রেজিস্ট্রারকে অব্যাহতি দেননি উপাচার্য, আপত্তির মুখে ভর্তি কমিটির সভা স্থগিত

প্রকাশিত: ১৭ ডিসেম্বর ২০২০, ০৯:২৮ পিএম
কামরুল হাসান অভি, রাবি থেকে: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর আব্দুল বারীকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু রেজিস্ট্রারকে অপসারণ না করেই তারই চিঠিতে মিটিংয়ের আহ্বান করায় অধ্যাপক বারীকে অপসারণের দাবি জানায় অধিকাংশ শিক্ষক। পরবর্তীতে হট্টগোল সামাল দিতে না পেরে ভর্তি পরীক্ষার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের একাডেমিক সভাটি স্থগিত ঘোষনা করেন উপাচার্য। একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় অনিয়ম এবং ইউজিসির তদন্ত কমিটিকে বিভিন্ন পর্যায়ে অসহযোগিতা করে অসদাচরণ করায় রেজিস্ট্রারের পদ হতে অধ্যাপক বারীকে অব্যাহতি প্রদানের প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছে সরকার। কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও সরকারী আদেশ অমান্য করে সেই রেজিস্টারকে স্বপদে বহাল রেখেছেন উপাচার্য এম আব্দুস সোবহান। এমনকি তারই স্বাক্ষরিত চিঠিতে একাডেমিক মিটিংয়ে শিক্ষকদের আহ্বান করেছেন উপাচার্য। এসব বিষয় তুলে ধরে একাডেমিক মিটিংয়ে প্রশ্ন তোলেন ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম। সভায় তিনি বলেন, সরকারের আদেশ অমান্য করার ইখতিয়ার কারো নেই তাহলে এই দুর্নীতিগ্রস্থ রেজিস্ট্রারের উপস্থিতিতে একজন সচেতন শিক্ষক হিসেবে আমরা মিটিংয়ে কিভাবে থাকব। তাছাড়া সরকার সকল নিয়োগ স্থগিতসহ আপনাকে নিয়োগ নিতিমালা পরিবর্তনের বিষয়ে কারন দর্শাতে বলেছেন। এমনকি ডুপ্লেক্সবাড়ী ভাড়ার টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার আদেশ দিয়েছেন। সরকারের আদেশ বাস্তবায়ন করা আপনার দায়িত্ব। তাই দ্রুত সময়ের মাধ্যে সরকারী নির্দেশনা বাস্তবায়নে আহ্বান জানান তিনি। এরপর একে একে বেশ কয়েজন শিক্ষক একই প্রস্তাব করেন। এসময় উপাচার্য বলেন, 'রেজিস্ট্রারের অব্যাহতি বিষয়টি আইনি বিষয়, তড়িঘড়ি করেই নেয়া যায় না। অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের নিয়োগ বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কোনও সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করা হয়নি। আমরা মন্ত্রণালয়ের কাছে এর কাছে এ স্থগিতাদেশের কারণ জানতে চাইবো এবং কিভাবে বিষয়টি সমাধান করা যায়, সে বিষয়টিও আমরা দেখবো। এরপর রেজিস্ট্রারকে অব্যাহতি দেয়াসহ সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।' কিন্তু শিক্ষকদের দাবিরমুখে এবিষয়ে দ্রুত সিন্ডিকেট মিটিং আহ্বান করে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আশ্বাস দেন। এবং সভাটি স্থগিত করতে বাধ্য হন উপাচার্য এম আব্দুস সোবহান। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট ভবনে আয়োজিত সভার বিষয়ে কলা অনুষদের ডীন অধ্যাপক ফজলুল হক বলেন, আজকের একাডেমিক কাউন্সিলে ভর্তি পরীক্ষার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের মিটিং হওয়ার কথা ছিল। তবে, সভার শুরুতে অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম ভিসু স্যারের অনুমতি নিয়ে কিছু বলার দাবি জানান। তারপর ভিসি স্যার অনুমতি দিলে তিনি সরকারী আদেশে কেন রেজিস্ট্রারকে অব্যাহতি দেন নি তা জানতে চান। সরকারী আদেশ অমান্য করে একজন দুর্নীতিগ্রস্থ রেজিস্ট্রারকে দিয়ে সভার আহ্বান, চিঠিতে প্রদান করা বিষয়ে প্রশ্ন রাখেন। তাছাড়া নিয়োগ স্থগিতসহ সরকারী আদেশ পালন না করার বিষয়ে জবাব চান তিনি। পরবর্তীতে অধিকাংশ শিক্ষক তাদের যুক্তিতে সহমত পোষন করেন। এবং শেষ পর্যন্ত ওই রেজিস্ট্রারকে অব্যাহতি না দেয়া পর্যন্ত সভা স্থগিতের দাবি জানান এবং সভা বর্জন করেন। এবিষয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন অধ্যাপক ফখরুল ইসলাম বলেন, আজ সভার শুরুতে রেজিস্ট্রারকে অপসারণে মন্ত্রণালয়ের আদেশ বাস্তবায়নে শিক্ষকরা দাবি তোলা হয়। পরে যুক্তি-পাল্টা যুক্তিতে শুরু হয় হট্টগোল। শিক্ষকরা একের পর যুক্তি দিয়ে এবং সরকারী আদেশ কার্যকর করে রেজিস্ট্রারকে অপসারণের দাবি জানায়। পরবর্তীতে দাবির মুখে সভাটি মুলতবি করা হয়। এবং ভিসি স্যার, সিন্ডিকেটে মিটিং করে দ্রুত এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আশ্বস্ত করে ভর্তি পরীক্ষার চূড়ান্ত সভাটি হঠাৎ স্থগিত হওয়ার কারন জানতে চাইলে বিশ্ববিবিদ্যালয় ছাত্র উপদেষ্টা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) ও প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, অনিবার্য কারনবশত আজকের সভাটি স্থগিত করা হয়েছে। হট্টগোলের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহানের মুঠোফোনে করলে তিনি রিসিভ করেননি। পরে মুঠোফোনে ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও রিপ্লাই করেননি উপাচার্য।  

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: