শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কি খুলছে?

প্রকাশিত: ১৯ মার্চ ২০২১, ০৬:২৭ এএম
পিয়াস সরকার: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটির এক বছর পেরিয়ে গেছে। এই এক বছরে কয়েক দফা ছুটি বাড়িয়ে ৩০শে মার্চ স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু এরইমধ্যে করোনা পরিস্থিতি ফের খারাপের দিকে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও পরামর্শ দিয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলার। এ অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে নতুন করে সংশয় তৈরি হয়েছে। করণীয় ঠিক করতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন সংশ্লিষ্টরা। সর্বশেষ বৈঠকে সপ্তাহখানেক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩০শে মার্চেই দেশের সকল স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা (কওমি বাদে) ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার কথা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে জোর দিয়ে নির্দেশনা জারিও করা হয়েছে রোববার। সেখানে বলা হয় আন্তঃমন্ত্রণালয়ের গৃহীত বিষয়াদী সঠিকভাবে পালন করতে হবে। নির্দেশনায় বলা হয়, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে শিক্ষক ও কর্মচারীদের ৩০শে মার্চের মধ্যেই টিকা প্রদান করবে। প্রতিষ্ঠানে কোনো মেরামতের প্রয়োজন হলেও তা এই সময়ের মধ্যেই করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর মাধ্যমিক/সমমানের শিক্ষার্থীদের ৬০ কর্মদিবস ও এইচএসসি/সমমানের পরীক্ষার্থীদের ৮০ দিনের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেয়া হবে। পঞ্চম, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ক্লাস করবে সপ্তাহে ৬ দিন। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা দুইদিন ও অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে একদিন করে ক্লাস পরিচালিত হবে। এদিকে গত সোমবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টি রিভিউ করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে। এটাকে রিভিউ করা হতে পারে। গত বুধবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ১২ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। এই সুপারিশের মধ্যে বলা হয়েছে বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধই রাখতে হবে। অন্যান্য কার্যক্রমও সীমিত রাখতে হবে। যেকোনো পাবলিক পরীক্ষাও বন্ধ রাখতে হবে। যদিও এরই মাঝে আজ শুক্রবার বিসিএস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস-২০২১ উপলক্ষে গত বুধবার আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনার কারণে শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না, যা অত্যন্ত কষ্টের। ছোট্ট সোনামণিদের এটাই বলতে চাই তোমরা তোমাদের জীবনটাকে সুন্দর করো, পড়াশোনা শেখো। করোনার প্রাদুর্ভাব কেটে যাবে এবং আমরা তখনই স্কুল খুলে দেবো। এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ৩০শে মার্চ খোলার কথা থাকলেও শনিবার থেকে ফের অ্যাসাইন্টমেন্ট দিতে যাচ্ছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। শিক্ষার্থীদের সশরীরে ক্লাসে ফেরানোর পরিবর্তে অনলাইনে এবং সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের আলোকে অ্যাসাইনমেন্টভিত্তিক পাঠ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট প্রকাশ করা হয়েছে। মাউশির ওয়েবসাইট থেকে এই অ্যাসাইনমেন্ট সংগ্রহ করতে পারবে সবাই। গত বছরের মতো এবারো নির্ধারিত কাজের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে। মূল্যায়ন হবে ‘অতি উত্তম, উত্তম, ভালো ও অগ্রগতি প্রয়োজন’ ইত্যাদি। গতকাল মাউশি থেকে আরেকটি নির্দেশনা জারি করা হয়। এতে বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা অবস্থায় কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মার্চপাস্ট ও র‌্যালির আয়োজন করেছে। যা শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এ ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। জাতীয় পরামর্শক কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী নমুনা শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশের নিচে নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার চিন্তা করা হবে। তবে বর্তমানে শনাক্তের হার আটের অধিক। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে। এদিকে অভিভাবক ফোরামও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনই না খোলার আবেদন করেছেন। গত সোমবার এক বিবৃতিতে ফোরাম জানায়, দেশে করোনা সংক্রমণ ফের ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এ অবস্থায় ঘোষিত তারিখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করছে। তাই আমরা জাতীয় পরামর্শক কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে স্কুল-কলেজ খোলার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, করোনার সংক্রমণের হার এভাবে বাড়তে থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আপাতত খোলার সম্ভাবনা কম। তবে বিশেষ বিবেচনায় দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য সীমিত পরিসরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, সামনে রমজান মাস। এভাবে চলতে থাকলে ২৪শে মে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া হতে পারে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, এখন পর্যন্ত পূর্বের ঘোষিত তারিখেই খোলার চিন্তা রয়েছে। তবে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারী সকলের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টিও মাথায় রাখছি। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সূত্র: মানবজমিন।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: