করোনা ভাইরাস আতঙ্ক: ক্ষতির মুখে কাঁকড়া শিল্প

প্রকাশিত: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০২:০৪ এএম
আব্দুল্লাহ আল ইমরান, বাগেরহাট থেকে: সম্প্রতি চীনে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় দেশের উৎপাদিত কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। ফলে একদিকে সরকার যেমন বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে কাঁকড়া শিল্পের সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার চাষি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সেই সঙ্গে ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকদেরও দুশ্চিন্তার শেষ নেই। রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকলে চাষিরা দারুন ভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে বলে মনে করছে সরকারের মৎস্য বিভাগ। তবে কবে নাগাদ এই নিষেধাজ্ঞা উঠবে তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। গত ২৩ জানুয়ারি থেকে দেশের বাইরে কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ করে দেয় সরকার। রপ্তানি আয়ে চিংড়ির পরেই কাঁকড়ার অবস্থান। দক্ষিণাঞ্চলের জেলা বাগেরহাটে ব্যাপকভাবে কাঁকড়ার চাষ হয়ে থাকে। লোনা পানিতে শিলা জাতের কাঁকড়া চাষ করেন চাষিরা। কাঁকড়া চাষে ঝুঁকি কম হওয়ায় গত প্রায় এক দশক ধরে এ জেলার কয়েক হাজার চাষি কাঁকড়া চাষ করে আসছেন। কাঁকড়া চাষ লাভজনক হওয়ায় দিন দিন কাঁকড়া চাষে আরও চাষিরা আগ্রহী হয়ে উঠছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাগেরহাটের সাত উপজেলায় এক হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে তিন হাজার ৭৭৮টি কাঁকড়ার খামার রয়েছে। এ জেলার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা প্রায় তিন হাজার মেট্রিক টন। ফিমেল (নারী) এক কেজি শিলা কাঁকড়া দুই হাজার ২শ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হয়। আর মেল (পুরুষ) আটশ টাকা থেকে এক হাজার ২শ টাকায় বাজারে বিক্রি করেন এখানকার চাষিরা। বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের কাঁকড়া চাষি মো. লুৎফর রহমান বলেন, লাভজনক হওয়ায় সাত থেকে আট বছর ধরে কাঁকড়ার চাষ করছি। পাঁচ বিঘা জমিতে এবছর অন্তত ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি। বিনিয়োগের অধিকাংশ টাকা ব্যাংক ও এনজিও থেকে নেওয়া ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারিতে আমরা খামার থেকে কাঁকড়া ধরে বাজারে বিক্রি করি। কাঁকড়া বিক্রি শুরু হতে না হতেই চায়নায় করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় ডিপো মালিকরা কাঁকড়া কেনা বন্ধ রেখেছেন। বড় হয়ে যাওয়া পূর্ণ বয়সের এই কাঁকড়া বেশি দিন খামারে রাখা যায় না। ভরা মৌসুমে কাঁকড়া ধরে বিক্রি করতে না পারার কারণে খামারে প্রতিদিনই কাঁকড়া মারা যাচ্ছে। এতে আমি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। কবে এই কাঁকড়া ধরে বাজারে বিক্রি করতে পারব তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। রবিউল ইসলাম, মনোজিত মন্ডলসহ একাধিক কাঁকড়া চাষি বলেন, চীন দেশে আমাদের এই কাঁকড়া রপ্তানি হয়ে থাকে। মৌসুমের ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চীনে কাঁকড়ার বিপুল চাহিদা থাকে। এই সময়ে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় চীন আমাদের কাঁকড়া নিচ্ছে না। যার কারণে আমরা খামার থেকে কাঁকড়া ধরা বন্ধ করে দিয়েছি। খামার থেকে কাঁকড়া ধরা বন্ধ রাখায় প্রতিদিনই কাঁকড়া মারা যাচ্ছে। আমরা অনেকেই ব্যাংক, এনজিও ও মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে কাঁকড়া চাষে বিনিয়োগ করেছি। এই কাঁকড়া বিক্রি করতে না পারলে আমাদের লাখ লাখ টাকার লোকসান হবে। আমাদের কাঁকড়া শিল্প বাঁচাতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানান চাষিরা। স্থানীয় কামরুল ইসলাম নামে এক কাকড়া ব্যবসায়ী জানান, আমি আজকে দুইটি কাকড়া বিক্রির জন্য ডিপোতে নিয়ে এসেছি। বতর্মানে ডিপো মালিকরা কাকড়া কিনতে চায় না। আমি দুটি কাকড়া ৬শত আশি টাকা বিক্রি করলাম । যখন দাম ছিল এই দুটি কাকড়া আমি ১৬শত টাকা বিক্রি করতে পারতাম। বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অমল কান্তি রায় বলেন, কাঁকড়া উৎপাদনে বাগেরহাট জেলা অন্যতম। দেশের মোট রপ্তানির ৩০ ভাগেরও বেশি কাঁকড়া যায় এ জেলা থেকে। তিনি বলেন, ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এই তিন মাসে চীনে নানা উৎসব থাকে এ সময় বিপুল পরিমাণ কাঁকড়া তারা আমাদের দেশ থেকে নিয়ে থাকে। মোট রপ্তানির ৭০ থেকে ৮০ ভাগ কাঁকড়া চীনের বাজারে আমরা দিয়ে থাকি। এই ভরা মৌসুমে চীনে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় তারা কাঁকড়া নিচ্ছে না। তাই গত ২৩ জানুয়ারি থেকে সরকার কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। কাঁকড়া রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে না গেলে এখানকার চাষিদের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা করছেন এই মৎস্য কর্মকর্তা।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: