ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রিলে বাঁধা থাকে ফুটফুটে শিশু

প্রকাশিত: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ০৯:৩২ পিএম

নিউজ ডেস্ক: সকাল থেকে সন্ধ্যা রাস্তার ধারে বাড়ির গ্রিলের সঙ্গে বাঁধা থাকে চার বছরের ফুটফুটে ছোট্ট মেয়ে স্বপ্না। আর তখনই তার সামনে তার সমবয়সী ব্যস্ত খেলা নতুবা দুরন্তপনায়। মুখ বুঝে সব সহ্য করে সে। তাকে দেখাশোনার কেউ নেই। আর মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে শুধু নীরবে চোখের জল ফেলেন মা।

শারীরিক বা মানসিক দিক দিয়ে অসুস্থ নয় স্বপ্না। দেখাশোনার কেউ নেই বলে, এভাবে সারাটা দিন মেয়েকে গ্রিলে বেঁধে রেখে কাজ করেন কান্দির পুতুল দলুই৷ আর উপায় বা কী! কাজ না করলে পেটের ভাত যে জুটবে না। এমনই অমানবিক অথচ নিষ্ঠুর বাস্তবতার দেখে মিলল কলকাতার মু্র্শিদাবাদের কান্দির বিশ্রামতলায়।

এই অমানবিক ঘটনা ঘটে চলেছে প্রতিদিন। কিন্তু চোখে পড়লেও বিষয়টি নিয়ে কেউ মাথাই ঘামাননি৷ মেয়ের এমন দুরাবস্থার কথা বলতে গিয়ে চোখে জল চলে আসে কান্দির পুতুল দলুই। তিনি বলেন, “বছর দেড়েক আগে এক ছেলে ও মেয়েকে রেখে স্বামী মারা যান। শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাড়িয়ে দেয় তাকে। নিরুপায় হয়ে ছেলে-মেয়ের পেটের ভাত জোগাতে ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করি। কিন্তু তাতে দু’বেলা ভরপেট খাওয়া জুটত না।”

মনের আক্ষেপের কথা অপকটে বলতে থাকেন পুতুল দলুই। শোনাতে থাকেন, তার এই দুর্দশা দেখে শেষে স্থানীয় এক হোটেল ব্যবসায়ী তাকে কাজ দেয়৷ আড়াই হাজার টাকা বেতন৷ এই কাজই এখন সম্বল পুতুলের৷ ছেলে-মেয়েক বড় করতে হবে এই স্বপ্ন বুকে আগলে রেখে হাড়-ভাঙা খাটুনি দিয়ে যাচ্ছে সে।

সাত বছরের ছেলেকে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু সেখানেও অভাব৷ আর চার বছরের ছোট মেয়ে মা ছাড়া থাকতে পারবে না৷ তাই মেয়েকে কাছে রাখতেই হয়েছে৷ কিন্তু কাজ করতে গেলে মেয়েকে রাখবে কে?

পরে নিজেই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, ‘‘মেয়েকে এভাবে রাখতে আমার কী ভাল লাগে? কিন্তু কী করব? সবসময় চোখে চোখে রাখা সম্ভব নয়৷ রাস্তা দিয়ে গাড়ি যাচ্ছে কোথায় কী বিপদ হবে৷ তাই বাধ্য হয়ে মেয়েকে বেঁধে রাখতে হয়৷’’

বিষয়টি স্থানীয় কান্দির মহকুমা প্রশাসক বিজিন কৃষ্ণা জানানো হলে প্রথমে অবাক হন তিনি। সব শুনে শিশুটিকে সুস্থ জীবন দেওয়ার আশ্বাস দেন বিজিন কৃষ্ণা৷ তিনি জানান, শিগগিরই মেয়েটিকে উদ্ধার করা হবে৷ তার মায়ের সঙ্গে কথা বলবে প্রশাসন৷ সূত্র: কলকাতা টোয়েন্টিফোর।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: