জাবি অধ্যাপকের গৃহকর্মীর প্রতি অমানবিক আচরণ

প্রকাশিত: ২৫ অক্টোবর ২০২০, ১২:২৩ এএম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে গৃহকর্মীর প্রতি অমানবিক আচরণের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ ওঠা সেই অধ্যাপক ড. নাসরীন সুলতানা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করছেন। গত বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) ঢাকা থেকে যশোরগামী দুরপাল্লার একটি যাত্রীবাহী বাসে এই অমানবিক আচরণের ঘটনা ঘটে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক থেকে বাসে চড়েন ওই অধ্যাপিকা। এসময় তার সাথে সন্তান ও গৃহকর্মী শিশুটি ছিল। বাসে ওঠার পর অধ্যাপিকা ও তার সন্তান সিটে আসন গ্রহণ করলেও তার সাথে থাকা গৃহকর্মী শিশুটি দাঁড়িয়ে যাত্রারত ছিল। এই রকম একটি স্থির চিত্র ও ছবি মুঠোফোনে ধারণ করেছেন ঐ বাসের যাত্রী ও গণমাধ্যমকর্মী মঞ্জুরুল আলম পান্না। পরে সেটি ফেইসবুকে পোস্ট করেন তিনি। এ নিয়ে সারাদেশে ও ক্যাম্পাসের নানা মহলে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। তবে এমন অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন অধ্যাপক ড. নাসরীন সুলতানা। তিনি দাবি করেছেন ওই সাংবাদিক মনগড়া ও ভিত্তিহীন কথা ছড়িয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে গণমাধ্যমকর্মী মঞ্জুরুল ইসলাম পান্নার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঘটনার দিন সকালে সেন্টমার্টিন পরিবহনে আমি ঢাকা থেকে খুলনার পথে রওনা হই। পথিমধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভদ্র মহিলা ছেলে মেয়েসহ বাসে ওঠেন। আমার সিট ছিলো সি লাইনে আর ওনাদের সবার সামনে এ লাইনে। আমি দেখতে পাই একটি মেয়ে এ লাইনের প্যাসেঞ্জারের সামনে দাঁড়িয়ে যাত্রা করছে। প্রথমে ভেবেছিলেন পবিবারের কেউ হয়তো এমনিই দাঁড়িয়ে আছে। ইতস্থত বোধ করি এবং চিন্তা করি কিভাবে এটা নিয়ে কথা বলা যায়। এমনকি ফোনে নিজের স্ত্রীর সাথেও শেয়ার করি বিষয়টা। যাহোক এক পর্যায়ে উঠে গিয়ে কথা বলে জানতে পারি উনি জাবির শিক্ষক। এরপর তাকে জিজ্ঞেস করি বাসে মাঝখানের বেশ কয়েকটি সিট খালি থাকা সত্ত্বেও এতদুর রাস্তা মেয়েটিকে দাঁড় করিয়ে যাত্রা করছেন? শিক্ষক মহোদয় জানান মেয়েটির করোনা সিম্পটম আছে তাই কারো সাথে বসতে দেননি। ৩০০ কিলোমিটার রাস্তা একটা বাচ্চা মেয়েকে দাঁড় করিয়ে কিভাবে যাত্রা করছেন, আপনিতো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। এমন কথা বললে শিক্ষক মহোদয় আমাকে বলেন ‘আপনি একটু বেশি বুঝছেন’। আমি তাকে নিজের মেয়ের মত দেখি। তখন প্রতিবাদ করি এবং বলি আপনি ভুল বলছেন এবং ভুল করছেন। নিজের মেয়ের মতন দেখেন তো নিজের সন্তানকে বসিয়ে তাকে দাঁড় করিয়ে নিচ্ছেন কেন? আর সারা রাস্তা আপনার সন্তান চিপস ও এটা ওটা খেলেও তাকে তো একবারও খেতে দিলেন না। এসময় অন্যান্য যাত্রীরাও এটার প্রতিবাদ করে এবং শিক্ষক মহোদয় অত্যন্ত বিরক্তি প্রকাশ করেন। এরপর আমি নিজের সিটে ফিরে গিয়ে ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে বিস্তারিত জানিয়ে শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সহযোগিতা চাইলে ৯৯৯ থেকে ৩৩৩ থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন বিষয়ক হেল্প লাইনে যোগাযোগের পরামর্শ দেয়া হয়। ইতোমধ্যে শিক্ষক মহোদয়ের গন্তব্য চলে এলে তিনি বাস থেকে নেমে যান। অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যাপক ড. নাসরীন সুলতানা বলেন, ‘আমরা তিনজন দুইটা সিটে বসি। পথের মধ্যে মেয়েটি আমাদের সঙ্গে বসেই আসে। ফেরিতে ওঠার মুহূর্তে প্রায় আধাঘণ্টা মতো বাসে অপেক্ষা করতে হয়। সে সময় মেয়েটি ও আমার ছোট ছেলে উঠে দাঁড়িয়ে জানালা দিয়ে পাশের ফেরি চলাচল দেখে। পরবর্তীতে নদী পার হলে আবার দুজনেই আমার সঙ্গে বসে। কিছু দূর আসার পর একটু জ্যাম বাঁধে। জ্যামের সময়ও মেয়েটি দাঁড়িয়ে জানালা দিয়ে তাকিয়ে বাইরে দেখছিল। এ সময়ের মধ্যেই ঐ ব্যক্তি ছবিটি তুলেছে।’ করোনা সিম্পটমের কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, এ কথা আমি কখনও বলিনি। তিনি মনগড়া কথা লিখেছেন। যদি করোনার সিম্পটম থাকত তবে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে করে তাকে কেন নিয়ে আসব? তিনি আরো বলেন, ‘মেয়েটি আমাকে ফুফু বলে ডাকে। মেয়েটিকে আমি আমার নিজের মেয়ের মতো দেখি। মেয়েটি কোনো অভিযোগ করেনি। তারপরও আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপবাদ রটানো হচ্ছে।’ এ ব্যাপারে মঞ্জুরুল আলম পান্না বলেন, আমি পুরো পথই ওই শিশুকে সিটে বসতে দেখি নি। ওই বাসে ওইদিন মাঝের দিকেও সিট ফাঁকা ছিল। এ ব্যাপারে বাস কাউন্টারে যোগাযোগ করলেই বিষয়টা জানা যাবে। এদিকে অধ্যাপক নাসরীন সুলতানাও ফেইসবুকে একটি ভিডিও আপলোড করেন যেখানে দেখা যায় যাত্রাপথে মেয়েটি জানালার পাশের সিটে তার সঙ্গে বসেই ভ্রমণ করছেন। এ সংক্রান্ত ভিডিও দেখে ‘আমরাই জাহাঙ্গীরনগর’ গ্রুপে নানা মহল থেকে প্রশ্ন উঠতে থাকে। অনেকে বলছেন এই ভিডিও ইচ্ছা করেই বানানো হয়েছে। কেননা ভিডিও করার সময়কার আশেপাশের দৃশ্য আলাদা ছিল। বাসটি ছিল তখন গড়াই নদীর সেতুর ওপর সেখান থেকে যশোরের দুরুত্ব ২০ মিনিটের। এছাড়া ভিডিও করার সময় অধ্যাপক নাসরীনের সন্তানদের বলতে শোনা যায় ভিডিওটি জুম করতে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: