আউলিয়াপুর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশিত: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৬:১৯ পিএম
স্বপ্নীল দাস, পটুয়াখালী থেকে: পটুয়াখালীর আউলিয়াপুরে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বরাদ্দে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নিতীর আশ্রয় নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সিন্ডিকেট করে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি চক্র শুধুমাত্র আউলিয়াপুরে ঘর বরাদ্দের কথা বলে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করা না হলে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নিয়ে আরো দুর্নীতি বাড়বে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন সুলিশ সমাজের প্রতিনিধিরা। দূর্নীতি বন্ধে জরুরী অনুসন্ধান করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। সরেজমিন পরিদর্শনকালে আউলিয়াপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আলতাফ হোসেন শাহ আলম জানান,প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর সরাসরি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে যাচাই বাছাই করে তালিকা প্রনয়ন করা কথা। কিন্তু আউলিয়াপুর ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান এডভোকেট হুমায়ুন কবির আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কোন নীতিমালার তোয়াক্কা না করে প্রবাসী এবং বিত্তশালী একাধীক ব্যাক্তিকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট মো.জলিল মোল্লা জানান, চেয়ারম্যান ৩নং ওয়ার্ডের বিত্তশালী মৃত কাদের খানের ছেলে সালাম খানকে উপহারের ঘর দিয়েছেন। সালাম খান বর্তমানে প্রবাসীভ। বাড়িতে তার দোতলা ঘর রয়েছে। তার পরও তাঁকে ঘর দেয়া হয়েছে। ৮নং ওয়ার্ডের আলেক খান ও হানিফ খানকে টাকার বিনিময়ে ঘর বরাদ্ধ দিয়েছেন। তারা সরকারি ঘরের মডেল পরিবর্তন করে দোতলা ঘর নির্মান করেছেন। একই বাড়িতে টাকার বিনিময়ে তিনি ৭টি ঘর দিয়েছেন। এছাড়া আর্থিকভাবে সচ্ছল একই ওয়ার্ডে বারেক মাষ্টার,বারেক বিশ্বাসকে ঘর দিয়েছেন চেয়ারম্যান। একাধীক নির্ভরযোগ্য সুত্র জানায় সম্প্রতি একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ৯টি ওয়ার্ডের প্রায় তিন হাজার মানুষের কাছ থেকে ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি এবং ছবি নিচ্ছেন তিনি। তাদের প্রত্যেককে ঘর দেয়ার কথা বলে জনপ্রতি নিচ্ছেন ১৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা। সুত্রটির দাবী বর্তমান চেয়ারম্যান এই করোনা মহামারীর মধ্যে গত চার মাসে এলাকা থেকে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আউলিয়াপুর ইউপি একাধীক বার নির্বাচিত একজন সদস্য জানান,চেয়ারম্যান তাঁকেও ঘর প্রদানের কথা বলে জমি আছে ঘর নাই এমন মানুষদের কাছ থেকে টাকা তুলতে বলেছিলেন। কিন্তু তিনি তা বিনয়ের সাথে প্রত্যাক্ষান করেছেন। তিনি আরো জানান এর আগে ২০০৮ সালে টিউবয়েল দেয়ার কথা বলে চেয়ারম্যান কবির প্রায় আট শতাধীক মানুষের কাছ থেকে ১০ থেকে ১২ হাজার করে প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন। কিন্তু পরে কাউকে আর টিউবয়েল না দিয়ে সেই টাকায় ঢাকার কেরানীগঞ্জে একটি গার্মেন্সেট ফ্যাক্টরী খুলেছিলেন। এখনও অনেক মানুষ তাঁর কাছে টাকার জন্য ধর্ণা দিচ্ছেন বলে দাবী করেন তিনি। এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে চেয়ারম্যান কবিরের ঘরের টাকা তোলা সিন্ডিকেটের রয়েছেন পুলিশের চোখে চিহ্নিত দাগী কয়েকজন সদস্য। এর মধ্যে দক্ষিন বাদুরার কবির প্যাদা ও সরোয়ার নামে দুই জনের বিষয়ে পটুয়াখালী গোয়েন্দাদের একটি সুত্র জানায় উল্লেখিত কবির প্যাদা ও সরোয়ার ডিবি পুলিশ সেজে কয়েক বছর আগে আশুলিয়া এলাকায় অবস্থিত আজমত গ্রুপের ৮০ টাকা হাইজ্যাক করে। ঐ ঘটনায় আশুলিয়া থানায় মামলা করেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ড.আতহার উদ্দীন। পরে হাইজ্যাকৃকত সেই টাকাসহ কবির চেয়ারম্যানের বাসা থেকে ঐ গ্রুপটিকে আটক করে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। দীর্ঘ কারাভোগের পর কবির প্যাদা এবং সরোয়ার বাইরে এসে এখন আবার কবির চেয়ারম্যানের অবৈধ কাজের কান্ডারী হিসেবে কাজ করছেন। অনুসন্ধানে আরো জানা যায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের জন্য এই সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে আরো টাকা তুলছেন ৩নং ওয়ার্ডের সোহেল চৌকিদার,৪নং ওয়ার্ডে চেয়ারম্যানের চাচা সোহরাব মৃধা, ২নং ওয়ার্ডে সালাম চৌকিদার এবং ১নং ওয়ার্ডে হারুনসহ ১০ জনের একটি চক্র। এ বিষয়ে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মো.হুমায়ুন কবিরের দুটি মোবাইলে ফোন (০১৭১২-২০১৬২৩/০১৭১৮-২০৫১৫৯) একাধীকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে জন্য টাকা নেয়ার বিষয়ে পটুয়াখালী সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো.রফিকুল ইসলাম জানান,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অস্বচ্ছল মানুষের কথা বিবেচনা করে বিনা পয়সায় এই ঘর বরাদ্দ দিচ্ছেন। কোন চেয়ারম্যান কিংরা মেম্বার যদি ঘরের জন্য টাকা নিয়ে থাকে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ করেন তিনি। এ বিষয়ে পটুয়াখালী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ শাহীন মাহমুদ জানান,সদর উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ১১৭০টি ঘর প্রদান করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের কোন ঘরের জন্য সরকারের উর্দ্ধতন মহল থেকে কোন তালিকা চাওয়া হয়নি। ভবিষ্যতে যদি তালিকা চাওয়া হয় তখন তা প্রেরণ করা হবে। এই সুযোগে যদি কেউ কোন ঘর দেয়ার কথা বলে টাকা তুলে থাকেন তাহলে প্রমান সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: