খোলা আকাশের নিচে হাজার হাজার টন সারের স্তুপ

প্রকাশিত: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ০৪:৫৮ এএম

গুদামে জায়গা না হওয়ায় বাঘাবাড়ী বাফার স্টকের গুদামের সামনে এবং নগরবাড়ী ঘাটে হাজার হাজার টন ইউরিয়া সার খোলা আকাশের নিচে মজুদ করা হয়েছে। এতে পাবনা ও সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার জন্য বরাদ্দকৃত এসব সার রোদ-বৃষ্টি-কুয়াশায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। অপ্রতুল গুদামের কারণে প্রত্যেক বোরো মৌসুমে এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানা গেছে।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলে বিসিআইসি’র বাফার স্টকের গুদাম রয়েছে মোট ১৪ টি। এর মধ্যে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে অবস্থিত বাফার স্টকের গুদাম থেকে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলায় সার সরবরাহ করা হয়ে থাকে। বিসিআইসি’র এই গুদামটির ধারনক্ষমতা মাত্র ৬ হাজার মেট্রিক টন। অথচ বর্তমানে গুদামের ভেতর-বাইরে মিলিয়ে ১৮ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি সার মজুদ রয়েছে।

বাঘাবাড়ী বিসিআইসি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বোরো মৌসুমের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বিসিআইস পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলায় প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিকটন ইউরিয়া সার সরবরাহ করে থাকে। এসব সার বাঘাবাড়ী বাফার স্টকের গুদামে আনার পর তা দুই জেলার বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। স্বল্প সময়ের মধ্যে এত বিপুল পরিমান সার আসে বলে ৬ হাজার মেট্রিকটন ধারনক্ষমতার গুদামে প্রতিবছরই উদ্বৃত্ত সার গুদামের বাইরেও স্তুপ করে রাখা হয়। তবে অন্যান্য বছর স্তুপ থেকে সারগুলো দ্রুত সরবরাহ হলেও এ বছর তা হয়নি। এবার গুদামের সামনে স্তুপ বড় হয়েই চলেছে।

গুদাম কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা যায়, ৬ হাজার মে.টন ধারনক্ষমতার গুদামে ঠাসাঠাসি করে রাখা হয়েছে ৯ হাজার মে.টন সার। আর বাইরে স্তুপ করে রাখা হয়েছে ৯ হাজার ৩০০ মে.টন সার। এর পরেও গুদামটিতে বিসিআইসি’র কারখানাগুলো থেকে সার আসা অব্যাহত থাকায় মজুদের পরিমাণ ভারী হয়েই চলেছে। বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের শ্রমিক বলেন, এবার সার জমতে জমতে পাহাড় হয়ে গেছে। এর আগে গুদামের বাইরে এতো সার কখনো দেখি নাই।

সার পরিবহনের সাথে যুক্ত ট্রাক ড্রাইভার জানে আলম বলেন, অন্য বছর সারের ডিলারেরা এ সময়ে সার নেয়ার জন্য পাগল হয়ে ওঠে। কিন্তু এবার সে অবস্থা এখনও শুরু হয়নি। বিসিআইসি’র বাফার স্টক গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, ডিলাররা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম সার উত্তোলন করায় গুদামে সারের মজুদ ব্যাপক বেড়ে গেছে। এর ফলে গুদামের ধারনক্ষমতার অতিরিক্ত সার এভাবে বাইরে রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় ১৫ দিন বা ১ মাসও রাখা হতে পারে। তিনি জানান, ইউরিয়া সার দীর্ঘদিন বাইর রাখা হলেও তার গুনগত মানের কোন ক্ষতি হয়না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিলাররা ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে যে সার ্উত্তোলন করেছিলেন তার অনেকটাই এখনও অবিক্রীত রয়ে গেছে। আর এ কারনেই তারা বাফার স্টকের গুদাম থেকে আপাতত সার উত্তোলনে খুব একটা আগ্রহ দেখচ্ছেন না।

এদিকে বেড়া উপজেলার নগরবাড়ী ঘাটেও প্রচুর সার খোলা আকাশের নিচে ফেলে রাখতে দেখা গেছে। ব্যক্তি মালিকানাধিন সারের গুদামগুলো ভর্তি হয়ে যাওয়ায় জাহাজ থেকে এসব সার নামিয়ে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। নগরবাড়ী ঘাটের শ্রমিক সরদার রফিকুল ইসলাম বলেন, গুদাম ভর্তি হয়ে যাওয়ায় নদীপাড়েই সার রাখা হচ্ছে। সপ্তাহ দু একের মধ্যেই সারগুলো বিভিন্ন স্থানে চলে যাবে। নগরবাড়ী ঘাট বনিক সমিতির সাধারন সম্পাদক ও সার ব্যাবসায়ী এ এম রফিকউল্লাহ বলেন, নগরবাড়ী ঘাটে জরুরী ভিত্তিতে বিসিআইসি’র বাফার স্টকের গুদাম স্থাপনের প্রয়োজন রয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেও সাড়া পাচ্ছি না।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: