ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র প্রার্থীদের কার কত সম্পদ

প্রকাশিত: ০২ জানুয়ারি ২০২০, ০৫:০২ পিএম
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. আতিকুল ইসলাম আতিকের তিন ব্যাংকে প্রায় ৬শ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। আতিকের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১৯ কোটি টাকা। বার্ষিক আয় প্রায় দেড় কোটি টাকা। বিপুল সম্পদের মালিক হলেও তার নিজের নামে কোন গাড়ি নেই। অন্যদিকে আতিকের চেয়ে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের সম্পদ বেশি। তাবিথের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৪৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার বেশি। তার বার্ষিক আয় ৪ কোটি টাকা। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে তার ১৭টি প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নেয়া হয়েছে ৩০২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। নির্বাচনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা হলফনামায় এসব সম্পদ ও দায় দেনার বিবরণী দিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই হেভিওয়েট প্রার্থী। উত্তর সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সাতজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে বাকিদের উল্লেখযোগ্য সম্পদ নেই। প্রার্থীদের মধ্যে কেউ স্ব-শিক্ষিত আবার কেউ এমফিল ডিগ্রিধারী। তবে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বর্তমানে কোনো মামলাও নেই। গত মঙ্গলবার মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামায় সম্পদ ও দায় দেনার বিবরণ দিয়েছেন প্রার্থীরা। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী শেখ মো. ফজলে বারী মাসউদ ছাড়া বাকিদের হলফনামা পাওয়া গেছে। আতিকুল ইসলাম: গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত উত্তর সিটির উপ-নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম। সেই সময়ে দেয়া হলফনামা ১ কোটি ১০ লাখ ৭৫ হাজার টাকার গৃহঋণ থাকার কথাও উল্লেখ করেছিলেন আতিক। এবার তার ব্যক্তিগত নামে আইএফআইসি ব্যাংকে ৯৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকা ঋণ রয়েছে। সেই সময়ের মতো নিজের নামে বাড়ি থাকলেও নেই কোন গাড়ি। আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তার ১৬টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার বার্ষিক আয় ১ কোটি ২৯ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। আয়ের উৎস্য হচ্ছে- কৃষি খাত, ব্যবসা, বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া, মৎস্য চাষ ও ব্যাংক সুদ। আতিকুল ইসলামের অস্থাবর সম্পদ ৪ কোটি ৮৬ লাখ ৬৯ হাজার টাকা ও স্থাবর সম্পদের মূল্যমান ১৩ কোটি ৯৭ লাখ ৯২ হাজার টাকা। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ৫৯১ কোটি ৬ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে। এর মধ্যে আইএফআইসি ব্যাংকে ফান্ডেড ১৮৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা ও নন-ফান্ডেড ২৪৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে। ইস্টার্ন ব্যাংকে ফান্ডেড ৪৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা ও ১৩ কোটি ৯ লাখ টাকা নন-ফান্ডেড এবং শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকে ২৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা ফান্ডেড ও ৭৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা নন-ফান্ডেড টাকা ঋণ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কোনটির তিনি চেয়ারম্যান, ম্যানেজিং ডিরেক্টর অথবা ডিরেক্টর হিসাবে আছেন। বিকম ডিগ্রিধারী আতিকুল ইসলামের নামে বর্তমানে বা অতীতে মামলা হয়নি। তাবিথ আউয়াল: পেশায় ব্যবসায়ী বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৪৫ কোটি ৬০ লাখ ৮ হাজার টাকা। এর বাইরে স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ৪ দশমিক ২৪ একর কৃষি জমি, ১৬ দশমিক ৪৮ একর অকৃষি জমি, দশমিক ৫৬ একর অন্যান্য জমি রয়েছে। এছাড়া রয়েছে ৯২৪ ও ১ হাজার ৪৩ বর্গফুট আয়তনের দুটি অ্যাপার্টমেন্ট। বিপুল সম্পদের সঙ্গে রয়েছে বিপুল ঋণও। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে তার প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে ঋণ নেয়া হয়েছে ৩০২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। তিনি ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় রয়েছেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএসসি ডিগ্রিধারী। তার বার্ষিক আয় ৪ কোটি ১২ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। আয়ের উৎস্য হিসেবে তাবিথ আউয়াল কৃষি, বাড়ি/দোকান/ অন্যান্য ভাড়া, ব্যবসা, শেয়ার/সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক থেকে লভ্যাংশ, চাকরি, অন্যান্য খাত উল্লেখ করেছেন। বর্তমানে তার নামে কোনো মামলা নেই, অতীতেও মামলা ছিল না। জিএম কামরুল: জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী সাবেক সেনাবাহিনীর র্মকর্তা জিএম কামরুল ইসলাম এমফিল ডিগ্রিধারী। পেশায় তিনি ব্যবসায়ী। রয়েছে এটিএস সুলশন নামের প্রতিষ্ঠান। তার বার্ষিক আয় প্রায় ২১ লাখ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ব্যাংকে রয়েছে ২০ লাখ টাকা। রয়েছে ১ কোটি ১২ লাখ টাকার মূল্যমানের যানবাহন। এছাড়া ইলেকট্রনিক, আসবাবপত্র রয়েছে। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ৮ বিঘা কৃষি জমি, ৭ কাঠা অকৃষি জমি এবং সাত কোটি টাকা মূল্যমানের ভবন। তার কোনো দায়দেনা নেই। আহাম্মদ সাজেদুল হক: বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মেয়র প্রার্থী আহাম্মদ সাজেদুল হক পেশায় একজন দন্ত চিকিৎসক। এ পেশা থেকে তার বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৬ হাজার টাকা। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তবে ২০০৮ সালে পল্টন থানায় একটি মামলা দায়ের হলেও তা ডিসচার্জ হয়। তার অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ৫ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা ৫০০ টাকা, ২ ভরি স্বর্ণ, মোবাইল ২টি ও আসবাবপত্র ৫০ হাজার। তার ৫ লাখ ৯১ হাজার টাকা ব্যাংক ঋণ রয়েছে। শাহীন খান: গত উপ-নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী পিডিপি মেয়র প্রার্থী শাহীন খানের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্বশিক্ষিত। তার নিজের কোনো আয় নেই। তার বিরুদ্ধে মামলাও নেই। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা নগদ, ব্যাংকে তিন লাখ, একটি গাড়ি ও ৩ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। স্থাবর কোনো সম্পদ নেই। নেই ব্যাংক ঋণও। মো. আনিসুর রহমান দেওয়ান: এনপিপি একাংশের মেয়র প্রার্থী মো. আনিসুর রহমান দেওয়ান বিএসসি পাস। তার নামে কোনো মামলা নেই, অতীতেও ছিল না। পেশায় রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী। বার্ষিক আয় ২ লাখ ৭৩ হাজার ৫০০ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে প্রায় চার লাখ টাকা নগদ, ইলেকট্রনিক ও আসবাবপত্র। নিজের বাড়ি না থাকলেও স্ত্রীর নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। হলফনামায় দেয়া তথ্য যাচাই করা হবে জানিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাশেম বলেন, সব প্রার্থীর হলফনামা ওয়েবসাইটে দেয়া হবে। সব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র ও হলফনামা যাচাই-বাছাই করা হবে। ওই সময়ে অসত্য তথ্য প্রদান করা হলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্টরা আপত্তি জানাতে পারবেন। কারও তথ্যে গরমিল বা অসত্য তথ্য দিলে মনোনয়নপত্র বাতিলের বিধান রয়েছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: