‘লকডাউন’ তোয়াক্কা করছে কেউ, ঔষধ কেনার নামে শহরে যায় করোনা রোগীরা

প্রকাশিত: ১৬ জুন ২০২১, ০৫:৫২ এএম
মেহেরপুরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় মুজিবনগর উপজেলার আনন্দবাস এবং গাংনীর তেঁতুলবাড়িয়া ও হিন্দা গ্রামে লকডাউন ঘোষণা করেছে প্রশাসন। মঙ্গলবার (১৫ জুন) ভোর থেকে এ তিন গ্রামে লকডাউন কার্যকর হয়। এরই মধ্যে উপজেলা প্রশাসন থেকে তিনটি গ্রামে লাল পতাকা ও বাঁশের বেড়া দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের এ লকডাউন মানছেন না এ তিন গ্রামের বাসিন্দারা। বিভিন্ন অজুহাতে ঘর থেকে বেরিয়ে বাইরে যাচ্ছেন তারা। সরেজমিনে দেখা গেছে, চায়ের দোকানে আড্ডা, বাজারে যাতায়াতসহ নানা কাজে ব্যস্ত গ্রামের লোকজন। আবার যারা করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছিলেন তারাও হোম আইসোলেশনে থাকছেন না। এছাড়া করোনার লক্ষণ থাকা সত্ত্বেও সামাজিকভাবে হেনস্তার ভয়ে নমুনা দিচ্ছেন না অনেকেই। তাই করোনা আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা জানা যাচ্ছে না। সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামে ১৮ জন, হিন্দা গ্রামে ২৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। গত ১২ জুন ওই এলাকায় মেডিকেল ক্যাম্প করে নমুনা সংগ্রহ করলে ২৯ জনের মধ্যে ১৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এর পরদিন থেকে কেউ আর নমুনা দিতে আসেনি। করোনা পজিটিভ যারা তারাও ঘরে থাকছেন না। বাড়ির আশপাশে চায়ের দোকানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তারা। তাদের আত্মীয় স্বজনরাও অন্যান্য রোগীর মতো দেখতে আসছেন। অনেক করোনা রোগী বাজারে ওষুধ কেনার জন্য আসছেন। আবার কেউ কেউ গো-খাদ্য সংগ্রহের জন্য ক্ষেত খামারে যাচ্ছেন। তাই সংক্রমণের হারও বাড়ছে। যদিও পরীক্ষা না করার কারণে সংক্রমণের সঠিক সংখ্যা জানা যাচ্ছে না। হিন্দা গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, করোনা আক্রান্ত ইউনুস আলীর ছেলে রিপন আলী বাড়ি নেই। তিনি ওষুধ কিনতে গাংনী বাজারে গেছেন। ইউনুস আলী অভিযোগ করে বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন তাদের খোঁজ-খবর নেয় না। তাই চিকিৎসার জন্য বাধ্য হয়ে অন্য ডাক্তার ও ফার্মেসিতে যেতে হচ্ছে। এদিকে করোনা আক্রান্তদের আইসোলেশনে রাখার জন্য হাসপাতালে কোনো ব্যবস্থা নেই। গত বছর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরাতন ভবনে ১০ শয্যাবিশিষ্ট একটি কক্ষ আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করা হলেও তিন মাস আগে সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। পুরাতন ভবনটি সংস্কার করার কারণে আইসোলেশন সেবা বন্ধ রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. এম কে রেজা বলেন, এলাকার লোকজন যে অভিযোগ করেছে সেটি সঠিক নয়। হিন্দা ও করমদি এলাকার করোনা আক্রান্তদের স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছে। তাছাড়া জরুরি প্রয়োজনের জন্যও মোবাইল ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে। আইসোলেশন ওয়ার্ড চালুর জন্য হাসপাতালের অন্য ভবনে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী খানম জানান, দুটি গ্রামে যারা আক্রান্ত তাদের নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। নিয়মিত পরিদর্শন করে খাদ্য সামগ্রী প্রদান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আক্রান্তদের বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। অনেকেই বুঝতে না পেরে ঘরের বাইরে বেরিয়েছেন তাদের বোঝানো হয়েছে। এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। জেলা প্রশাসক ড. মুনসুর আলম খান বলেন, মেহেরপুর জেলায় হঠাৎ করে করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনসচেতনতায় নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনটি গ্রামে হঠাৎ করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে আতংক বেড়েছে ।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: