‘একচেটিয়া বাজার ভাঙতে পেরেছে ‘নগদ’’

প্রকাশিত: ০৯ মে ২০২১, ০৯:১৪ পিএম
সম্প্রতি ভার্চুয়াল একমিটিং এ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দর সিকদার বলেছেন, দেশে এমএফএস বাজারে একটি মনোপলি ছিল। মনোপলিটা ভাঙতে পেরেছে ‘নগদ’। প্রতিযোগিতা অবশ্যই থাকতে হবে নগদকে। অনেকটা কমে গেলেও এখনো মনোপলি আছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বোচ্চ সীমা করে দিয়েছিল হাজারে সাড়ে ১৮ টাকা নেওয়ার কথা। অথচ সেখানে এখন ২০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। দেড় টাকা নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করছে না, কিন্তু দেড় টাকায় তো হাজার হাজার কোটি টাকা হয়ে যায়। এটা সরাসরি চুরি করা হচ্ছে। এসময় তিনি এমএফএস’র চার্জ কমানোর ওপর গুরুত্বরোপ করেন। শনিবার (৮ মে) টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত ‘প্রতিযোগিতা ও অংশীদারিত্বে প্রেক্ষাপট: প্রসঙ্গ এমএফএস’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। আলোচনায় দেশের অর্থনৈতিক খাতের নীতি-নির্ধারক ও সংশ্লিষ্টরা অংশ নেন। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমরা মুক্তবাজার অর্থনীতি গ্রহণ করেছি। এর প্রধান শর্ত প্রতিযোগিতা। এটা বজায় রাখতে গিয়ে যাতে কেউ একচেটিয়া বাজার দখল করতে না পারে এজন্য প্রতিযোগিতা কমিশনের মতো কমিশন গঠন করা হয়েছে। কারণ প্রতিযোগিতা না থাকলে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রতিযোগিতা অবশ্যই বাঁচিয়ে রাখবো তবে মনোপলি হতে দেব না। প্রতিযোগিতা কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মোস্তাফা জব্বার বলেন বলেন, অভিযোগ পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করবেন না। কারণ মানুষ অভিযোগ করার প্রক্রিয়াকে ভয় পায়, ভয় পায় হেনস্তা হওয়ারও। তাই কেউ যেন এমএফএস বাজারে মনোপলি করতে না পারে, সে বিষয়টি আপনারা লক্ষ রাখবেন। এমএফএস’র (মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস) চার্জ নির্ধারণের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, চার্জ নির্ধারণের বিষয়টি খবরদারি করার মতো বিষয়। কেউ ২০ টাকা, কেউ ১৪ টাকা নিচ্ছে। এটা সে তার প্রতিষ্ঠানের হিসাব করে নির্ধারণ করছে। আমি এমএফএস’র সর্বোচ্চ চার্জ নির্ধারণ করার পক্ষে, সর্বনিম্ন চার্জ নির্ধারণের পক্ষে না। কারণ সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা থাকলে কেউ বেশি নিতে পারবে না। তাতে জনগণ উপকৃত হবে। এসময় তিনি এমএফএসে ইন্টারঅপারেবিলিটি না হওয়াকে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা বলেও উল্লেখ করেন। ইন্টারঅপারেবিলিটি কেন দেওয়া যাচ্ছে না, তা নিয়ে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন। প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, বাজারের প্লেয়ার যারা আছে তারা ফাউল প্লে করছে কিনা, তা দেখার দায়িত্ব সরকারের। পলিসি সাপোর্টের জায়গা থেকে কোনও সমস্যা নেই। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যে সার্ভিস চার্জটি নির্ধারণ করে দিয়েছে, ১৮ টাকার ওপরে না নেওয়ার। এটা যদি না মানা হয়, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। নগদ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলেন, হাজারে ২০ টাকা চার্জ। সারা পৃথিবীতে, উন্নত দেশগুলোতেও দেখা যাবে কোথাও এই চার্জ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক সেন্ড মানি ফ্রি করার নির্দেশনা দিয়েছে, আমরা প্রথম থেকে ফ্রি রেখেছি। সেন্ড মানিতে আসলে কোনও খরচ নেই। ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড ও রকেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, বলা হয় এমএফএস বাজারে ১৫টি প্রতিষ্ঠান আছে। ২-৩টা ছাড়া বাকি কেউ আছে বলে আমি মনে করি না। মনোপলি হওয়ার পরে ৮০ শতাংশ শেয়ার ছিল। এখন নতুন একটি অপারেটরের কারণে ৭০ শতাংশে এসেছে। মোবাইল অপারেটর রবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী এবং অ্যামটবের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, শুরু থেকে আমরা এমএফএসগুলো চালু রাখতে সহযোগিতা করেছি। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের এমএফএস এমন থাকবে না। যখন ডিজিটাল কারেন্সি চলে আসবে, তখন কোনও ডিস্ট্রিবিউটর থাকবে না। আরও কিছু খরচ কমানোর সুযোগ আছে। খরচ কমালে গ্রাহকদের জন্য ভালো হবে। বিকাশ’র চিফ কমার্শিয়াল অফিসার মিজানুর রশীদ বলেন, সহজলভ্যতা দিতে গিয়ে আমরা এই চার্জ নিচ্ছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে নতুন কোনও রেট যদি আমরা দেশের জনগণের কল্যাণে নির্ধারণ করি, তাহলে সেটা যেন ব্যবসাবান্ধব হয়। টিআরএনবি’র সভাপতি রাশেদ মেহেদীর সভাপতিত্বে আলোচনায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার দে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: