বাড়ি ভাড়া থেকে আয় ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। এ ছাড়া তাঁর স্ত্রীর শিক্ষকতা পেশা থেকে আয় ৬০ হাজার টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে দেড় লাখ টাকা। মামুনুর রশীদের অস্থাবর সম্পদ রয়েছে নগদ ১ লাখ টাকা, স্ত্রীর নামে ২ লাখ টাকা ও স্ত্রীর স্বর্ণ ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকার। আর স্থাবর সম্পদের মধ্যে কৃষিজমি ১১ শতক, অকৃষি জমি ৬০ শতক ও স্ত্রীর একটি বাড়ি।

অপরদিকে, পেশায় ব্যবসায়ী সাক্কুর শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি। সাক্কুর সম্পদের চেয়ে তার স্ত্রী আফরোজা জেসমিন টিকলীর সম্পদের পরিমাণ বেশি। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপির মনিরুল হক সাক্কুর সম্পদ সকল মেয়র প্রার্থীর চেয়ে বেশি। এছাড়াও সাক্কুর বিরুদ্ধে বর্তমানে রাজধানীর রমনা থানায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে একটি এবং আয়কর অধ্যাদেশ আইনে কুমিল্লায় একটি মামলা রয়েছে। আঞ্জুম সুলতানা সীমা বলেন, আপনারা জানেন, আমি যখন কুমিল্লা পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলাম, তখন অনেক জুনিয়র হওয়া সত্ত্বেও পৌরবাসীর কল্যাণে নিবেদিত হয়ে কাজ করেছি। নিজে দুর্নীতি করিনি, অপরকেও দুর্নীতি করতে দেইনি।

আমার দরজা ছিল দলমত নির্বিশেষে সবার জন্য খোলা। আশা করি এবার আমি অনেক পরিণত হয়েছি। আল্লাহর রহমতে যদি নির্বাচিত হই কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনকে একটি আদর্শ সিটি কর্পোরেশন হিসেবে গড়ে তুলব। আপনার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর সাথে আপনি দীর্ঘদিন পৌরসভায় এবং সিটি কর্পোরেশনে এক সাথে কাজ করেছেন। তার কাজ কর্ম সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে বললে তিনি বলেন, এই ব্যাপারে এই মুহূর্তে আমি আপনাকে কোন কিছু বলতে চাই না।

সব কিছু নগরবাসী জানেন এবং বুঝেন। আশা করি সেটি বুঝেই তারা উন্নয়নের প্রতীক নৌকায় ভোট দিবেন। আঞ্জুম সুলতানা সীমা আরও বলেন, যেহেতু দলীয় নির্বাচন তাই জাতীয় ইস্যুর প্রভাবতো থাকবেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সারা বাংলাদেশে যে উন্নয়নের জোয়ার সৃষ্টি করেছেন আশা করি কুমিল্লায় এর প্রভাব ফেলবে।

মনিরুল হক সাক্কু বলেন, আমি কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে গত ৫ বছরে ৫০০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করেছি, এবারে নির্বাচনে ভোটাররাই আমার কাজের মূল্যায়ন করবেন। গতবার নির্বাচনে দল অংশ নেয়নি বলে আমি একা ছিলাম। এবার দলীয়ভাবে নির্বাচন করছি। সবাই আমার সঙ্গে রয়েছে। আমাদের মাঝে কোনো বিভেদ নেই। তিনি বলেন, আমি কোনো সাজানো সিটি করপোরেশনে মেয়র হয়ে আসিনি। সম্পূর্ণ নতুন একটি সিটি করপোরেশনে এসে অনেক কাজ করতে হয়েছে আমাকে।

উল্লেখ্য, আগামী ৫ ও ৬ মার্চ মনোনয়নপত্র যাছাই-বাছাই, প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৪ মার্চ। ১৫ মার্চ দেয়া হবে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ এবং নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩০ মার্চ।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: