শ্রমিক নেতা অপহরণ, প্রতিবাদে সমাবেশ মানববন্ধন

প্রকাশিত: ০২ আগষ্ট ২০২১, ০৭:১৪ এএম
শিল্পাঞ্চল সাভারের এক শ্রমিক নেতাকে সাদা রংয়ের মাইক্রোবাসে করে অপহরণের অভিযোগে বিতর্কিত ও কথিত যুবলীগ নেতা রাজু আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী। রাজু আহমেদ কখনও যুবলীগ কখনও শ্রমিকলীগের পদধারী নেতা পরিচয় দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রবিবার (১ আগস্ট) দুপুরে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন শ্রমিক নেতা ও টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাভার-আশুলিয়া-ধামরাই আঞ্চলিক কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রতন হোসেন মোতালেব। এ ঘটনায় সাভার মডেল থানার মামলা নং ০২। মামলায় প্রধান অভিযুক্ত আশুলিয়ার চানগাঁও এলাকার শহিদুল ইসলাম ও জোসনা বেগম দম্পত্তির ছেলে রাজু আহমেদ (৪১), তার অন্যতম সহযোগী আব্দুল জলিল(৩০), রিপন(৪০),একই এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে আব্বাস(৩৫), জিনজিরা এলাকার সিফাত(২৩) সহ অজ্ঞাত আরও ২/৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর আগে গত শুক্রবার রাত পৌনে ১০ টার দিকে সাভারের কলমা এলাকার কবির হোসেন এর বাড়ীর সামনে থেকে তাকে অপহরণ করে রাজু আহমেদের পালিত সন্ত্রাসীরা। অপহরণের শিকার রতন হোসেন মোতালেব ধামরাইয়ের সাছনা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি শ্রমজীবিদের অধিকার আদায়ে কাজ করে থাকেন। অভিযুক্ত রাজু আহমেদ স্বঘোষিত আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের পদধারী নেতা। তবে এর  বাস্তবতায় নির্ভরযোগ্য কোন প্রমান মেলেনি। তিনি আশুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসাবেও প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। আশুলিয়ার চাঁনগাও এলাকার বাসিন্দা এই রাজু আহমেদ। এর আগে প্রতিমন্ত্রীসহ বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের নেতানেত্রীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজের একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেইসবুকে ভাইরাল হয়েছিল। এই ঘটনায় গালিগালাজ করা অডিও ভাইরালের অভিযোগে শশুরবাড়ি রাজধানীর পল্লবী থানায় এবং আশুলিয়া থানায় প্রভাব খাটিয়ে কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মীর বিরুদ্ধে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলা দায়ের করেন। এলাকাবাসী জানান, রাজু আহমেদ আশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসাবে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি বিভিন্ন সময় আওয়ামীলীগের বিভিন্ন পদবী ব্যবহার করে সুবিধা ভোগ করে থাকেন। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই নানা ধরনের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেন তিনি। বর্তমানে মামলাবাজ রাজু নামেই এলাকায় পরিচিত তিনি। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাত পৌনে ১০ টার দিকে কলমা এলাকার কবির হোসেন এর বাড়ীর সামনের ইটের সোলিং রাস্তা থেকে ৪ থেকে ৫ জন সন্ত্রাসী এসে একটি সাদা রংয়ের মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যায়। এর পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকে। রাত ২ টার পরে তার স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করে তিনি বলেন যেখানে আছেন ভাল আছেন। পরবর্তীতে সাভার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন রতনের স্ত্রী সুলতানা। অভিযোগের বিষয়টি জানাজানি হলে রতন হোসেনকে আশুলিয়ার পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন এলাকায় ছেড়ে দেয় তারা। পরে তাকে উদ্ধার করে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। রতন হোসেন বলেন, আমাকে অতর্কিতভাবে বাসার সামনে থেকে গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যায় রাজু আহমেদেরর লোকজন। পরে চারাবাগ বটতলা এলাকার একটি কক্ষে আটকে বেদম মারধর করেন। এর আগে কে বা কারা রাজু আহমেদের স্ত্রীকে নিয়ে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেয়। এর জের ধরে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ করা হয় বলে দাবি করেন তিনি। রাজু আহমেদ মাসে বেতন দিয়ে বিএনপির কর্মী দিয়ে বাহিনী তৈরি করেছেন। তিনি মনগড়া কাজকর্ম করে চলেছেন। এর ধারাবাহিকতায় আমাকে অপহরণ করা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, রাজু আহমেদের বডিগার্ড বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত জলিলের নেতৃত্বে আব্বাসসহ ৪ থেকে ৫ জন তাকে তুলে নিয়ে যায়। জলিল বিএনপির চিহ্নিত সন্ত্রাসী। সে গা ঢাকা দিতে কখনও সাংবাদিক পরিচয়ে কখনও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর সংস্পর্শে কৌশলে অবস্থান করে। এর আগেও রতন হোসেন মোতালেব এই জলিলের বিরুদ্ধে দুই দুইবার অভিযোগ করেছিলেন। এব্যাপারে বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সারোয়ার হোসেন জানান, তারা কোন এক সূত্রে জানতে পারেন তাদের সহযোদ্ধা রতনকে রাজু আহমেদ অপহরণ করেছেন। পরে রাজু আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি চারাবাগ বটতলা এলকা থেকে রতনকে নিয়ে যেতে বলেন। সেখানে সকল শ্রমিক নেতা গেলে পরে রাজু আহমেদ আর ফোন ধরেননি। এর পর থেকে রাজু আহমেদ পলাতক রয়েছেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে শ্রমিক নেতা রতন হোসেন মোতালেবকে  অপহরণের প্রতিবাদে নিন্দা জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। রোববার (০১ আগষ্ট) বিকালে সাভারের রানা প্লাজার প্রতিবাদ প্রতিরোধ শহীদ বেদীর সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধন থেকে অভিযুক্ত রাজু আহমেদসহ তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। এসময় শ্রমিকনেতারা বলেন, হটাৎ করে একজন শ্রমিক নেতাকে গুম করার মানে কি?। আমরা শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করি। এভাবে একজন শ্রমিক নেতাকে অপহরন করার কোনো মানে হয় না। বিক্ষোভ কর্মসূচির সমন্নয়ক বাংলাদেম গার্মেন্টস এন্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, আমাদের মাঠে ঘাটে কাজ করতে হয়। হটাৎ করে যদি এভাবে আমাদের শ্রমিক নেতাদের গুম করা হয় আমরা কাজ করবো কি করে। আর এই বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। তাকে ২০ ঘন্টা আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। আমরা রাজু বাহিনীর বিচার চাই। গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট সাভার আশুলিয়া ধামরাই শিল্পাঞ্চল কমিটির সাধারণ সম্পাদক আহমেদ জীবন বলেন, আগামী ৭২ ঘন্টার ভেতর যদি তাদের না গ্রেফতার করা হয়। আমরা শ্রমিক সংগঠনগুলো আরও বড় কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবো। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ প্রগতীশীল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামরুন্নাহার, বাংলাদেশ বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সালাউদ্দিন স্বপন, টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কাস ফেডারেশনের সভাপতি শাহআলম, গার্মেন্টস টেইলার্স ওয়ার্কাস লীগের সাংঠনিক সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম সোহাগসহ আরও অনেকেই। বিষয়টি নিয়ে মামলায় অভিযুক্ত রাজু আহমেদের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে প্রতিবেদককে তিনি বলেন,অপহরণের সাথে আমি যুক্ত নয়। অন্য এক প্রশ্নে তিনি বলেন,আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। এব্যাপারে সাভার মডেল থানার পরিদর্শক কাজী মাইনুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছ।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: