শম্ভু বাবুর ছেলেকে বাঁচাতে আমার মেয়েকে বলি দেয়া হচ্ছে: মিন্নির বাবা

প্রকাশিত: ২১ জুলাই ২০১৯, ১২:৫৫ এএম
‘পুলিশের প্রবল চাপের মুখে মিন্নি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য হয়েছে। সত্য একদিন প্রকাশ হবেই। নির্যাতন ও জোরজবরদস্তি করে তার মেয়ের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়া হয়েছে।’ এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন বরগুনার চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী ও নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। আপ্লুত কণ্ঠে মোজ্জাম্মেল হোসেন বলেন, ‘মেয়ে আমার জীবন বাজি রেখে তার স্বামীকে রক্ষা করতে গেছে। এটাই কি তার অপরাধ?’ এর পর তিনি অভিযোগের তীর ছোড়েন বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর দিকে। তিনি বলেন, ‘এসব কিছুই শম্ভু বাবুর খেলা। তার ছেলে সুনাম দেবনাথকে বাঁচানোর জন আমার মেয়েকে বলি দেয়া হচ্ছে।’ শনিবার (২০ জুলাই) সকালে বরগুনা শহরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কমপ্লেক্সে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। মোজাম্মেল হক কিশোর বলেন, মিন্নির সঙ্গে জেলখানায় দেখা করেছি। আমার মেয়ে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। আমার মেয়ে খুব অসুস্থ। তিনি বলেন, ‘পুলিশের প্রবল চাপের মুখে মিন্নি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য হয়েছে। সত্য একদিন প্রকাশ হবেই। নির্যাতন ও জোরজবরদস্তি করে তার মেয়ের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়া হয়েছে।’ কিশোর বলেন, ‘আমার মেয়ে কোনোভাবেই খুনের সঙ্গে জড়িত নয়। খুনিদের পক্ষে আছে রাজনৈতিক প্রভাব ও টাকা। এর কাছে সত্যের পরাজয় আর মিথার জয় হবেই।’ মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হক কিশোর আরও বলেছেন, দেশবাসী শুনে রাখেন, আমার মেয়ের কিছু হলে আমি আত্মহত্যা করব। তিনি বলেন, আমার মেয়ে মিন্নি নির্দোষ, রিফাত হত্যার পেছনে শুরু হয়েছে নোংরা রাজনীতি। প্রশাসনের লোকেরা শোনেন, আপনারা সঠিক তদন্ত করেন তাহলে রিফাত হত্যার মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে। এর আগে শুক্রবার (১৯ জুলাই) বরগুনার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবানবন্দি দেন রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ১ নম্বর সাক্ষী এবং তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। এদিন সন্ধ্যায় পৌনে ৬টার দিকে আদালত প্রাঙ্গনে সাংবাদিকদের মিন্নির বাবা বলেন, নির্যাতন ও জোরজবরদস্তি করে তার মেয়ের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। রিফাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার মেয়ে কোনোভাবেই জড়িত নয় বলে জানান তিনি। তার অভিযোগ, ভয়ভীতি দেখিয়ে তার মেয়ের কাছ থেকে সাজানো জবানবন্দি আদায় করা হয়েছে। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে আইনজীবীরা আসবে শুনে পুলিশ নির্যাতন করে তড়িঘড়ি আমার মেয়েকে দিয়ে মিথ্যা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করিয়েছে। হত্যাকাণ্ডের মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে আমার মেয়েকে গ্রেফতার করে মামলায় জড়ানো হয়েছে। এখন আবার তাকে দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও রেকর্ড করানো হলো। এর মাধ্যমে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করার চেষ্টা হয়েছে। মিন্নির বাবা আরও বলেন, আমি আইনি লড়াই করে সত্যটা বের করব ইনশাল্লাহ। আমার মেয়ে জীবন বাজি রেখে তার স্বামীকে রক্ষা করতে গেছে। এটাই তার অপরাধ? এসব কিছুই শম্ভু বাবুর (স্থানীয় সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু) খেলা। তার ছেলে সুনাম দেবনাথকে সেভ করার জন্য আমাদের বলি দেয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) বরগুনা পুলিশ লাইনন্সে এনে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর রিফাত হত্যায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় মিন্নিকে গ্রেফতায় দেখায় বরগুনা জেলা পুলিশ। এ মামলায় মিন্নিসহ এ পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত ২ জুলাই ভোরে মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। এখন পর্যন্ত এজাহারভুক্ত তিনজনসহ সাত আসামি হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। এ ঘটনায় বর্তমানে ছয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: