জমজমাট হয়ে উঠেছে ‘প্রজেক্ট হিলসা’, তবুও খাবারের দাম নিয়ে অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৭ জুন ২০২১, ১২:২৫ এএম
পদ্মাপাড়ের জেলা মুন্সিগঞ্জের মাওয়া শিমুলিয়া ঘাটে ইলিশের স্বাদ উপভোগ করতে ভোজন রসিকদের ভিড় হরহামেশা লেগেই থাকে। সেই চিন্তা থেকেই শিমুলিয়া ঘাটের অদূরে ‘প্রজেক্ট হিলসা’ নামে নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম ইলিশ মাছের আদলে রেস্টুরেন্ট। উদ্বোধনের পর কয়েকদিনের মধ্যেই জমজমাট হয়ে উঠেছে রেস্টুরেন্টটি। মেন্যু বলছে, রেস্তোরাঁটিতে ইলিশ মাছের ২৪ ধরনের রেসিপিসহ মোট ৩০০ ধরনের খাবার পাওয়া যায়। এই করোনাকালেও দেশের বিভিন্নপ্রান্ত হতে দলে দলে ভোজনরসিক যাচ্ছেন সেই রেস্তোরাঁয়। তবে বাস্তবের চাইতে রেস্তোরাঁটি বহুগুণ বেশি সাড়া ফেলেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এদের মধ্যে একদল খাবারের দাম ও পরিবেশন নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করে অন্যদের যেতে নিরুৎসাহিত করছেন। বিশেষকরে রেস্তোরাঁর প্রধান আইটেম ইলিশ মাছের মান ও দাম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তাদের মতে, মান ও স্বাদের তুলনায় দাম অনেক বেশি রাখছে কর্তৃপক্ষ। গত কয়েকদিনে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে রেস্তোরাঁর কয়েকটি বিল কপির (মুশক চালান) ছবি। যেখানে দেখা গেছে, প্রতি পিস বেগুনভাজার দাম রাখা হয়েছে ৫০ টাকা। যা ভালো মানের রেস্তোরাঁয় ১০-১৫ টাকার বেশি নয়। প্রতি বাটি ডালের দাম ধরা হয়েছে ১০০ টাকা। অই মানের ডাল দেশের যে কোনো রেস্তোরাঁয় প্রতি বাটি ৩০-৫০ টাকায় মিলবে। সবচেয়ে অবাক করা দাম রাখা হচ্ছে মূল আকর্ষণ ইলিশের বেলায়। প্রোজেক্ট হিলসায় প্রতি পিস ইলিশ মাছের দাম নেওয়া হয়েছে ১৮০০ টাকা! অথচ দেশের যে কোনো প্রান্তে এক কেজি বা তার চেয়ে বেশি ওজনের প্রতি পিস ইলিশ পাওয়া যায় ১২০০-১৪০০ টাকায়। মাত্র এক প্লেট সাদা ভাতের জন্য গুণতে হচ্ছে ১০০ টাকা! এক প্লেট খিচুড়ি ২০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে সেখানে। সামান্য সালাদের দামও একশত টাকা ছাড়িয়ে। মানের তুলনায় দাম অতিরিক্ত অভিযোগে ফেসবুকে রেস্তোরাঁর উপর ক্ষোভ ঝাড়ছেন নেটিজেনরা।এরইমধ্যে ভাইরাল হয়েছে এক ভোক্তার বিল কপি। যেখানে দেখা গেছে, অই ভোক্তা বেগুনভাজির অর্ডার দিয়েছেন ৪১টি। প্রতিটি ৫০ টাকা করে বিল এসেছে ২০৫০ টাকা। ইলিশ অর্ডার করেছে ১৩টি, যার মূল্য পরিশোধ করতে হয়েছে ২৩,৪০০ টাকা। ডাল ২০ বাটি এবং ভাত ৪১ প্লেটসহ তার খাবার বিল হয়েছে ৩২,৬২৫ টাকা! এরসঙ্গে সার্ভিস চার্জ দিতে হয়েছে ৩,২৬২ টাকা। আর সঙ্গে যোগ হয়েছে ভ্যাট ৫,২২২ টাকা। সব মিলিয়ে অই ভোক্তাকে বিল পরিশোধ করতে হয়েছে ৪১,১০৯ টাকা! এমন বিল কপি দেখে অনেকেই রেস্তোরাঁকে 'গলা কাটা', পকেট কাটা, 'জবাই করার' কেন্দ্র বলে আখ্যা দিচ্ছেন। তাদের মতে, ঢাকায় উন্নতমানের যে কোনো রেস্তোরাঁয় এই পরিমাণ খাবার খেলে বিল ১০ থেকে ১৫ হাজারের বেশি হতো না। কেউ কেউ আবার রেস্তোরাঁর পক্ষ নিয়ে বলছেন, ওরা যা খুশি তা দাম ধরবে, মানুষ ইচ্ছা করে নিজের গলা কাটতে গেলে রেস্তোরাঁর কি দোষ? অনেকেই লেখছেন, এই রেস্তোরাঁয় যাবেন উচ্চবিত্ত ও বিদেশিরা। নিম্ন মধ্যবিত্তরা গেলে খাবারের দাম বেশিই মনে হবে। কেউ কেউ পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন, রেস্তোরাঁর কোথাও কি লেখা আছে এটা ফাইভস্টার মানের? আর অর্ডারের পর খাবার পরিবেশনে যে সময় নিচ্ছে তারা তা কোনো মতেই ভালো মানের রেস্তোরাঁর বৈশিষ্ট নয়। ইয়াসির আরাফাত নামের একজন অভিযোগ করেছেন, ‘শুক্রবার গিয়েছিলাম মাওয়ার প্রোজেক্ট হিলসায়। খাবার অর্ডারের পর কয়েক ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে। উন্নত রেস্তোরাঁর এ কেমন অবস্থা?’ রেস্তোরাঁটির খাবারের মান, দাম নিয়ে করা অভিযোগ প্রসঙ্গে মুন্সিগঞ্জ জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আসিফ আল আজাদ বলেন, ‘তাদের খাবারের যে দাম সেটা অবশ্যই মেন্যুকার্ডে উল্লেখ করে রাখতে হবে। ভোক্তারা এটি দেখেই খাবেন। ভোক্তারা যদি মনে করেন, এখানে দাম বেশি তাহলে তিনি ওখানে না-ও খেতে পারেন। খাবার দাম মেন্যুকার্ডে যা লিখে রাখা হবে তার থেকে বেশি নেয়া হলে সেটি অপরাধ হবে। এ ব্যাপারে আমাদের কাছে অভিযোগ এলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’ সার্ভিস চার্জের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯-এ সার্ভিস চার্জ রাখা যাবে কি যাবে না, সে সম্পর্কে কিছু বলা নেই। তবে সার্ভিস চার্জের বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে ঘোষণা দিতে হবে। মেন্যুকার্ডে লিখে রাখতে হবে। কাস্টমারকে জানিয়ে রাখতে হবে যে ১০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ রাখা হবে। এটি না করে থাকলে সেটি অপরাধ হবে।’ ভোক্তাদের এসব অভিযোগের বিষয়ে ‘প্রজেক্ট হিলসা’র ম্যানেজার নিশাত আহমেদ বলেন, ‘দাম বেশি কি-না সেটা পরিবেশ, রেস্তোরাঁর আকার, অবস্থা, ডেকোরামের উপর নির্ভর করে। আমাদের কাছে দাম অত বেশি মনে হচ্ছে না। তবে দাম নিয়ে কাস্টমারদের অসন্তোষের বিষয়টি নিয়ে আমরা ভাবব।’ ১০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ কেটে নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ বড় বড় যে কোনো রেস্তোরাঁয় এমন সার্ভিস চার্জ রাখা হয়। পার্কিং চার্জ, ইলেক্ট্রিসিটি, এসি সবকিছুর ওপর একটি চার্জ তো হবেই, তাই না? আর আমাদের মেন্যুকার্ডে এ কথা উল্লেখ করা আছে।’ গত ২৭ মে আনুষ্ঠানিকভাবে রেস্টুরেন্টটির উদ্বোধন করা হয়েছে। “প্রজেক্ট হিলসার” ম্যানেজার ইনচার্জ প্রসনজিৎ রায়ের দেওয়া তথ্য মতে, প্রায় ৪০ হাজার বর্গফুট আয়তন এই রেস্তোরাঁর। এখানে একসাথে ৩’শ- এর বেশি মানুষ বসে খেতে পারবে। কাস্টমার সার্ভিসের জন্য এখানে স্টাফ রয়েছে ৮০জনের বেশি। রয়েছে ফ্রী গাড়ি পার্কিং-এর সুব্যবস্থা। শিশুদের জন্যেও খেলাধূলার ব্যবস্থা রয়েছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: