পরিকল্পনাহীন এক রাতের মুগ্ধতার গল্প

প্রকাশিত: ১২ জানুয়ারি ২০২১, ০৬:৫৫ এএম
স্কুল জীবন মানেই এক অদ্ভুত বন্ধুত্বের গল্প। যেখানে প্রান খুলে হাসা, আড্ডা, খেলাধুলা আর বিভিন্ন ধরনের তর্কবিতর্ক। একেক নামে ডেকে খেপিয়ে দেওয়া, ক্লাসের ফাঁকে সবাই মিলে গান গাওয়া, একজনের টিফিন আরেকজনে খেয়ে ফেলা। ট্রল করে আনন্দ পাওয়া, সবকিছুই যেনো লাগামহীন। স্কুল জীবন শেষ করেছি ৭ বছর আগে। সবসময় যে বন্ধুদের ছাড়া দিন পার হতোনা ওদের নিয়ে কখনোই একসাথে বসা হয়নি। স্কুলের গন্ডি পার হয়ে কলেজ, তারপর বিশ্ববদ্যালয়। সবাই স্বপ্নের পথে নিরন্তর ছুটে চলছে। অনেকেই আবার সংসারের হালও ধরেছে। দিনটি ছিলো সোমবার। কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই উদ্যোগ নিয়েছিলো মোহাইমিনুল ইসলাম ও সাইফুল। সবাই একবার হলেও একসাথে একটা দিন বা রাত কাটাতে চাই। অনেকেই তখন বাড়িতে। করোনা নামের অদৃশ্য এই ভাইরাসের কারনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ, টিউশনি বন্ধ, কারো কারো চাকুরি চলে গেছে। আমিও ১০ দিনের ছুটি নিয়ে তখন বাড়িতে। সাইফুল জানালো পিকনিকের কথা। সবকিছুই যেনো হঠাৎ করে হচ্ছিলো। কোথায় একসাথে বসা যায়। কি খাওয়া যায় সেগুলো নিয়ে পরিকল্পনা করা। কারা থাকতে পারছে তাদের লিস্ট করা। নামমাত্রক চাঁদা উঠিয়ে বাজার করা।দু'দিনের মধ্যে সবকিছু আয়োজন করা চারটি খানি কথা নয়। অবশেষে সবকিছুই সম্ভাব্যের পথে। সময় বদলাচ্ছে। উৎসবগুলোতে আসছে নিত্যনতুন পরিবর্তন। শীতকাল মানেই এখন শুধু যে পিঠাপুলির উৎসব, তা কিন্তু নয়। কুয়াশা ভরা হিম শীতল বাতাসে বারবিকিউ পার্টির আনন্দটাই অন্যরকম। এ যেন এখনকার জেনারেশনের নতুন ট্রেন্ড কিংবা বলা চলে চড়ুইভাতির আধুনিক রূপ। পার্থক্য এটুকুই- চড়ুইভাতির মতো এটি দিনে নয় বরং রাতেই বেশি করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দিন হতে রাত পুরো সময়টি ছিলো আমাদের। সবাই একসাথে হওয়া। সবকিছুই যেনো ছোটবেলাকে হাতছানি দিচ্ছে। মোহাইমিনুলের বাড়ির উঠোনেই সবকিছু সম্পন্ন করবো এমনটা নিয়ে আমরা একত্রিত হই। সন্ধ্যার হরেক রঙের বাতির আলোয় আলোকিত উঠনের মনোরম পরিবেশ চারপাশের মসৃণ সরু পথ, বসার স্থানে হয়ে ওঠে শত গল্পের সূচনা। চলে আড্ডা, গান, আলোচনা, ভরা পূর্ণিমায় জোছনা বিলাস আর বারবিকিউ তৈরির কাজ। মুরগি কিংবা হাঁসই এর প্রধান উপাদান। সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের মসলা, কয়লা, তারের নেট ইত্যাদি আয়োজনের মূল সরঞ্জামাদি। সকল জোগাড় শেষে রাত বাড়তেই শুরু হয় মূল কাজ। উঠানে ইট সাজিয়ে তারের নেট বিছিয়ে তার উপরে মাংস আর নিচের কয়লায় আগুন দিয়ে চলে পোড়ানোর কাজ। তার পাশেই চলে তাস খেলা, আড্ডা আর গানের আসর। বারবিকিউ পার্টি আসলে একটা উপলক্ষ মাত্র। প্রতিদিনের নানা ব্যস্ততার ভিড়ে এসব উৎসব রোজকার ক্লান্তি দূর করে। তৈরি হয় বন্ধন, বোঝাপড়া, ভালোবাসা। পরিবারের বাইরে তৈরি হয় আরও একটি পরিবার। সে রাতে যারা ছিলাম; ইমরান হোসাইন, আশিষ হাওলাদার, দীপঙ্কর শীল, সাইফুল ইসলাম, মোহাইমিনুল ইসলাম শাকিল,বায়েজিদ খান রাজিব, রাজিব মোল্লা, রুবেল মিয়া, খায়রুল বাসার নাঈম, মো: সুজন, আশীষ শীল,আবু সালেহ সজীব, নাহিদুর রহমান,সজল চন্দ্র মিত্র, জাহিদুল ইসলাম লিমন ও জুয়েল মিয়া। জীবনের অনেক বছর পার হয়ে গেলেও আমাদের বন্ধুত্ব সে রকমই রয়ে গেছে। সেদিনের সারা দিনের আড্ডায় আমরা হারানো বন্ধুদের কথা মনে করেছি। পুরোনো দিনের স্মৃতি আকাশে আমাদের ডানা মেলেছে। বারবার মনে হয়েছে আর একবার আয় রে সখা প্রাণের মাঝে আয়। আমরা অনুভব করেছি, বন্ধুত্বের চেয়ে পৃথিবীতে মূল্যবান কিছুই নেই। এই ব্যস্ততার জীবনে মাঝেমধ্যেই দরকার এ রকম ছোটবেলার বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, হারানো দিনে ফিরে যাওয়া, পুরোনো স্মৃতি রোমন্থন করা। মাঝেমধ্যে প্রাণে বন্ধুত্বের পরশ নেওয়ার প্রয়োজন জীবনে একঘেয়েমি কাটানোর জন্য। শরীরের মনের এক দিনের বিশ্রাম আমাদের প্রতিদিনের কাজকে সহজ করে, আমাদের প্রতিদিনের বেঁচে থাকা হবে আনন্দময়। যেমন নজরুল বলে গেছেন, ‘কর্মে যদি বিরাম না রয় শান্তি তবে আসতো না/ ফলবে ফসল—নইলে নিখিল নয়ন-নীড়ে ভাসতো না।’

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: