লকডাউন বাস্তবায়নে কঠোর হবে পুলিশ

প্রকাশিত: ০৬ এপ্রিল ২০২১, ০৬:৫১ পিএম
নভেল করোনাভাইরাস। চীনের উহানে প্রথমে শনাক্ত হওয়া এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের প্রায় সব দেশ ও অঞ্চলে। এতে প্রতিনিয়ত মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও। এছাড়া দেশের বৈশ্বিক করোনা সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরতে লকডাউনসহ অন্যান্য বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে অন্য সরকারি সংস্থার মতো মাঠে নেমেছে পুলিশ। সরকারি নির্দশনা বলবৎ রাখতে প্রথমে বলপ্রয়োগ না করে বরং  জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। গতকাল প্রথমদিন রাজধানীসহ দেশের বড় শহরগুলোর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে জনসচেতনা ও মাস্ক পরিধানে জোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে অনুরোধে কান না দিলে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে প্রয়োজনে পুলিশ কঠোর হতে বাধ্য হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। এদিকে মহামারী প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত সাত দিনের সীমিত লকডাউন (বিধিনিষেধ) গতকাল সোমবার থেকে রাজধানীর ঢাকাসহ সারাদেশে শিথিলভাবে শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সাম্প্রতিক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ১৮ দফা ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ১১ দফা নির্দেশনা যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। এছাড়া করোনার ঊর্ধ্বগতিতে সরকার ঘোষিত এক সপ্তাহের টানা লকডাউন শুরু হয়েছে। লকডাউন বিষয়ে সরকারি আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন সরকার। জরুরি সেবা বলতে যেগুলো বুঝায় সেগুলো ছাড়া বাকি সবকিছুই পরবর্তী নির্দেশ না আশা পর্যন্ত বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। তবে লকডাউনের চলাকালিন সাধারণ মানুষের চলাচল বেশ উল্লেখযোগ্য লক্ষ্য করা গেছে। রাজধানীসহ সারা দেশের ব্যাবসায়ীরা আন্দলন চালাচ্ছে ,কেউ অফিসগামী, কেউ জরুরি সেবা নিতে, আবার নানাকাজে পায়ে হেঁটে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন। গণপরিবহন বন্ধ থাকালেও কিছু গণপরিবহন রাস্তায় যাত্রী উঠাতে দেখা গেছে। গণপরিবহণ ছাড়া অন্যান্য যানবাহন স্বাভাবিকভাবেই চলেছে সড়কে। নজর রাখছেন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীও। সকাল সাড়ে ১১টার পর থেকে শাহবাগে লকডাউনের নিয়ম অমান্যকারীদের ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানা করতেও দেখা গেছে। ফলে সব মিলিয়ে এমন ঢিলাঢাল লকডাউনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে জনসাধারণদের মাঝে। কিন্তু এত কিছুর মধ্যেও পুলিশের সকল স্থাপনায় প্রবেশের ক্ষেত্রে ‘নো মাস্ক নো এন্ট্রি’ নীতি কঠোরভাবে বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একইসাথে পুলিশের সব স্থাপনা নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করার জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ প্রধান। তবে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কঠোর বিধিনিষেধ অনেক এলাকায় মানা হচ্ছে না। এক্ষেত্রে পুলিশের অবস্থানও ঢিলেঢালা দেখা যায়। এছাড়া এসব এলাকার বিভিন্ন অলিগলিতে আগের মতো দোকানপাটসহ সবকিছু খোলা রয়েছে। এক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যদের তেমন কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও রংপুর শহরেও একই ধরনের চিত্রগুলো বলে স্থানীয় সংবাদ কর্মীরা জানিয়েছেন। তবে কঠোর নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিনের কার্যক্রমের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রথম দিন হওয়াতে তারা নগরবাসীকে নিয়ম মেনে চলার জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন। এরপরও যদি মানুষ আইন না মেনে চলেন, তাহলে পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। উক্ত প্রসঙ্গে ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা মাইকিং ও টহল পার্টির মাধ্যমে মানুষকে নিয়ম মেনে চলার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। পুলিশ বলপ্রয়োগ করতে চাচ্ছে না। ফলে অনেক জায়গায় নিয়ম মানা হয়নি। তবে জনগণের স্বার্থেই প্রয়োজনে আমরা কঠোর হতে বাধ্য হব। একই বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার (ডিএমপি) মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকার বিভিন্ন এন্ট্রি পয়েন্টে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়েছে। শহরের ভেতরে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টেও চেকপোস্ট করা হচ্ছে। চেকপোস্টের মাধ্যমে সরকারের জারি করা প্রজ্ঞাপনে দেয়া নির্দেশনাগুলো পালনে কাজ করবে পুলিশ। ডিএমপি কমিশনার বলেন, করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে হলে সবাইকে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে ও সামাজিক দূরত্বসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। অন্যথায় পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি আইজিপির নির্দেশনা, প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস সংক্রমণে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরকারি সব বিধিনিষেধ ও নির্দেশনা যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশের আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ। নির্দেশনা নিয়ে আইজিপি আরো বলেন, শুধু সরকারের নির্দেশনাসমূহ প্রতিপালনে বলপ্রয়োগ নয় বরং জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণের ওপর জোর দেন আইজিপি। গত বছরের মতো এবারো খোলা বা উন্মুক্ত স্থানে বাজার বসার ব্যবস্থা করতে হবে। যেসব দোকানপাট খোলা থাকবে। সেখানে পূর্ণাঙ্গরূপে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে। উল্লেখ্য, দেশ ও দেশের মানুষের ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে মাঠে রয়েছে পুলিশ।  লকডাউন বাস্তবায়নকরণে  দরকার হলে আরো কঠোর হবে পুলিশ।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: