চোরাই মোটরসাইকেল কেনাবেচার নয়াহাট বিয়ানীবাজার

প্রকাশিত: ৩০ আগষ্ট ২০১৯, ০২:১২ পিএম
ভারতীয় চোরাই মোটরসাইকেলে সয়লাব বিয়ানীবাজার। কাগজপত্রবিহীন এসব মোটরসাইকেল নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এখানকার তরুণরা। তাদের কাছে ফ্যাশনেবল মোটরসাইকেল ছাড়া যেন জীবনের মূল্য নেই। তবে, সপ্তাহখানেক থেকে পৌরশহরে এসব মোটরসাইকেলের দাপট কিছুটা কমেছে। পুলিশের ব্যাপক অভিযানে এমনটি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার এবং ব্যবহারকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে। সম্প্রতি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে চোরাই মোটরসাইকেলসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী উপজেলা বিয়ানীবাজার। এখানে রয়েছে ভারতে প্রবেশের একাধিক সড়ক পথ। সীমান্তে নিয়োজিত নিরাপত্তা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব মোটরসাইকেল ক্রমেই ছড়িয়ে জেলায়। সূত্র জানায়, বেশির ভাগ মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ আলাদা ভাবে কার্টনে প্যাকেট করে বিয়ানীবাজারে প্রবেশ করে। পরে এসব যন্ত্রাংশ ফিটিং করে অবিকল শো-রুমের মতো ডিসকভার, পালসার, সিবিজেড, ইয়ামাহা, টিভিএস, জিক্সার, এফজেড, হিরো হোন্ডা, বাজাজসহ বিভিন্ন নামকরা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে বিক্রি করা হয়। বিয়ানীবাজার উপজেলার ভেতরে এমন মোটরসাইকেলের ব্যবহার মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় কোনটি বৈধ কিংবা কোনটি চোরাই তা বোঝা মুশকিল। বিয়ানীবাজারকে অবৈধ মোটরসাইকেল বেচাকেনার নিরাপদ হাট হিসেবে বেছে নিয়েছে চোরাই সিন্ডিকেটের কয়েকটি গ্রুপ। বাজারমূল্যের চেয়ে অর্ধেকেরও কমমূল্যে হাত বাড়ালেই ভারতীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল এখানে পাওয়া যাচ্ছে। বিআরটিএ’র রেজিস্ট্রেশন ছাড়া ১০০ থেকে ১৫০/১৭৫ সিসির মোটরসাইকেলের বাজার দর ১ লাখ ৩৫ হাজার থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অথচ বিয়ানীবাজারে এ ধরনের অবৈধ মোটরসাইকেল ৫০ থেকে ৭০/৯০ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। আমদানি-রপ্তানি এবং কাস্টমস-সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো কাগজপত্র না থাকায় এসব মোটরসাইকেলের বৈধ রেজিস্ট্রেশন নেই। কারো ক্ষেত্রে কেবল বেনামি প্রতিষ্ঠানের নামে ক্রয়-বিক্রয় রসিদ পাওয়া যায়। বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগে ডিজিটাল সিস্টেম চালু থাকায় অবৈধ মোটরসাইকেলগুলো রেজিস্ট্রেশনের কোনো সুযোগ থাকে না। আবার কেউ টাকা খরচ করতে চাইলে মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রও তৈরি করা সম্ভব। এ ছাড়া অবৈধ ভাবে আসা নতুন মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন ও চেচিস নাম্বার ঠিক রেখে হালনাগাদ সিরিয়ালের বিআরটিএ’র ভ্যাট ও রেজিস্ট্রেশনের কাগজও পাওয়া অসম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। বিআরটিএ’র রেকর্ডে ভ্যাট ও রেজিস্ট্রেশনের এসব কাগজপত্রের কোনো অস্থিত্ব থাকে না। বিআরটিএ রেজিস্ট্রেশন বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, ‘দেশের সকল যানবাহনের রেকর্ডপত্র এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হয়। যেকোনো যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন অথবা চেসিস ও ইঞ্জিন নাম্বার দিয়ে রেকর্ড যাচাইয়ের সুযোগ রয়েছে। বিয়ানীবাজার থানার এসআই মহসিন কবির জানান, গত সপ্তাহে একটি ডিসকভার মোটরসাইকেলসহ দু’জনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা গাড়িটির মালিক পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ জানায়, গত ক’দিনে উপজেলার গোড়েরটেকা গ্রামের মাসুক উদ্দিনের ছেলে মো. হুমায়ুন হাসান ইমন (২৪) নয়াপাড়া গ্রামের আকবর আলীর ছেলে জহুর উদ্দিন জহুর (২৭), পাতনের নিয়াজ উদ্দিনের ছেলে মো. সেলিম আহমদ (২৮), নবাংয়ের জমির উদ্দিনের ছেলে নাহিদুর রহমান (২৪), কসবার আব্দুল গাফফারের ছেলে শাফি আহমদ (২০), রজবের লুৎফুর রহমানের ছেলে মাহফুজুর রহমান (২৪), খাসার আমজাদ হোসেনের ছেলে এমরান আলমগীর (২০) ও শ্রীধরার আব্দুল মান্নানের ছেলে শামসুজ্জামান সবুর (২৪)কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত অন্যান্য মোটরসাইকেল চোর ও ক্রয়-বিক্রয়ে জড়িতদের নাম পাওয়া গেছে। বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অবণী শংকর কর জানান, কোথাও চোরাই গাড়ি ব্যবহারের সংবাদ পেলেই আমরা অভিযান পরিচালনা করবো। এক্ষেত্রে কাউকে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। সূত্র: মানবজমিন।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: