ঢাবি থেকে অধিভুক্ত সাত কলেজ বাতিলের দাবি উঠছে কেন?

প্রকাশিত: ২৩ জুলাই ২০১৯, ০১:২৮ এএম
এ সমস্যা আজকের নয়। সেই ২০১৭ সালে রাজধানীর বিভিন্নস্থানে অবস্থিত সরকারি সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তির পর থেকেই নানা সমস্যা দেখা গিয়েছে বার বার। কিছুদিন পর পর আন্দোলন, মানবন্ধনের মতো কর্মসূচি পালন করতেও দেখা গেছে অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের। সর্বশেষ দিন দশেক আগেও কয়েক দফা নিয়ে আন্দোলন করেছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে সম্প্রতি নতুন করে অধিভুক্ত সাত কলেজ বাতিলের দাবি তুলেছে ঢাবির শিক্ষার্থীরা। সাত কলেজ অধিভুক্তির পর থেকেই ঢাবির শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় এ কলেজগুলো বাদ দেওয়ার দাবি করে আসছিল। এবার তারা চূড়ান্ত আন্দোলনে নামল। গত পাঁচদিন ধরে টানা বিক্ষোভ করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ দুইদিন ধরে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে টানা বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে তারা। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক এবং একাডেমিক ভবনে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। অপরদিকে বেশ কয়েকবার ইডেন ও তিতুমীর কলেজের বেশ কিছু ডিপার্টমেন্টেও শিক্ষার্থীদের তালা লাগানোর সংবাদ পাওয়া গেছে। ঢাবির অধিভুক্ত কলেজগুলো হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এ বিষয়ে অভিযোগ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাবরিনা সুলতানা বলেন, অনেক সময় আমাদের শিডিউল ক্লাস হয় না। শিক্ষকরা সাত কলেজে ভাইভা নিতে যান, তাদের পরীক্ষার খাতা দেখেন। আমাদের বিভাগের একজন শিক্ষক সাত কলেজের পরীক্ষা কমিটির সদস্য ছিলেন। তাই আমাদের যে কয়টি ক্লাস নেয়ার কথা ছিল সেগুলো নিতে পারেননি। এখন আমরা সিলেবাস শেষ না করে তো পরীক্ষা দিতে পারছি না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, আমাদের ক্লাস বাতিল হয়, আমাদের পরীক্ষা হয় না। এমনও হয়েছে যে তাদের (সাত কলেজ) ভাইভার জন্য আমাদের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা পিছিয়ে গেছে। আরেকটা বিষয় হলো যে , একটা আইডেন্টিটি ক্রাইসিস তৈরি হয়েছে। আমরা এত কষ্ট করে পরীক্ষা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার সুযোগ পেয়েছি কিন্তু এখন মানুষ জানতে চাই কোন কলেজে পড়? অপরদিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, একদিনে তারা যেমন সেশন জটে পড়ছেন অন্যদিকে তাদের পরীক্ষার খাতা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের সাথে একটা তামাশা শুরু করছে। আমাদের কলেজে কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টে সবাই ফেল করেছে , একজন পাশ করেছে। একটা ক্লাসে সবাই বাজে ছাত্র কীভাবে হয়? তারা (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক) আমাদের ঠিক মত মূল্যায়ন করে করে না। আমাদের খাতা ফেল করে দেয়। আমার সাথে যে বন্ধুরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনের কলেজে ছিল, তারা এখন বের হয়ে যাচ্ছে অথচ আমাদের কোন অগ্রগতি নেই। তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী নাজমুল হুদা বলেন, বার বার আমাদের আন্দোলনে নামতে হচ্ছে। আমাদের ফলাফলের জন্য আন্দোলন করতে হয়। ফলাফল পুনঃবিবেচনা জন্য আন্দোলন করতে হয়। আবার পরীক্ষার জন্যও আন্দোলন করতে হয়। আমরা পড়াশোনার সময়টা পাই কখন? ঢাবি শিক্ষার্থীরা বলছেন, একই প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং শিক্ষকদের এত বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের ক্লাস, পরীক্ষা সম্পন্ন করা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের জন্য অসম্ভব হয়ে পরছে। আর তার দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের একাংশ বলছে তারা এখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত হতে পারবে না। কারণ তারা অনেক পিছিয়ে গেছে। তারা এখন দাবি জানাচ্ছে সাতটি কলেজ নিয়ে আলাদা প্রশাসনিক ব্যবস্থা তৈরি করতে। এর আগে যখন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে তখন পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। সে সময় চোখ হারায় তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী ছিদ্দিকুর রহমান। কিছুদিন আগে বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজে শিক্ষার্থী মনিজা আক্তার মিতু ফল খারাপ হওয়ায় আত্মহত্যা করেন। অপরদিকে এবারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এমন পরিস্থিতিতে কি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন। তাই এ বিষয়ে কথা হয় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ সামাদের সাথে। তিনি বলেন, সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের এখতিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নেই। এটা সরকারের সিদ্ধান্ত, আমরা শুরু সেটা বাস্তবায়ন করেছি। আমরা যেটা করতে পারি, শিক্ষার্থীদের যেসব প্রস্তাব বা দাবী আছে সেগুলো আমরা বিবেচনা করে দেখতে পারি। যাতে করে উভয় পক্ষের শিক্ষার্থীরা উপকৃত হতে পারে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: