নৌকার মাঝি অসুস্থ, বেকায়দায় আ’লীগ

প্রকাশিত: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০১:৩৪ এএম
অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার টিকেট পেলেন আব্দুস ছালাম ওরফে পিঠা সালাম। কিন্তু জেলা আ’লীগের পক্ষ থেকে তৃনমুল জরিপে বর্তমানে মেয়ের শহিদুল ইসলাম শাহীনের নাম এককভাবে পাঠানো হয় মনোনয়ন বোর্ডের কাছে। তবে ১৩ জানুয়ারি বুধবার বাংলাদেশ আ'লীগ স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের অনুষ্ঠিত সভায় আব্দুস ছালামকে মনোনয়নের সিদ্ধান্ত ঘোষণা হয়। পরবর্তীতে রাত ৯ টার দিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানান। মনোনয়ন পাওয়ার দুই দিনের মধ্যে নৌকার মাঝি আব্দুস সালাম ব্রেইন স্ট্রোক করে কথাবার্তা চলাফেরা প্রায় বন্ধ বলে জানান এলাকাবাসী এতে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা বেকাদায় পরেছে ও আব্দুস সালামের পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট মো: রাজিব। প্রশ্ন হলো এরুপ অবস্থায় নৌকার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীকের প্রার্থী হয়ে সে কিভাবে নির্বাচনী বৈতরণী পার করবে? এমন ভাবনায় উদ্বিগ্ন স্থানীয়রা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, ভাই আ'লীগ থেইকা যারে নৌকা মার্কা দিছে। ওনি তো প্যারালাইসিস হইয়া বাসায়, নির্বাচন করবো কেমনে। শুনছি তার নাকি ব্রেইন স্ট্রোক করছে। ঠিকমতো কথাবার্তা বলতে পারেনা। দুইজনে ধইরা ওনারে চলাইতে হয়। এরুপ একজন লোক মেয়ের হইলে পৌরসভা চালাইবো কেমনে? আর এই সুযোগে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মিজানুর রহমান ধানের শীষের প্রচারণা পুরো দমে চালাইছে। শুনতাছি জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক মনসুর আহমেদ কালামের নাকি আত্মীয় হয় ওই বিএনপির প্রার্থী। তাইতো প্রচার প্রচারণায় বিএনপি এখন মাঠে। এদিকে তাদের চাপে বর্তমান মেয়ের স্বতন্ত্র প্রার্থী শহিদুল ইসলাম শাহিনের কোন পোষ্টার লাগাতে পারেনি কিংবা প্রচারণা করতে পারছেনা কর্মী সমর্থকরা। এই যে কয়দিন আগে ২ নং ওয়ার্ডের বর্তমানে কাউন্সিলর ও আসন্ন নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী পৌর আ'লীগের নেতাকে বিএনপি ও কালামের লোকজন তার তেলের ফ্যাক্টরিতে গিয়ে মাইরা রক্তাক্ত করছে। এখনো সে ঢাকা চিকিৎসা নিচ্ছে। আমার মনে হয়, পৌরসভায় যা আরম্ভ হইছে বিএনপিরে পাশ করানের লাইগা এমন চলতাছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রার্থীর এলাকায় একধরনের শোকের মাতম। আনন্দ উল্লাসের কোন বালাই নেই। তার বাড়িতে প্রবেশ করার পর ৫/৭ জন মহিলা প্রচারণা কারিদের দেখা গেলো। আর অফিস রোমে ছিলো কয়েকজন কর্মী। এমতাবস্থায় দেখা গেলো অফিসের পেছনে নতুন নির্মানাধিন বিল্ডিংয়ের নিচে চুল-শেইফ কামাচ্ছেন নৌকার প্রার্থী আব্দুস সালাল। কিন্তু সেই চেয়ারটিতে যেনো একটি নিথর দেহ পরে আছে। ছোট একটি ছেলে তাকে ধরে বসানো ঘোরানোর কাজ করছে আর নাপিত তার কর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘক্ষণ বসে থেকে তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু পারছিলাম না। এমতাবস্থায় একজনকে ডেকে বল্লাম চেয়ারম্যান প্রার্থীকে গিয়ে বলেন সাংবাদিক এসেছে কথা বলবে। ওনি তৎক্ষণাৎ তার কাছে গিয়ে বল্লেন আপনার সাথে কথা বলবে সাংবাদিক এসেছে। তিনি আলতো চোখ খুলে কি যেনো বল্ছেন ফিস ফিস করে। বুঝা গেলো তার কথাবার্তায় ও জড়তা রয়েছে স্ট্রোকের কারনে। কিছুক্ষণ পরপরই কেউ না কেউ আসছেন আমাদের অফিস কক্ষে নিয়ে বসানোর জন্য। এ যেনো এক লুকোচুরি খেলা। কিন্তু আমরা কয়েকজন সেখান থেকে নড়ছি না। কারন, আমরা পূর্বেই ইনফরমেশন পেয়েছিলাম নৌকার মনোনিত প্রার্থীর প্যারালাইসিস হয়ে গেছে। তাই এই প্রার্থী সশরীরে প্রচারনা থেকে বিরত রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী প্রচারণা চালাচ্ছে পুরোদমে। কিছুক্ষণের মধ্যেই চেয়ারম্যান প্রার্থী নৌকার মাঝি আব্দুস সালামের চুলে কলব দেওয়াও শেষ। একপর্যায়ে দুইজন যুবকের কাঁধে ভর করে শয়ন কক্ষে যাওয়ার চিত্র দেখে বোঝার বাকি রইলো না আ'লীগ প্রার্থী আব্দুস সালাম ব্রেইন স্ট্রোক করে প্যারালাইসিস হয়ে গেছে। সাভাবিক ভাবেই এই চিত্র দেখে একজন সাংবাদিক মূহুর্তটি ক্যামেরা বন্দী করে ফেলবে। তাই করা হলো। কিছুক্ষণপর কয়েকজন যুবকসহ প্রার্থীর পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট মো: রাজিব আমাদের কাছে এসে জানতে চান। আমরা ভিডিও কিংবা ছবি তুলেছি না কি। ছবিগুলো ডিলেট করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। এবং কোথাও যাতে প্রচার না হয় সেই বিষয়টিও বার বার বলেন। তিনি বল্লেন প্রার্থী আপাতত অসুস্থ তিনি এখন কোন কথা বলতে পারবে না। আপনাদের কোন তথ্য প্রয়োজন হলে আমার কাছ থেকে জানতে পারেন। মো: রাজিব বলেন নৌকার মার্কা পেয়েছে এই খবর শুনে নাকি তিনি আনন্দে স্ট্রোক করেছে। পরবর্তীতে তাকে ইমার্জেন্সি ঢাকার একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে নেওয়া হয়। ব্রেইন স্ট্রোকের কারনে সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসায় রাখা হয়। এখন আগের চাইতে ভালো। বাড়িতে বিশেষভাবে চিকিৎসার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। তিনি দ্রত সুস্থ হয়ে যাবেন। তবে প্যারালাইসিস এর বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি। নির্বাচনী প্রচারনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমাদের প্রচারণা চলছে। নৌকার প্রার্থীর পক্ষে মনসুর আহম্মেদ কালাম ও শরীফ ভাই কাজ করছে। খুব দ্রত আমাদের প্রার্থীও প্রচারনায় বের হবেন। মানুষের কাছে যাবেন। নৌকার প্রার্থী আব্দুস সালামের এক কর্মী জানান, সালাম সাহেব কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার চিন্তাভাবনা করেছিলেন। নৌকা পাবেন এমন চিন্তা তার ছিল না। নৌকা প্রতীক পাওয়ার দুই থেকে তিন দিনের মাথায় তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। গত ২৭ তারিখ থেকে তাকে ঢাকার ধানমন্ডিস্থ পপুলার চিকিৎসা দেওয়া হয়। এখন বাসায় থেরাপিসহ চিকিৎসার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আব্দুস সালামের সমন্বয়ক মনিরুজ্জামান শরিফ বলেন, আব্দুস সালাম নৌকা প্রতীক পাওয়ার পর থেকেই নৌকার পক্ষে প্রচার প্রচারণা, উঠান বৈঠক চলছে। সালাম সাহেব কিছুটা অসুস্থ ছিলেন। এখন তিনি প্রায় অনেকটাই সুস্থ। দুই-একদিনের মধ্যে তিনি নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় নামবেন। বিএনপির প্রচার প্রচারণার বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপি তো মাঠেই নেই, তারা প্রচার করবে কিভাবে? নৌকার প্রার্থী আব্দুস সালামের অসুস্থতা ও নৌকার প্রচার-প্রচারণা বিষয়ে জানতে মিরকাদিমে নৌকার নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়ক,জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক মনসুর আহম্মেদ কালামের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। উল্লেখ্য আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি মিরকাদিম পৌরসভা নির্বাচনে ৪ জন প্রার্থী মেয়র পদে ও ৪৭ জন সংরক্ষিত নারী ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করবেন। মেয়র প্রার্থীদের প্রতীক হচ্ছেন আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী হাজী আবদুস সালাম নৌকা, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মিজানুর রহমান ধানের শীষ, খন্দকার মোহাম্মদ হোসেন রেনু বাইসাইকেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান মেয়র শহিদুল ইসলাম শাহিন মোবাইল ফোন প্রতীক পেয়েছেন।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: