ধান সংগ্রহের বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল, হতাশ কৃষক

প্রকাশিত: ২৯ জুলাই ২০১৯, ১২:০০ এএম
ইসমাইল হোসেন রবিন: লক্ষ্মীপুর সদর খাদ্য গুদামে ধান সংগ্রহের বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল হওয়ায় কৃষকদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। বরাদ্দ শেষ হওয়ার পরেও খাদ্য গুদামে এখনো উৎপাদিত ধান এনে ফেরত নিতে হচ্ছে কৃষকদের। বর্তমানে কৃষকদের দাবি বরাদ্দ বৃদ্ধি করে তাদের উৎপাদিত ধান সংগ্রহ করার। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় ২১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে ঘটিত, এই উপজেলায় প্রায় ৯লাখ জনসংখ্যা রয়েছে। এখানকার অধিকাংশই মানুষ কৃষিজীবী। এ বছর সদর উপজেলায় কৃষকরা ১২ হাজার ৮০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ করেছে। বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধার্য্য করা হয় ৪৮হাজার মে.টন। বোরো মৌসুমে শুরুতে বাজারে ধানের দাম কম থাকায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধান নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিল। পরে সরকারি খাদ্য গুদামে ধান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত হলে কৃষকদের হতাশা কেটে যায়। গত ১৯ মে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শফিকুর রিদোয়ান আরমান শাকিল ধান সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন করেন। এর আগে উপজেলা সংগ্রহ কমিটির সভায় ধান সংগ্রহ অভিযান সফল করার লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচারণা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে মোতাবেক সংবাদপত্র, টেলিভিশন, অনলাইন ও সোস্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারনা চালানো হয়। সরকার প্রতি কেজি ধানের মূল্য ২৬ টাকা নির্ধারন করেন। এতে সরকারি খাদ্য গুদামে ধান সংগ্রহের বিষয়টি তৃণমূল পর্যায়ের প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে জানাজানি হওয়ায় কৃষকরা খাদ্য গুদামে ধান নিয়ে এসে বিক্রি করতে শুরু করে। এ বছর লক্ষ্মীপুর সদরে দুই ধাপে ৯৫৭টন ধান সংগ্রহের বরাদ্দ দেয়া হয়, যা মোট উৎপাদিত ধানের ৫ ভাগেরও কম। কৃষি অফিস থেকে কয়েকটি ধাপে ১৫শ’ জন কৃষকের তালিকা খাদ্য গুদামে সরবরাহ করা হয়। ধান সংগ্রহ উদ্বোধনের দিন থেকে গত ২৪ জুলাই ২০১৯ ইং পর্যন্ত ৭৫০ জন কৃষকের নিকট থেকে ৯৫৭ মে.টন ধান সংগ্রহ করা হয়। এরই মধ্যে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ হয়ে গেলেও কৃষকরা খাদ্য গুদামে ধান নিয়ে আসতে থাকে এবং খাদ্য গুদামের সীমানা প্রাচীরের ভিতরে ধান রেখে যায়। ধান সংগ্রহের লক্ষ্য মাত্রা শেষ হওয়ার পরেও কৃষকরা এখনো গুদামের ভিতরে প্রায় ১শ’ টন ধান জমা দেবার অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছে। বরাদ্দ বাড়লে খাদ্য গুদামে জমা দেবার আশায় কৃষকরা এখনো ধান ফেরৎ নিচ্ছেনা। এর আগে ২০১৬ সালে লক্ষ্মীপুর খাদ্য গুদামে বোরো মৌসূমে ১৮‘শ ৭৫ মে.টন ধান ক্রয়ের জন্য বরাদ্ধ দেয়া হলেও একশ্রেণীর সিন্ডিকেটের কারণে কৃষকরা সরকারি সুবিধা গ্রহণ করতে পারেনি। এসব নিয়ে নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে তৎকালীন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নুরুজ্জামান খাদ্য গুদাম এলাকায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে কয়েকজন দালালকে জেল জরিমানা করেন। যার প্রেক্ষিতে খাদ্য বিভাগ ধান ক্রয় বন্ধ করে দেয়। এরপর ২০১৭ ও ২০১৮ সালে লক্ষ্মীপুর সদরে ধান ক্রয়ের জন্য কোন বরাদ্দ দেয়া হয়নি। জানা যায়, ২০১৬ সালে বোরো ধান সংগ্রহ নিয়ে ঝামেলা হওয়ায় এ বছর লক্ষ্মীপুর সদর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রামিম পাঠান দালাল- ফড়িয়া এবং সিন্ডিকেটের কোন সদস্যকে খাদ্য গুদামে প্রবেশ করতে দেননি। যার কারণে দালাল- ফড়িয়া এবং সিন্ডিকেটের ছত্রছায়ায় একটি মহল ক্ষিপ্ত হয়ে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাকে নানাভাবে নাজেহাল করার অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, গুদামে ধান বিক্রি করে তারা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়েছেন। খাদ্য গুদামে তাদের থেকে কোন টাকা পয়সা নেয়া হয়নি। স্বচ্ছতার মাধ্যমে গুদামে ধান বিক্রি করতে পেরে অনেক কৃষক খুশী হলেও যেসব কৃষক এখনো ধান বিক্রি করতে পারেননি, তাদের মধ্যে হতাশার ছাপ লক্ষ করা গেছে। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার কৃষকদের উৎপাদিত ধান ন্যায্যমূল্যে বিক্রির জন্য লক্ষ্মীপুর খাদ্য গুদামে আরও ২ হাজার টন ধান ক্রয়ের বরাদ্দ দেবার জন্য কৃষকরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। লক্ষ্মীপুর সদর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রামিম পাঠানের নিকট কৃষকদের ধান ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, লক্ষ্মীপুর সদর খাদ্য গুদামে সরকারের নির্ধারিত বরাদ্ধ ৯শ’৫৭ মে.টন কিন্তু এখানে কৃষকের চাহিদা আরও অনেক বেশি। তাই বরাদ্ধের বাহিরে ধান ক্রয় করা সম্ভব নয়। এদিকে কৃষকরা যে পরিমান ধান গুদাম চত্ত্বরে এনে রেখেছে তাতে কৃষকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, তাই আমি ৩শ’ মে.টন বরাদ্ধের জন্য আবেদন করেছি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: