স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে সংসদে হট্টগোল

প্রকাশিত: ০১ জুলাই ২০২১, ০৭:১১ এএম
করোনাকালে স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলে সংসদ অধিবেশনে আবারো ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিরোধী দলের সদস্যরা। জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য বিভাগের মঞ্জুরি দাবির ওপর বিরোধী দলের সদস্যদের সমালোচনার জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের দেয়া বক্তব্যে অধিবেশন কক্ষে হৈ-হট্টগোল হয়েছে। বিরোধী সদস্যদের বক্তব্যের জবাব দিতে মন্ত্রী তাদের দায়িত্ব নিতে বলেন। ঢালাও অভিযোগ ‘অগ্রণযোগ্য’ বলে উল্লেখ করেন। আজ বুধবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে বাজেট পাসের সময় মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্পর্কিত ৫৯টি মঞ্জুরি দাবির মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ নিয়ে আলোচনা করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও গণফোরামের সদস্যরা। তারা আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা তুলে ধরেন। তারা অনিয়ম-দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলে ধরে মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের কঠোর সমালোচনা করেন। করোনা টিকার অপ্রতুলতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা। পরে জবাব দিতে উঠে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এক পর্যায়ে বিরোধী দলের সদস্যেদের উদ্দেশে বলেন,আপনারা হাসপাতালের চেয়ার। আপনাদের দায়িত্ব আছে। আপনাদের দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি দুর্নীতির অভিযোগেরও জবাব দেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন,মাস্ক নিয়ে কথা বলছেন। মাস্ক তো কেনাই হয়নি। তার পেমেন্ট দেয়া হয়নি। ঢালাও অভিযোগ দিলে তো চলবে না। এসময় বিরোধী দলের বেঞ্চ থেকে হৈ-চই, হট্টগোল শুরু হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেন জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সদস্যরা। তারা মাইক ছাড়াই নানান কথা বলতে থাকেন। ‘আমরা পত্রিকা পড়ি না’ এমন শব্দও হাউজ থেকে এ সময় শোনা যায়। এ সময় সরকারী দলের সদস্যরা কি করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। পরস্পরের দিকে তাকাতাকি করছিলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী একটু থেমে গেলে সামনে বসা তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী তাকে বক্তব্য চালিয়ে যেতে ইশারা করলে তিনি পুনরায় বক্তৃতা করেন। মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক বলেন, সুনির্দিষ্ট করে বলতে হবে। ঢালাওভাবে অনিয়মের কথা বললে গ্রহণযোগ্য হবে না। সুনির্দিষ্ট বলতে হবে কোথায় দুর্নীতি হয়েছে? এসময় বিরোধী দলের দিক থেকে আবারো হইচই হলে মন্ত্রী বলেন,মাস্কের কোনও টাকাইতো দেয়া হয়নি। সুনির্দিষ্ট করে বলতে হবে। ঢালাওভাবে বললে হবে না। এ পর্যায়ে হট্টগোল চলতে থাকলে বিরোধী দলের সদস্যদের ছাঁটাই প্রস্তাব গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না জানিয়ে বসে পড়েন। এরআগে ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনাকালে বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন,স্বাস্থ্য খাত সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। দুর্নীতি দূর করতে হলে ডালপালা কেটে লাভ নেই। গাছের শেকড় উপড়ে ফেলতে হবে। স্বাস্থ্যের কেনাকাটায় ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। দুর্নীতি নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বলেন, কতবার ডিও লেটার দেবো, আমার এলাকার হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স নেই, ডাক্তার কবে পাবো? এক্সরে মেশিন কবে পাবো? রেডিওলজিস্ট কবে পাবো? স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে যতবার বলি, উনি ডিও লেটার দিতে বলেন। কতবার দেবো? তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চলমান বরাদ্দের টাকাই খরচ করতে পারেননি। আবার বরাদ্দ চেয়েছেন। জাপার আরেক সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় টাকা খরচ করতে পারেনি। ফেরত দিয়েছিল। এটা আমরা চাই না। খরচ করতে না পারলে এখানে ৩৫০ জন এমপিকে ভাগ করে দেন। আমরা খরচ করি। স্বাস্থ্যসেবা আমরা দেখবো। আপনাদের দরকার নেই। ডাক্তার-নার্স নিয়োগ করতে পারছেন না। ৩৫০ এমপিকে দায়িত্ব দেন। আমরা নিয়োগের ব্যবস্থা করি। বিএনপির রুমিন ফারহানা স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন অনিময় তুলে ধরে বলেন,স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মাত্র ২৫ শতাংশ। এই যে বরাদ্দ দিচ্ছি সেটা কোথায় যাচ্ছে? বরাদ্দ খরচ করার সক্ষমতা মন্ত্রণালয়ের আছে কিনা সেই প্রশ্ন চলে আসছে। জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ করে বলেন, সব লকডাউন। এই সময়ে আপনারা কেউ তো বাইরে যেতে পারেননি। সেবা কোথায় নিচ্ছেন? সব বাংলাদেশের হাসপাতালেই সেবা নিচ্ছেন। যেতে তো পারছেন না কোথাও। হাসপাতাল সেই সেবা দিতে পারে বিধায় আপনারা সেবা নিচ্ছেন। ভালো আছেন। আসছে ১৭ কোটি ভ্যাকসিন: ভ্যাকসিন সংগ্রহ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ভ্যাকসিন আমরা আনার চেষ্টা করছি। আগামী ২/৩ তারিখের মধ্যে ২৫ লাখ মডার্নার ভ্যাকসিন চলে আসবে। চীনের ভ্যাকসিনও একই সময়ে চলে আসবে। কোভ্যাক্স থেকে আমরা ৬ কোটি ৩০ লাখ ভ্যাকসিন ডিসেম্বরের মধ্যে পাবো। সিনোফার্মার সঙ্গে চীনা দেড় কোটি ভ্যাকসিনের চুক্তি হয়েছে। সব মিলিয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ কোটি ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা রয়েছে। এটা দিয়ে আমরা ৫ কোটি মানুষকে টিকা দিতে পারবো। জনসন অ্যান্ড জনসনকে রিসেন্টলি অনুমতি দিয়েছি, সেখানকার ৭ কোটি ভ্যাকসিন দিয়ে ৭ কোটি মানুষকে টিকা দিতে পারবো। আগামী বছরের প্রথম কোয়ার্টারে পাবো। সব মিলিয়ে আগামী বছরের প্রথম কোয়াটার্রের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে পারবো। মন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যসেবার সব স্বাভাবিক কাজের পাশাপাশি করোনার চিকিৎসা চলছে। প্রায় এক কোটি লোককে আমরা ভ্যাকসিন দিয়েছি। সেখানে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার কাজ হয়েছে। কোভিড-১ টেস্ট প্রায় ৫০ লাখ মানুষের করেছি। সেখানে দুই হাজার কোটি টাকার কাজ হয়েছে। এক লাখ করোনার রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছি। সেখানে দুই হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। অক্সিজেন সেন্টার হয়েছে ১০০টি, ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে ১০০টি। এ বছরে এডিপির ১২ হাজার কোটি টাকার বাজেট ছিল। ভ্যাকসিন বাদ দিলে এর ৮৫ শতাংশ অর্জন হবে। ভ্যাকসিনের ৮ হাজার কোটি টাকা ধরা হলে, সেটা ১৫০ শতাংশ আমাদের অর্জন। জনবল ঘাটতি থাকার কথা উল্লেখ করে জাহিদ মালেক বলেন, এই করোনার মধ্যেও আমরা চিকিৎসক, নার্সসহ ২০ হাজার লোক নিয়োগ দিয়েছি। টেকনিশিয়ান নিয়োগ চলমান রয়েছে। এটা নিয়ে একটা জটিলতা হয়েছিল। অল্পদিনের মধ্যে আমরা এটা সম্পন্ন করতে পারবো। মামলার কারণে নিয়োগে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। মামলার কারণে নার্স নিয়োগও আটকে ছিলো বলে তিনি জানান। হাসপাতালে বেহাল অবস্থার অভিযোগের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সব এমপি তো হাসপাতালের চেয়ার। মেশিন চলে না। লোক লাগবে। এগুলো তো আপনাদের দেখতে হবে। কিন্তু আপনারা তো সেটা দেখেন না। নার্স, ডাক্তার বা যন্ত্রপাতি লাগলে তো আপনাদেরকেই বলতে হবে। শুধু অভিযোগ দিলে তো হবে না। যা যা প্রয়োজন আছে তার ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু চেয়ারম্যান হিসেবে এগুলো দেখার দায়িত্ব আপনাদের ওপর বর্তায়। সুত্র: মানবজমিন অনলাইন

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: