গাঁজার কেক বিক্রি করতেন তিন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী!

প্রকাশিত: ১০ জুন ২০২১, ০৭:০৩ এএম
খালি চোখে দেখে বোঝার উপায় নেই ওটার ভেতর কী আছে! সামান্য চেখে দেখলে মনে হবে এ তো কেকই। তবে পুরো স্বাদ পেতে হলে খেতে হবে আস্ত এক পিস! তারপর টের পাওয়া যাবে একটা কিছু। কারণ এই কেকের একটি অন্যতম উপকরণ হচ্ছে গাঁজা। আর এমন ৩০ পিস গাঁজার কেকসহ তিন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা জোনাল টিম। গ্রেফতারকৃতরা হলো- কাফিল ওয়ারা রাফিদ, কাজী রিসালাত হোসেন ও সাইফুল ইসলাম সাইফ। কাফিল আমেরিকান ইন্টরন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (এআইইউবি)-এ কম্পিউন্টার সায়েন্স, রিসালাত ধানমন্ডির অ্যাডভান্সড প্রফেশনালস-এর এসিসিএ এবং সাইফ পড়ছে ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ- ইউডার চারুকলায়। বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও পল্টন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মিশু বিশ্বাস বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘গ্রেফতারকৃত তিনজনই মাদকাসক্ত। এদের দুজন নিজ নিজ বাসায় গাঁজার নির্যাস দিয়ে কেক তৈরি করে বিক্রি করতো। একজন এসব কেক ডেলিভারি করতো। বৃহস্পতিবার তাদের আদালতে সোপর্দ করে সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে।’ গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারেন রাজধানীতে একাধিক চক্র গাঁজার নির্যাস দিয়ে কেক বানিয়ে মাদকসেবীদের কাছে বিক্রি করে আসছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে তারা বুধবার বিকালে মোহাম্মদপুরের শাহাজাহান রোডের একটি জায়গা থেকে প্রথমে রাফিদ ও সাইফকে আটক করে। এসময় তাদের কাছে প্রায় ১৮টি গাঁজার কেক পাওয়া যায়। তারা সেগুলো ডেলিভারি দিতে যাচ্ছিল। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পল্টন এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে রিসালাত হোসেনকে ১২পিস গাঁজার কেকসহ আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, তারা তিন জনই মাদকাসক্ত। অন্যান্য মাদকের পাশাপাশি তারা নিয়মিত গাঁজা সেবন করে আসছে। বছর দেড়েক আগে ইউটিউবে দেখে তারা গাঁজার কেক বানানো শিখেছে। প্রথমে নিজেরা খেলেও পরে বন্ধুদের মধ্যেও এর ব্যপক চাহিদা তৈরি হয়। ব্যবসাটা শুরু করে তখনই। রাফিদ ও রিসালাত জানিয়েছে, প্রতি পিস গাঁজার কেক তারা ৪ থেকে ৫ শ’ টাকায় বিক্রি করতো। প্রথম দিকে কাছের বন্ধুদের কাছে বিক্রি করলেও চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ক্লোজ গ্রুপ তৈরি করে সেখানে বিক্রি করা শুরু করে। অর্ডার দিলে কখনও নিজে বা কখনও ডেলিভারিম্যানদের মাধ্যমে এসব মাদক পাঠানো হতো। গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, উচ্চবিত্ত পরিবারের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়ারাই ইন্টারনেট ঘেঁটে মাদকের অভিনব সব ব্যবহার করছে। এর আগে এলএসডিসহ যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারাও উচ্চবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থী। এলএসডিসহ গ্রেফতারকৃতদের একজনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই গাঁজার কেক বিক্রি চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়। জানা গেছে, গ্রেফতারকৃত দুই গাঁজার কেক ব্যবসায়ীর মধ্যে রাফিদের বাবা ইদ্রিস আলী সিঙ্গাপুরে ব্যবসা করেন। মোহাম্মদপুরে তাদের নিজেদের বাড়ি রয়েছে। রিসালাতের বাবার নাম কাজী রওনাক হোসেন। তার দাদা প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক কাজী মোতাহার হোসেন। ইউডার চারুকলার শিক্ষার্থী সাইফ খিলাঁও সিপাহীবাগ এলাকায় পরিবারের সঙ্গে বাস করে। রাফিদ পড়াশোনার পাশাপাশি ম্যারাথন দৌড়েও অংশ নিয়েছিল। এমনকি সাইফের মতো সে নিয়মিত সাইক্লিংও করে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: