মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা মামলা

প্রকাশিত: ০৯ মে ২০২১, ০৮:৪০ পিএম
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কাটার ঘটনায় মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা মামলা। আজ রবিবার রোববার (৯ মে) উদ্যানের গাছ কাটা বন্ধ করতে আদালতের নির্দেশ থাকলেও সেটি অমান্য করায় এ আবেদন করেন আইনজীবী মনজিল মোরশেদ। এদিকে গাছ কেটে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে কংক্রিটের স্থাপনা তৈরিকে অযৌক্তিক বলছেন পরিবেশবাদীরা। বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হলেও কাটার জন্য চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে আরও অনেকগুলো গাছকে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে বলা হয় নগরীর ফুসফুস। ইট কাঠ ও কংক্রিটের ভিড়ে কোণঠাসা উদ্যানটি পাখিদের অভয়ারণ্যও। যে গাছের কারণে উদ্যানটি ঢাকার ফুসফুস ও পাখিদের অভয়ারণ্য নিষ্ঠুরভাবে সেই গাছগুলোকেই নিধন করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত কতো গাছ কাটা হয়েছে আর কতো কাটা হবে নেই তার সঠিক হিসাবও। এখানে মোটা অংকের অর্থের প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয় গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। শত শত কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করতেই তৈরি হচ্ছে ৭টি রেস্টুরেন্ট, শৌচাগারসহ নানা স্থাপনা। দমবন্ধ করা কংক্রিটের যে জঞ্জাল থেকে মুক্তি পেতে এখানে আসা সেই কংক্রিটেই ঢেকে যাচ্ছে সবুজ বেষ্টনীটি। আগে গাছ রেখে হাঁটার পথ তৈরি করা হলেও এখন সেই নীতিতে নেই কর্তৃপক্ষ। তাই গাছ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে এমন অজুহাতে চলছে নিধনযজ্ঞ। বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ১৬১০ সালে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে সুবেদার ইসলাম খাঁর সময়ে ঢাকা নগরী প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর যে উদ্যান গড়ে ওঠে তাই আজকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও রমনা পার্ক। ব্রিটিশ শাসনামলে এটি রেসকোর্স ময়দান নামে পরিচিতি পায়, পাকিস্তান আমলেও ছিল তাই। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এর নাম সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হয়, আরেক অংশ হয় রমনা পার্ক। এই রেসকোর্স ময়দানেই বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। এখানেই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল। হাবিবুল বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঠিক যেখানে দাঁড়িয়ে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই স্থান এবং ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিল যে টেবিলে সই হয়েছিল, সেই টেবিল রাখার স্থানটি চিহ্নিত করা হয়েছে। “পয়েন্টটা এক সময় শিশু পার্কের সীমানার মধ্যে ছিল, যা এখন সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই দুই পয়েন্টকে সংরক্ষণ করে সেখানে ব্রোঞ্জের ভাস্কর্য তৈরি করে দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলা হচ্ছে।” “কাজটা যখন শেষ হবে, তখন যে কোনো দেশি বা বিদেশি দর্শনার্থী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ভবিষ্যতে যখন আসবেন, একই সঙ্গে আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস সম্পর্কে জানবেন,আমাদের ঐতিহ্য সম্পর্কে জানবেন,” বলেন তিনি। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের স্থান ও পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থান সংরক্ষণের নির্দেশনা চেয়ে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কে এম সফিউল্লাহ ও অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন জনস্বার্থে ২০০৯ বছরের ২৫ জুন হাই কোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন। এর এক বছর পরে দেওয়া রায়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একাত্তর-পরবর্তী স্থাপনা, যেমন- শিশু পার্ক, মহানগর পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, ফুলের মার্কেট সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। আদালত রায়ে এক বা একাধিক কমিটি গঠন করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সাতটি স্থান চিহ্নিত করতে নির্দেশ দিয়েছিল। এগুলো হল- ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দেওয়া ভাষণের স্থান; ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের স্থান; একাত্তর সালের ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় ও প্রাদেশিক সংসদে নির্বাচিত সদস্যদের শপথের স্থান; ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের স্থান; পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থান; ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের স্থান এবং ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ভাষণের স্থান। এই সাতটি স্থান ছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সব ধরনের স্থাপনা অপসারণ করতে বলা হয়েছিল রায়ে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: