মিয়ানমার সেনাদের ছোঁড়া গুলিতে বাবার কোলে খেলতে থাকা শিশু নিহত

প্রকাশিত: ২৪ মার্চ ২০২১, ০৫:০৮ পিএম
মিয়ানমারে বিক্ষোভকারীদের প্রাণহানির ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে কথা বলেন সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জ মিন টুন। তিনি বলেন, নিহতরাও বর্মি নাগরিক। ফলে তিনি তাদের জন্য বেদনা অনুভব করেন। ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থানের পর জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে দমন পীড়নের কারণে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে রয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। স্থানীয় একটি পর্যবেক্ষণ গ্রুপের হিসাবে, বিক্ষোভকেন্দ্রিক সংঘাতে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৬১ জন নিহত হয়েছে। মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের শহর মান্দলেতে বাবা-মা ও একমাত্র ভাইয়ের সঙ্গে থাকতো সাত বছরের শিশু খিন মিও চিট। মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) বাবার কোলে বসে মনের আনন্দে খেলছিলো খিন। কিন্তু বাবার কোলে থেকেও খিন বাচঁতে পারেনি। মিয়ানমার সেনাদের ছোঁড়া গুলিতে শিশুটির মাথা ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায়। পরিবারের সদস্যদের চিৎকারে উদ্ধারকর্মীরা সেখানে গিয়ে খিন মিওকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই মৃত্যু হয় খিনের। নিহত খিন মিওয়ের পরিবার জানিয়েছে, 'কয়েকদিন আগে খিন মিও এর বড় ভাইকে (১৯) গ্রেফতার করেছে সেনারা। গ্রেফতারের পর তার কোনো সন্ধান মিলছে না। এর মধ্যেই মঙ্গলবার বাড়িতে বাবার কোলে বসে থাকা অবস্থায় ৭ বছরের শিশুকে হত্যা করল সেনারা। গত ১ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে সামরিক জান্তা সরকারের ক্ষমতাগ্রহণের পর এর প্রতিবাদে বিক্ষোভে অংশ নিয়ে যারা নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে খিন মিও চিট সবচেয়ে কমবয়সী। দেশটির সংবাদমাধ্যম ‘মিয়ানমার নাও’ এর বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, মিয়ানমার সেনারা তার বাবাকে গুলি করতে চেয়েছিল। তবে তা গিয়ে লাগে বাবার কোলে বসে থাকা খিন মিও চিটের মাথায়। ওই সময় তারা নিজেদের বাড়িতেই বসেছিল। তবে এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর কোনো বক্তব্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। শিশু খিন মিও চিট নিহতের পর এক বিবৃতিতে সেভ দ্য চিলড্রেন বলেছে, ৭ বছরের একজন মেয়ে শিশুকে এভাবে হত্যার ঘটনা ভয়াবহ। একদিন আগে মান্দলে শহরে ১৪ বছরের এক কিশোরকেও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সেভ দ্য চিলড্রেন প্রশ্ন তুলেছে, বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে বসেও যদি তাদের নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করতে হয়, তাহলে তারা নিরাপদ কোথায়? এভাবে শিশুদের হত্যার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হচ্ছে যে, দেশটির নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা মানুষের জীবনের মূল্য দিতে চরম অবজ্ঞা করছে। নির্মমভাবে শিশু খিন মিও হত্যার কিছুক্ষণ আগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর তরফ থেকে দেশটিতে চলমান বিক্ষোভে হতাহতদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছিল। তবে সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র ওই বিবৃতিতে বলেছিলেন, দেশের নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য বিক্ষোভকারীরাই দায়ী। তারা সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগ করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। পশ্চিমা দেশগুলো শুরু থেকেই মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান ও সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে একে অপরের সমালোচনা করা থেকে বিরত থাকা আসিয়ান জোটের সদস্যরাও মুখ খুলতে শুরু করেছে। ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো আঞ্চলিক নেতা হিসেবে সবচেয়ে কঠোর মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, সহিংসতা অবশ্যই বন্ধ হতে হবে। আসিয়ান সভাপতিকে জরুরি বৈঠক করার আহ্বান জানাবেন বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সমঝোতার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে যে চাপ দেওয়া হচ্ছে, তার তোয়াক্কা করছে না জান্তা সরকার। উল্টো সেনাসদস্যদের বিদেশি হুমকি মোকাবিলার জন্য উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছে তারা। সোমবারও গভীর রাত অব্দি চলে নিরাপত্তা বাহিনীর ধরপাকড়। এদিন দেশটির সেনাপ্রধানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: