এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা তিন পদ্ধতিতে নেয়ার প্রস্তাব

প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০২১, ০৪:৫৮ এএম
চলমান করোনা পরিস্থিতে ভিন্ন পদ্ধতিতে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা নিতে তিন পদ্ধতির প্রস্তাব করা হয়েছে। অনলাইনের মাধ্যমে পরীক্ষা নেয়া, সমমান দুই বিষয়কে একত্রিত করে বিষয় কমিয়ে সশরীরে পরীক্ষা নেয়া ও শুধু বিভাগভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের পরীক্ষা নেয়া এই তিনটি প্রস্তাব দিয়েছে আন্তঃশিক্ষা সমন্বয়ক বোর্ড। এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি বেশকিছু প্রস্তাব পর্যালোচনা শেষে বাস্তবসম্মত প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। সর্বশেষ প্রস্তাবগুলো চূড়ান্ত করবে মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনা মহামারির কারণে অনলাইনে ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শেষ করে টেস্ট পরীক্ষা নেয়া হতে পারে। একইসঙ্গে আন্তঃশিক্ষা সমন্বয় বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক নেহাল আহমেদকে সমন্বয়ক করে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। গত মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) কমিটির সদস্যরা এসএসসির পরীক্ষা কিভাবে নেওয়া যেতে পারে সেজন্য ভার্চুয়ালি বৈঠক করেন। কমিটির সদস্যরা পর্যালোচনা করে একাধিক বাস্তবসম্মত প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। মন্ত্রণালয় থেকে যে প্রস্তাব চূড়ান্ত করবে সেটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। তবে প্রথমে অনলাইনে প্রতিটি বিদ্যালয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শেষ করে একটি টেস্ট পরীক্ষা আয়োজন করতে বলা হবে। তাতে সফল হলে উল্লেখিত তিন প্রস্তাবের যেকোনো একটি পদ্ধতিতে এসএসসি পরীক্ষার আয়োজন করা হতে পারে বলে জানা গেছে। সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শেষ করে এ পাবলিক পরীক্ষা নেয়া হবে। সেখানে অনলাইন মাধ্যমকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তার সঙ্গে বিষয় কমিয়ে পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাবও করা হয়েছে। আন্তঃশিক্ষা সমন্বয়ক বোর্ড থেকে জানা যায়, চলমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ২০২১ শিক্ষাবর্ষের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা ঝুঁকিমুক্তভাবে কীভাবে আয়োজন করা যায়, সে সংক্রান্ত প্রস্তাবনা তৈরিতে আন্তঃশিক্ষা সমন্বয় বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক নেহাল আহমেদকে সমন্বয়ক করে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিতে রয়েছেন, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, বুয়েট শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের একজন সদস্য, একাধিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, টেলি কমিউনিকেশনের প্রতিনিধি, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এবং মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা। কমিটির একাধিক সদস্যের কাছ থেকে জানা যায়, সভায় অনলাইনসহ তিনটি পদ্ধতিতে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন কমিটির সদস্যরা। সে জন্য সকল বিদ্যালয় অনলাইনে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শেষ করবে। সিলেবাস শেষ হলে শিক্ষার্থীদের একটি টেস্ট পরীক্ষা নেয়া হবে। তাতে সফল হলে অনলাইনের মাধ্যম এ পরীক্ষার আয়োজন করা, পরীক্ষার্থীর সমমান দুই বিষয়কে একত্রিত করে বিষয় কমিয়ে সশরীরে পরীক্ষা নেয়া এবং বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের শুধু বিভাগভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের পরীক্ষা আয়োজন করতে বলা হবে। যেমন বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীর জন্য রসায়ন, পদার্থ বিজ্ঞান ও জীব বিজ্ঞান পরীক্ষা নিয়ে জিপিএ নির্ধারণ করে এসএসসির সার্টিফিকেট দেয়ার প্রস্তাব করা হবে। এভাবে কমন বিষয়গুলো বাদ দিয়ে মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষা নিতে প্রস্তাব করা হবে। যে কয়টি বিষয়ের উপর পরীক্ষা নেয়া হবে তার ভিত্তিতে জিপিএ-৫ নির্ধারণ করে সার্টিফিকেট দেয়ার প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তবে সকল কিছু চূড়ান্ত করার আগে পরীক্ষামূলক কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাইলটিং করে তাতে সফলতা আসলে সেটি সকল বোর্ডের আওতাভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কার্যকর করা হবে। জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা আয়োজনে একাধিক প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে। তার মধ্যে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়াকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ জন্য দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট স্থাপন, শিক্ষার্থীদের হাতে ডিভাইস পৌঁছে দেয়া, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে সুপারিশ করা হবে। এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম আমিরুল ইসলাম বলেন, করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে বা চলমান পরিস্থিতিতে কীভাবে এসএসসি পরীক্ষা আয়োজন করা যায় সে বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পরামর্শ বা প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কমিটির সদস্যরা সভা করেছে। আরও সভা করে একাধিক প্রস্তাব পাঠানো হবে। তিনি বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে কীভাবে পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব হবে সেসব বিষয় বিবেচনা করে ঝুঁকিমুক্ত ও বাস্তবসম্মত প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। যেহেতু চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা এক বছর পিছিয়ে থাকায় সিলেবাস শেষ করতে পারেনি। সেজন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শেষ করে এ পাবলিক পরীক্ষা নেয়া হবে। সেখানে অনলাইন মাধ্যমকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তার সঙ্গে বিষয় কমিয়ে পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাবও করা হতে পারে। এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী, বিদ্যালয় খোলার পর এসএসসি পরীক্ষার্থীদের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শেষ করতে ৬০ কর্মদিবস ক্লাস নেয়া হবে। এরপর আরও ১৫ দিন সময় দিয়ে তবেই এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। সব মিলিয়ে আগস্টের শেষে মাধ্যমিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, যেভাবে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে নতুন করেও ভাবতেও হতে পারে ছুটির বিষয়ে। এরই মধ্যে এ বছরের পরীক্ষার জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ওই সিলেবাসের ওপরই এসএসসির প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হবে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ক্লাস না নিয়ে কোনোভাবেই এসএসসি পরীক্ষা নেয়া হবে না। সারাদেশে এবার প্রায় ২৩ লাখ শিক্ষার্থী এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অবতীর্ণ হবে। এর মধ্যে ঢাকা বোর্ডের রয়েছে প্রায় পাঁচ লাখ। এখনও ফরম পূরণ চলছে। লকডাউনের কারণে সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা সভা করে বেশ কিছু বিষয়ে মৌখিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আরও কয়েকটি সভা করে একাধিক প্রস্তাব তৈরি করে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় থেকে যেটি চূড়ান্ত করবে সেটি বাস্তবায়ন করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, অটোপাস দেয়ার কোনো সুযোগ নেই, পরীক্ষা দিয়ে এসএসসি পাস করানো হবে। তবে কি পদ্ধতিতে এ পরীক্ষা নেয়া হবে সে বিষয়ে শিক্ষা বোর্ড থেকে প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠনও করা হয়েছে। তাদের প্রস্তাবমতো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: