গ্রেফতার এড়াতে এলাকা ছাড়া বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী

প্রকাশিত: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৭:০৩ এএম
পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনের উপনির্বাচনে ঈশ্বরদীর সাহাপুর ইউনিয়নের আজিজল তলা ও সলিমপুর ইউনিয়নের মানিকনগর স্কুলপাড়া মোড়ে আওয়ামী লীগের দুটি নির্বাচনী অফিস হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগ ও গুলি বর্ষণ করা মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে ঘর ছাড়া ঈশ্বরদী বিএনপির ৫৬ নামীয় আসামি। মামলা দুটিতে ইতিমধ্যেই পুলিশ বিএনপির চার নেতাকর্মীকে আটক করেছে। আটককৃতরা হলেন- সাহাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব রমজান আলী, বিএনপি নেতা কমল, ওহিদুল এবং আব্দুল হাই। আর নতুন করে নামীয় আসামি হয়ে গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে আরো ৪৫ অজ্ঞাত নামীয়রা নিজেদের নির্বাচনী মাঠ থেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। এতে ভোটের দুদিন আগ থেকেই নেতাকর্মী শুন্য হয়ে কোণঠাঁসা হয়ে পড়েছেন বিএনপির ধানের শীষ প্রতিকের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব। তবে একই দিনে গভীর রাতে দুটি মোটর সাইকেলযোগে চারজন হেলমেট পরিহিত ব্যক্তি আওয়ামী লীগের জনশুন্য নির্বাচনী অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগ ও সাত রাউন্ড গুলি এবং মামলার ঘটনায় দুই দলের প্রার্থীরই পরস্পর বিরোধী বক্তব্য ও অভিযোগ রয়েছে। পুলিশী হয়রানি, গ্রেপ্তারের ভয় এড়িয়ে এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের রক্ত হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নিজেদের ভোটাধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ধানের শীষ প্রতিকে ভোট প্রদানের আহবান জানিয়েছেন হাবিব। তারপরও ভোট কেন্দ্রে নেতাকর্মী শুন্য হওয়ার মধ্যে দিয়েও বিএনপি প্রার্থী হাবিব উপ নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। বিএনপি প্রার্থীর এই অবস্থার মধ্যে দিয়েই আগামীকাল (শনিবার) সকাল থেকে শুরু হবে ভোট গ্রহণ। এর আগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বুধবার গভীর রাতে একই সময় ঈশ্বরদীর সাহাপুর ইউনিয়নের আজিজলতলা মোড়ে ও সলিমপুর ইউনিয়নের মানিকনগর স্কুলপাড়া মোড়ে আওয়ামী লীগের জনশূন্য নির্বাচনী অফিসে হামলার ঘটনা ঘটে। তবে প্রাণহানী ও কিংবা হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তারপরও হামলার খবর ঈশ্বরদীতে ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত হয়ে উঠে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ওই রাতেই বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নুরুজ্জামান বিশ্বাসের শ্যালক মুরাদ আলী মালিথা বাদী হয়ে ঈশ্বরদী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক আজমল হোসেন সুজনকে প্রধান করে বিএনপি নেতা রকিবুল ইসলাম রকিসহ ২৮ জন নামীয় ও আরো ২০/২৫ জন অজ্ঞাতনামী করে এবং আওয়ামী লীগ নেতা আমজাদ হোসেন অবুঝ বাদী হয়ে বিএনপি নেতা রকিবুল ইসলাম রকিকে প্রধান ও উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক আজমাল হোসেন সুজনসহ ২৮ জন নামীয় ও অজ্ঞাতনামা আরো ১৫/২০জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা, পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, বিএনপির জনজোয়ার দেখে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও কেন্দ্র থেকে আসা নেতারা ভয় পেয়েছেন। ধানের শীষের পক্ষে বিএনপির নেতাকর্মীরা মাঠে থাকলে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নুরুজ্জামান বিশ্বাসের নিশ্চিত ভরাডুবি হবে। এই জন্য আওয়ামী লীগ সুপরিকল্পিতভাবে নিজ দলীয় সন্ত্রাসী বা পুলিশ দিয়ে গভীর রাতে নিজ দলীয় নৌকা প্রতীকের জনশূন্য নির্বাচনী অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগ ও গুলির ঘটনা ঘটিয়েছে। আর বিএনপির নেতাকর্মীরদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। ধানের শীষ প্রার্থী হাবিব আরো বলেন, এই মামলায় পাবনা ডিবি ও ঈশ্বরদী থানা পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করতে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে। তল্লাশি করা হচ্ছে। বাড়ির মেয়েদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। পুলিশের ভয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা বাড়ি ছাড়া হয়েছেন। এই অবস্থায় ভোট সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব নয়। হাবিব বলেন, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনীরা বিএনপির নেতাকর্মীদের মারধর করেছে, প্রবীণ নেতাদের দাঁড়ি ধরে টানা হেঁচড়া করেছে, ধানের শীষের প্রচার মাইক ভাঙচুর করেছে, পোস্টার ছিড়েছে। এসব বিষয়ে রিটার্নিং অফিসারের নিকট বারবার অভিযোগ করা হলেও কোনো কাজ হয়নি। পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও প্রার্থী নুরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করতেই বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা আমার দুটি নির্বাচনী অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগ ও গুলি বর্ষণ করেছে। কিন্তু আমরা ধর্য্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে বিএনপি জামায়াতের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে দেইনি। তিনি আরো বলেন, তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনেই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিএনপি প্রার্থী হাবিব এখন বিষদগার করছে। আমি মুক্তিযোদ্ধা। আমাকে বুলেটের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে বুলেটের জবাব দেওয়া হবে। তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সময় বিএনপি প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দিতে তাঁর লোকজনকে মারধর, বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি ধামকি প্রদান ও মারধর করার বিষয়টি তাঁর জানা নেই বলে দাবি করেন। এরআগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা উপনির্বাচন উপলক্ষ্যে পাবনার ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়াতে পরিদর্শনে আসেন। সেখানে জেলা প্রশাসন, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং, সহকারী রিটার্নিং, প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এবং সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছিলেন, আসনটিতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হবে। ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবির বলেন, আওয়ামী লীগের দুটি নির্বাচনী অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগ ও গুলি করার ঘটনায় দলের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। এসব মামলার নামীয় আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের পরপর পাঁচবারের এমপি ও সাবেক মন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু চলতি বছরে বার্ধক্যজনিত কারণে গত ২ এপ্রিল মারা যান। মৃত্যুজনিত কারণে শূন্য ঘোষিত আসনে আওয়ামী লীগের পক্ষে নুরুজ্জামান বিশ্বাস (নৌকা), বিএনপির পক্ষে হাবিবুর রহমান হাবিব (ধানের শীষ) ও জাতীয় পার্টির (এরশাদের) পক্ষে রেজাউল করিম (লাঙ্গল) প্রতিক নিয়ে লড়ছেন। তবে আসনটিতে মূলত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর মধ্যেই ভোটের লড়াই হবে। সূত্র: কালের কন্ঠ।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: