জাবিতে ‘প্রজাপতি মেলা’য় নেই প্রজাপতি, হতাশ দর্শনার্থীরা

প্রকাশিত: ২১ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৩:১৯ এএম
‘উড়লে আকাশে প্রজাপ্রতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি’ এই প্রতিপাদ্য স্লোগানকে সামনে রেখে প্রজাপতি সংরক্ষণ ও গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রজাপ্রতি মেলা-২০১৯। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের কীটতত্ত্ব শাখার আয়োজনে দিনব্যাপী এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রজাপতির অসাধারণ সৌন্দর্য খুব কাছ থেকে উপভোগ করতে দেশের দুর-দুরান্ত থেকে প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছুটে আসে হাজারো দর্শনার্থী। প্রজাপতির সুরে কথা বলতে ও তার রুপে মুগ্ধ হতে প্রতিবছরের ন্যায় এবছরেও ক্যাম্পাসে ঢল নেমেছে প্রজাপতিপ্রেমীদের। কিন্তুু প্রজাপতি দেখতে এসে রীতিমতো হতাশ দর্শনার্থীরা। যেই প্রজাপতিদের নিয়ে মেলা তার ছিটেফোঁটাও নেই মেলায়। এ নিয়ে দর্শনার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশে সাড়ে তিন শত থেকে চার শত প্রজাতির প্রজাপতি লক্ষ করা যায়। এরমধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে লক্ষ করা যায় প্রায় এক শত দশ প্রজাতির প্রজাপতি। কিন্তুু প্রজাপতি বিচরণ ও বাসযোগ্য পরিবেশ ব্যাহত হওয়ায় বর্তমানে এই সংখ্যা ৭০ থেকে ১০ প্রজাতির কোঠায় নেমেছে। শুক্রবার দুপুর ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়নের সামনে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এরপর শুরু হয় র‌্যালী তারপর দিনব্যাপী মেলায় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, কুইজ, বক্তৃতা, প্রজাপতি বিষয়ক বির্তক প্রতিযোগিতা, প্রজাপতির ডকুমেন্টারি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। কিন্তুু প্রজাপতির অবস্থান কোথাও তেমন চোখে পড়ে নি। প্রতিবছর মেলা প্রাঙ্গনের সামনে অস্থায়ীভাবে বিভিন্ন প্রজাতির প্রজাপতি দর্শনের আয়োজন করা হয়। এছাড়াও বোর্টানিক্যাল গার্ডেনের ভেতরে জীবন্ত প্রজাপতি দেখে মন পুলকিত হতো হাজারো দর্শনার্থীর। কিন্তুু এবছর দর্শনার্থীদের বিমুখ হয়ে ফিরে যেতে দেখা গেছে। প্রজাপতির কোনো অস্তিত্ব নেই। যেই প্রজাপতিদের উপলক্ষ করে মেলা আয়োজন করা হয় তাদেরই অনুপস্থিতি চোখে পদেয়ে দর্শনার্থীসহ ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের। মিরপুর থেকে পরিবার সহ মেলা দেখতে এসেছেন মো: লতিফুর রহমান। তার কাছে মেলা দেখার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে এসেছিলাম একসাথে অনেক প্রজাপতি দেখতে কিন্তুু এখানে এসে দেখি কোথাও প্রজাপতি নেই। ধামরাই সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, পুরো মেলা প্রাঙ্গন ঘুরে কোথাও প্রজাপতি পাই নি। তাই হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যাকালীন কোর্সের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, প্রজাপতির কোনো অস্তিত্ব পাই নি। প্রজাপতি নেই অথচ এই মেলার আয়োজন! সাভার মর্নিং গেøারি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী আনিতা বলেন, প্রজাপতি দেখতে এসেছিলাম। কোথাও প্রজাপতি নেই। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে ঘুরে একাধিক দর্শনার্থীর এমনি মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে মেলার আহ্বায়ক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেন বলেন, পরিবেশ, জলবায়ু ও অবকাঠামোগত কারণে কমছে প্রজাপতির সংখ্যা। এরসাথে আমাদেরও দায়িত্বহীনতাও দায়ী। ক্যাম্পাসে প্রজাপতির বাসযোগ্য পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। প্রজাপতি বিচণের সুষ্ঠ পরিবেশ পাচ্ছে না। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসের ঝোপঝাড়গুলো উজাড় করা থেকে বিরত থেকে কীটপতঙ্গের বাসযোগ্য পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের প্রতীক প্রজাপতি রক্ষায় এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। মেলা অনুষ্ঠানে প্রজাতি গবেষণায় সার্বিক অবদানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এম. এ. বাশারকে বাটার ফ্লাই এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এছাড়া বাটার ফ্লাই ইয়াং ইনথুসিয়াস্ট এ্যাওয়ার্ড লাভ করেন সবুজবাগ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী অরুরাভ ব্রনো।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: