গাড়ির দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ০১ আগষ্ট ২০২১, ১২:২৩ এএম
পোশাক শ্রমিকদের ঢাকায় কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করার দাবিতে রংপুর নগরীর মডার্ন মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন হাজার হাজার পোশাক শ্রমিক। শনিবার (৩১ জুলাই) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পরিবহন না পেয়ে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। অবরোধের কারণে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সড়কে অবস্থান করছেন পোশাক শ্রমিকরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকে রংপুর ও আশপাশের জেলার পোশাকশ্রমিকরা ঢাকায় কারখানায় কাজে যোগ দেওয়ার জন্য নগরীর মডার্ন মোড়ে আসেন। দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকেও যানবাহন পাননি। পণ্যবাহী ও খালি ট্রাকে গন্তব্যে যেতে চাইলে বাধা দেয় পুলিশ। দুপুর ১২টার দিকে মডার্ন মোড় ও আশপাশের এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। এ সময় হাজার হাজার পোশাকশ্রমিক পরিবহনের ব্যবস্থা করার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে মহাসড়কের দুই পাশে শত শত ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন আটকাপড়ে। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, ১৫ দিনের লকডাউনের ঘোষণা দিয়ে সব পোশাক কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সুযোগে শ্রমিকরা বাড়িতে চলে আসেন। কিন্তু হঠাৎ শুক্রবার ঘোষণা আসে, রবিবার থেকে কারখানা খোলা। শ্রমিকদের ঢাকায় যাওয়ার পরিবহনের ব্যবস্থা না করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত দেওয়া উচিত হয়নি সংশ্লিষ্টদের। এখন কীভাবে কর্মস্থলে যাবেন তারা। ১৫ দিন কারখানা বন্ধের কথা শুনে লাখ লাখ শ্রমিক ঈদ উদযাপন করতে রংপুরের বিভিন্ন জেলায় এসেছেন। এখন দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে তাদের কারখানায় যেতে হচ্ছে বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেক শ্রমিক। কাজে যোগ না দিলে চাকরি থাকবে না বলে কারখানা থেকে জানানো হয়েছে তাদের। পোশাকশ্রমিক মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমার বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায়। ৫ আগস্ট পর্যন্ত কারখানা বন্ধ শুনে বাড়িতে এসেছিলাম। রবিবার থেকে কারখানা খোলা খবর শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। রাতেই অটোরিকশা ও ভ্যানে ভেঙে ভেঙে মডার্ন মোড় পর্যন্ত এলাম। এখানেও যানবাহন নেই। তাহলে ঢাকায় যাবো কীভাবে? কারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বাস-ট্রেন চালু করা উচিত ছিল। রবিবার কাজে যোগ না দিলে চাকরি থাকবে না। দুই সন্তান নিয়ে কোথায় যাবো?’ তার মতো দুর্ভোগে পড়েছেন শ্রমিকশ্রমিক সাহেরা বেগম ও আকলিমাসহ আরও অনেকেই। তারা এসেছেন রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ থেকে। তারাও বলছেন, কীভাবে যাবো ঢাকায়? নীলফামারী থেকে আসা পোশাকশ্রমিক আবদুল হাফিজ বলেন, ‘অনেক কষ্টে ভেঙে ভেঙে ১০০ টাকার ভাড়া ৩০০ টাকা দিয়ে রংপুর পর্যন্ত এসেছি। এখন ঢাকায় যাবো কীভাবে। পথে আটকাপড়ার বিষয়টি কারখানার ম্যানেজারকে মোবাইল ফোনে জানিয়েছি। তিনি বলেছেন, রবিবার সকালে কাজে যোগ না দিলে চাকরি নেই। বিকাল পর্যন্ত রাস্তায় বসে আছি। কীভাবে চাকরি বাঁচাবো?’ লালমনিরহাট সদরের মোগলহাট থেকে আসা পোশাকশ্রমিক সাহাবুল, আমজাদ ও সাহেব আলী জানান, তাদের এলাকার কয়েক হাজার নারী-পুরুষ ঢাকা-গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন পোশাক কারখানায় কাজ করেন। অনেক কষ্টে রংপুর পর্যন্ত এসেছেন। গাড়ি না পেয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন তারাও। রংপুরের পোশাক শ্রমিকনেতা আহাম্মেদ আলী বলেন, বিভাগের প্রায় ২৫-৩০ লাখ নারী-পুরুষ ঢাকার বিভিন্ন পোশাক কারখানায় চাকরি করে। বাস-ট্রেন চালুর পর কারখানা খোলা উচিত ছিল। যারা এমন সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, তারা শ্রমিকদের কথা একবারও ভাবেননি। ঘটনাস্থলে উপস্থিত তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতারুজ্জামান প্রধান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলছি। বিভাগের আট জেলার মানুষকে নগরীর মডার্ন মোড় দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করায় সবার যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেছে। শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করছি। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে পোশাক শ্রমিকরা জানিয়েছেন, তাদের জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ অব্যাহত থাকবে। যেভাবেই হোক তাদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: