সাবেক উপাচার্য পদত্যাগের এক বছর: বিচার হীনতায় শিক্ষার্থীদের অসন্তোষ

প্রকাশিত: ০২ অক্টোবর ২০২০, ০৩:১৪ পিএম
আশরাফুল আলম, বশেমুরবিপ্রবি থেকে: উদযাপনের শুরুটা ৩০ সেপ্টেম্বর রাত থেকেই, কিন্তু উদযাপনটা উৎসবে পরিণত হয় ১লা অক্টোবর সকাল ১০ টা থেকে। নানা রঙের আবিরের ছোঁয়ায় গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস প্রাঙ্গন রঙিন হয়ে ওঠে। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর আনন্দ মিছিলের স্লোগান আর বাধভাঙ্গা উল্লাসে মেতে ওঠে ৫৫ একরের বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গন। এই উৎসব কোন হোলি বা র‍্যাগ ডের জন্য ছিলো না, এই উৎসব ছিলো বিজয়ের, এই উৎসব ছিলো স্বাধীনতা অর্জনের। স্বৈরাচারী আচরণ, দুর্নীতি, যৌন নিপীড়ণসহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত তৎকালীন উপাচার্যের অত্যাচারের বিরুদ্ধে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর টানা ২৭৩ ঘন্টা আন্দোলনের পর উপাচার্যের পদত্যাগের মাধ্যমে কাঙ্খিত বিজয়ের উৎসব। স্বৈরচারী উপাচার্য পতনের পর পার হয়ে গেছে ৩৬৫ টি দিন। ঘটে গেছে নানা ঘটনা। বের হয়ে এসেছে আরো দুর্নীতির ঘটনা, আন্দোলন, বিভিন্ন দাবিতে বিভিন্ন সময়ে উত্তাল হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীরা বলছেন যেই স্বপ্ন নিয়ে তারা আন্দোলন করেছিলেন সেই স্বপ্ন এখনও পুরোপুরি পূরণ হয় নি। আন্দোলন এবং বিজয়ের স্মৃতিচারন করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী প্রিয়তা দে বলেন, "আন্দোলনের সময়ের দিনগুলির কথা মনে আসলে এখনো শিউরে উঠি। জীবনের ঝুকি নিয়ে আমরা সেদিন উপাচার্যের বিরুদ্ধে দাড়িয়েছিলাম। তিনি পদত্যাগ করার পর চুড়ান্ত বিজয়ের সময় যে অনুভুতি ছিলো তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না৷ তিনি পদত্যাগ না করলে ক্যাম্পাসে কখনো বাক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হতো না এবং কথায় কথায় বহিষ্কারের ধারা অব্যাহত রেখে সবাইকে কুক্ষিগত করে রাখতেন।" তবে উপাচার্যের পদত্যাগের বছর পেরোলেও এখনো শিক্ষার্থীদের অনেক দাবি পূরণ না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, "আমরা যেসকল কারণে আন্দোলন করেছিলাম তার সবকিছু এখনো সম্পূর্ণ পূরণ হয়নি। সাবেক উপাচার্য সহ যে সকল ব্যক্তিগন সাবেক দুর্নীতির সাথে জড়িত ছিলেন তাদের কাউকেই বিচারের আওতায় নেয়া হয় নি। ভর্তিবানিজ্য করে যেসকল শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও কোন ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্যের কাছে এখন একটাই চাওয়া তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এসকল সমস্যার সমাধান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমুর্তি ফিরিয়ে আনবেন।" আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকা আরেক শিক্ষার্থী হাসান মাহমুদ বলেন, “ গতবছরে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধভাবে টানা ১২ দিন আন্দোলন করে নাসিরউদ্দিনকে অপসারণ করতে সক্ষম হই। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত ভিসির ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, নাসিরপন্থি কর্মকর্তা কর্মচারী প্যানেলের সক্রিয়তা, বারংবার চুরির ঘটনা, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট এর মধ্যে মারামারি এবং সর্বোপরি ছাত্র শিক্ষক সম্পর্কের ভঙ্গুর দশার কারণে আমরা প্রত্যাশিতভাবে সামনে এগিয়ে যেতে পারিনি। সবচেয়ে দু:খের বিষয় হচ্ছে নাসিরের মত দুর্নীতিবাজদের শাস্তি আমরা আজও দেখতে পাই নি। আন্দোলন বন্ধ করতে ২০১৯ এর ২১ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনা, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাংবাদিককে পরীক্ষার হল থেকে বের করে নিয়ে মারধর করার ঘটনার কোনো বিচার হয়নি। এক বছর পর সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্যের নিকট আমাদের দাবি থাকবে অবিলম্বে এসকল ঘটনার বিচার সহ কম্পিউটার চুরি এবং শিক্ষক অবমাননার বিচার নিশ্চিত করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে দ্রুত শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার।” এ বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. হাসিবুর রহমান বলেন, “বিভিন্ন দুর্নীতি এবং অনিয়মের কথা আমরা কমবেশি সকলেই জানি। এমনকি আমরা এমনটাও শুনেছি যে একসময় ঢাকায় কোচিং সেন্টারে পড়াতো তাদেরকেও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু একজন ব্যক্তি নাসিরউদ্দিনের পক্ষেতো একাই এমন দানবে পরিণত হওয়া সম্ভব নয়। যারা তাকে এসব দুর্নীতি করতে সহযোগিতা করেছে, বিভিন্ন সময়ে স্ক্রিনশট দেখিয়ে তার কানভারী করেছে তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনা জরুরি।" এদিকে, ২০১৯ এর ১৩ নভেম্বর সাবেক উপাচার্য খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের বিরুদ্ধে ওঠা অর্থ আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে দুদক পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যাহকে অভিযোগের অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করে কমিশন। এ বিষয়ে শেখ মোঃ ফানাফিল্যাহর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: