সীতাকুণ্ড পৌরসভা নির্বাচন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির দিয়ে প্রচারণা

প্রকাশিত: ২১ ডিসেম্বর ২০২০, ০৭:৩১ এএম
সীতাকুণ্ড পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীর মধ্যে চলছে বাগ্যুদ্ধ। বিএনপি প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল মনছুর বলছেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও গত নির্বাচনের আগে জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির সিংহভাগই পূরণ করতে পারেননি বর্তমান মেয়র বদিউল আলম। তিনি নির্বাচিত হলে পৌরসভায় কোনো সিন্ডিকেট থাকবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি প্রার্থী। অন্যদিকে, মেয়র বদিউল আলম নানা সীমাবদ্ধতার কারণে নির্বাচনী ইশতেহারের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। ইশতেহারের সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আরেকবার সুযোগ চান তিনি। তিনি দাবি করেছেন, গত পাঁচ বছরে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, সড়ক আলোকায়ন, পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থাসহ অবকাঠামো খাতে ৩৩ কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে। সম্প্রতি পৌরসভা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় স্থানীয় সাংসদ দিদারুল আলম অভিযোগ করেছেন, গত ৫ বছর পৌরসভা বিএনপি-জামায়াত সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে ছিল। আওয়ামী লীগের দলীয় মেয়র থাকার পরও দলের নেতাকর্মীরা মূল্যায়িত হয়নি। তবে এই দাবি অস্বীকার করে মেয়র বলেন, 'কাউন্সিলরদের মাধ্যমে নীতিমালার আলোকে সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে। দলের নেতাকর্মীদের যথাযথ সম্মান দেওয়া হয়েছে। কোনো সিন্ডিকেট ছিল না।' সীতাকুণ্ড পৌরসভার বর্তমান মেয়র বদিউল আলম পৌরসভা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি। আগামী ২৮ ডিসেম্বর সীতাকুণ্ড পৌরসভা নির্বাচন। এ নির্বাচনে তিনি আবারও মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল মনছুর গতবার আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। এবারও দল তাকে মনোনয়ন দিয়েছে। এবার তিনি বিজয়ী হলে পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়ন করবেন বলে ভোটারদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। অপরদিকে, নাগরিক কমিটি মনোনীত প্রার্থী সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম মোবাইল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি বলছেন, নির্বাচিত হলে সীতাকুণ্ড পৌরসভাকে ডিজিটাল পৌরসভায় রূপান্তর করবেন। গত নির্বাচনে মেয়র বদিউল আলমের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল, বিজয়ী হলে তিনি পৌরসভার জলাবদ্ধতা নিরসন করবেন, গড়ে তুলবেন পরিচ্ছন্ন ও পরিকল্পিত পৌরশহর। এ ছাড়া, পৌরসভার নাগরিক সেবা তৃণমূলে পৌঁছে দেওয়া, শিশু-কিশোরদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করা, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা ও ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটির মাধ্যমে উন্নয়ন ও সেবা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু এসব প্রতিশ্রুতির সিংহভাগই তিনি পূরণ করতে পারেননি। তবে তিনি রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন বলে জানিয়েছের পৌরসভার বাসিন্দারা। সীতাকুণ্ড পৌরসভার অন্তত চারটি ওয়ার্ডে মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বর্ষায় এখনও ৬, ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা হয়। এর মধ্যে কোনো কোনো ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা দীর্ঘস্থায়ী হয়। এদিকে বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয় মহাসড়কের পাশে। রয়েছে অপরিকল্পিত ডাস্টবিন। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, তার এলাকায় দুটি সড়ক এখনও কাঁচা রয়েছে। ইট বসানো রাস্তাগুলোর অবস্থাও ভালো নয়। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইমরান হোসেন বলেন, প্রতি বর্ষায় জলাবদ্ধতায় শিবপুরের ফসল নষ্ট হয়ে যায়। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জহিরুল ইসলাম বলেন, ভোলাগিরি এলাকায় অপরিকল্পিত ডাস্টবিনের কারণে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। নালা-নর্দমা অপরিস্কার থাকায় সহজে পানি সরতে পারে না। ২ নম্বর ওয়ার্ডের রফিকুল ইসলাম বলেন, ইদিলপুরে বেশি উন্নয়কাজ হয়েছে। তাদের ওয়ার্ডে তেমন কাজ হয়নি। এসব বিষয়ে পৌরসভার মেয়র বদিউল আলম বলেন, 'গত পাঁচ বছরে ৩৩ কোটি টাকার উন্নয়ন করেছি। জলাবদ্ধতা নিরসনে পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করেছি। কিন্তু বর্ষার পানি সাগরে যায় মুরাদপুর ইউনিয়নের তিনটি খালের উপর দিয়ে। ভাটিতে খালগুলো খনন করা না হলে পৌরসভার জলাবদ্ধতা যাবে না। পরিচ্ছন্নতার জন্য লোকবল ১৩ থেকে ৩০ জনে উন্নীত করেছেন। মেয়র বলেন, পৌরসভার জনসংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে। সে হিসাবে সেবার মানও বাড়িয়েছেন তিনি। পরিচ্ছন্নতা ও আলোকায়নে শতভাগ সফলতার দাবি করেন তিনি। জেলা পরিষদের মালিকানাধীন লালদীঘির দক্ষিণ ও পূর্বপাড়ে বিনোদনের জন্য পার্ক করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু অনুমতি না পাওয়ায় সেটি করতে পারেননি। মেয়র বলেন, সীতাকুণ্ডে ওয়াসার পানির একটি সাব স্টেশন হবে। সেখান থেকে পৌরবাসীকে পানি সরবরাহ করার জন্য তিনি ওয়াসাকে চিঠি দিয়েছেন। অসম বরাদ্দের বিষয়ে মেয়র বলেন, পিছিয়ে থাকা ওয়ার্ডগুলোকে সমানভাবে উন্নয়ন করার জন্য কোথাও কোথাও বরাদ্দ বেশি দিয়েছেন। জানতে চাইলে সিকিউর সিটির পরিচালক আকতার হোসেন বলেন, বর্তমান মেয়রের সময়ে পৌর সদরের অবকাঠোমোসহ ব্যপক মৌলিক উন্নয়ন হয়েছে। বিএনপির মেয়র প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা আবুল মনছুর বলেন, গত ৫ বছরের সরকারি যে পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তার যদি সদ্ব্যব্যবহার করা হতো তা হলে পৌরবাষীর দুর্ভোগ থাকতো না।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: