প্রতিবন্ধতা শামীম, হাত দিয়েই ভাঙেন ইট-পাথর

প্রকাশিত: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:০৩ পিএম
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যতই থাকুকনা কেন, যদি থাকে মনের প্রবল ইচ্ছে তবে তাকে দমানোটা বড় কঠিন। নিজ সাধনা ও প্রবল আত্মবিশ্বাস মানুষকে সফলতা এনে দেয়। এমনই একজন মানুষ মো. শামীম হোসেন (৩২)। জন্ম থেকেই সে শারীরিক প্রতিবন্ধী। এক হাতের একটি পাঞ্জা নেই তার। তবুও এই অপূর্ণতাকে মহান সৃষ্টিকর্তা এক ঐশ্বরিক শক্তি দিয়ে পূর্ণ করে দিয়েছেন। মানুষ যা কল্পনাও করতে পারেনা এমনই এক শক্তি রয়েছে তার হাতে। জন্মনুলা হাত দিয়ে সে ভাঙ্গতে পারে কঠিন কঠিন জিনিসপত্র। ইট-সিমেন্টের তৈরি যে কোন কিছু। এমনকি পাথরও! যা অনেকটা বিস্ময়কর। নিজ চোখে না দেখলে অনেকের কাছে অসত্য কিংবা গল্পের মতো মনে হবে। তবে মানুষের কাছে গল্প,সত্য আর বিস্ময় মনে হলেও এটাই এখন শামীমের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। অনেকেই তার এই কাজ দেখে আনন্দ পায়। বিস্মিত হয়। মানুষকে বিস্মিত-আনন্দ দিয়ে বিনিময়ে খুশি হয়ে যে যা দেয় তাই দিয়েই চলে শামীমের পেট। শামীম হোসেনের বাড়ী কুষ্টিয়ার খোকশায় পিতার নাম মো. আব্দুল্লাহ। তবে তার জীবন সংসার আর দিন রাত কাটে ট্রেনে কিংবা ষ্টেশনে। ষ্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করা অথবা ট্রেন থেকে নামা যাত্রীদের একটু শারিরীক কসরত, আনন্দ-বিনোদনের খুশির পয়সায়ই চলে তার জীবন। আজ শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ফরিদপুরের বোয়ালমারী রেলওয়ে ষ্টেশনে দেখা মেলে শামিমের। একহাতে কালো ব্যাগ। আরেক হাত জন্মগতভাবে নোলা। এসময় রেলওয়ে ষ্টেশনের মানুষের সামনে হঠাৎ সে ইট-সিমেন্টের পিলার ভেঙ্গে তার শক্তি ও শারিরীক কসরত দেখায়। একে একে অনেক লোক জড়ো হয়ে যায়। একপর্যায়ে সে রেললাইনের পাটির উপর পাথর রেখে নোলা হাত দিয়ে তা ভেঙ্গে দেখায়। সেখানে উপস্থিত থাকা বোয়ালমারীর ছোলনা গ্রামের বাসিন্দা আমীর চারু জানান, লোকজনের জটলা দেখে এগিয়ে গিয়ে দেখি এক যুবক রেললাইনের উপর পাথর রেখে নোলা হাত দিয়ে ভাঙ্গার চেষ্টা করছে। আমি প্রথম মনে করেছি হয়তো মাথা খারাপ-পাগল হবে। পরে দেখলাম আস্ত পাথর হাত দিয়ে ভেঙ্গে ফেললো। রেল স্টেশন সংলগ্ন বাসিন্দা ছোলনা গ্রামের বাসিন্দা মো. মিজানুর রহমান জানান, দুপুরে বাড়ি ফেরার পথে এ দৃশ্য দেখে বেশ বিস্মিত হয়েছি। নিজে না দেখলে অন্যর কথা শুনে বিশ্বাস করতে পারতাম না। শামিম হোসেন বলেন, আমি প্রায় দশ বছর ধরে এ কাজে আছি। বিয়েও করেছি ১০-১২ বছর আগে। সংসারে স্ত্রী, দুই ছেলে বাবা- মা আছে। আমার এক হাত জন্মগতভাবেই নোলা। তাই এ দেখে মানুষ কোন কাজকর্মে নেয় না। কি আর করবো না খেয়ে তো আর মরতে পারি না। আবার ভিক্ষা করাও সম্ভব নয়। যতো শক্ত কিছু হোক এ হাত দিয়ে আঘাত করলেও ব্যাথা পাই না। এটা আমার দশ বছরের শিক্ষার ফল। এটা আমার রোজগারের পথ। এ থেকে যা পাই তা দিয়েই নিজের পেট ও সংসার চলে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: