নিউমার্কেট কর্মচারীদের মনে হাহাকার, কপালে চিন্তার ভাঁজ

প্রকাশিত: ২২ এপ্রিল ২০২১, ০৮:২৫ পিএম
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। মার্চের শুরুতে এসে যা তীব্র আকার ধারণ করে। সংক্রমণ ঠেকাতে ৫ এপ্রিল থেকে প্রথম দফায় সাত দিনের জন্য 'কঠোর বিধিনিষেধ' শুরু হয়। ১১ এপ্রিল শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এই বিধিনিষেধ চলে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত। এরপর ১৪ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় 'সর্বাত্মক লকডাউন' ঘোষণা করে সরকার, যা ২১ এপ্রিল পর্যন্ত চলার কথা থাকলেও এর পূর্বে একই শর্তে আরও এক সপ্তাহ লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। যা আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। আর এতেই দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ব্যবসায়ীদের কপালে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, 'সামনে ঈদ। সারাবছর কেনাকাটা যাই হোক, ঈদের সময় তা পুষিয়ে নেয়া যায়। সারাবছর করোনার কারণে তেমন মুনাফা হয়নি। কিন্তু চলমান টানা লকডাউনে ব্যবসায়ে ধস নামার আশঙ্কা ভর করেছে এখন তাদের মনে।' যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, 'জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে সরকার ঈদের আগে লকডাউন শিথিলেরও চিন্তাভাবনা করছে।' দুই ঈদে ব্যবসায়ীরা নিজেদের ব্যবসায় প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করে থাকেন। অনেকে ব্যাংক থেকে ঋণ নেন, আবার অনেকে তাদের আত্মীয় স্বজনদের নিকট থেকে টাকা নিয়ে ব্যবসা সাজান। রাজধানীর নিউমার্কেট এক বিপনি বিতানে কাজ করেন আব্দুর রহিম। তিনি জানান, তিনি যে দোকানে চাকরি করেন সেখানকার মালিক গত বছর দুই কোটি টাকা ঋণ করেছে। এবার ঈদকে সামনে রেখে আরও চল্লিশ লাখ টাকা আত্মীয় স্বজনদের নিকট থেকে ধার করেছে। এভাবে লকডাউন চললে মালিক কিভাবে বাঁচবে আর কর্মকর্তারা কি করে চলবে? তিনি বলেন, 'করেনার কারনে সারা বছর ব্যবসার অবস্থা যাই ছিলো না কেন, ঈদকে সামনে রেখে সেটা পোষানোর একটা চিন্তা ছিল। আর আমরাও কিছু বোনাস বেতন পেয়ে একটু ভালো করেই ঈদ কাটাতে পারতাম, কিন্তু এই লকডাউনের কারনে সব কিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন ঢাকাতে থাকাটাই কষ্টকর হয়ে যাবে।' আরেক দোকান কর্মচারী লিটন জানান, গত বছর লকডাউনে তার চাকরি চলে যায়। এরপর অন্যখানে চাকরি নেন। পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক হলে নিউমার্কেটের ওই দোকানে তাকে ফের চাকরি দেন। এখন লকডাউনের কারনে দোকান বন্ধ থাকায় তার কপালে আবারও চিন্তার ভাঁজ। লিটন বলেন, 'আমরা ঈদের সময় আশায় থাকি বেতন, বোনাস নিয়ে বাড়ি ফিরবো। কিন্তু লকডাউনের কারনে সব এলোমেলো হয়ে গেল। এখন বোনাস দূরে থাক, বেতনও যদি না পাই কিভাবে চলবে পরিবার!' নিউমার্কেটের এক ব্যবসায়ী মো. বাবু বলেন, 'আমরা পাইকারি ব্যবসায়ীরা ঋণ করে ঈদের জন্য কোটি টাকার জামা-কাপড় বানিয়ে রেখেছি। লকডাউনের কারণে সারাদেশের খুচরা ব্যবসায়ীরা সেসব না নিতে পারলে এই কাপড় দিয়ে আমরা কী করবো? গত বছরও মার্কেট বন্ধ থাকার কারণে দোকানের কর্মচারীদের বেতন-বোনাস দিতে পারিনি। এবারও দিতে পারবো কি না, জানি না। ওরা কিভাবে বাঁচবে, আমরাই বা বাঁচবো কিভাবে?' নিউমার্কেটের আরও এক দোকান মালিক বলেন, 'লকডাউনের কারনে আমরা তো একেবারেই শেষ হয়ে গেছি। স্টাফদের বেতন, কারেন্ট বিল, দোকান ভাড়া সব মিলিয়ে এমন এক অবস্থার মধ্যে আছি যা বলে বুঝানো যাবেনা। যদি মার্কেট খুলে দিত আর ঈদ পর্যন্ত মোটামুটি কিছু বিক্রি করতে পারতাম, তাহলে হয়তো কিছুটা সামাল দেয়া যেত।'

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: