হাকালুকির সৌন্দর্যে মুগ্ধ পর্যটকরা

প্রকাশিত: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:৪০ পিএম
বাংলাদেশে করোনার থাবা অনেকটা কমে আসায় সরকার দেশের সকল পর্যটন কেন্দ্র খুলে দিয়েছে। পর্যটন কেন্দ্র গুলো খুলে দেওয়ায় বাংলাদেশের সকল পর্যটন কেন্দ্রের মত বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওরে প্রতিদিন ভীড় করছে হাজারো পর্যটক। ভ্রমন পিপাসু পর্যটকদের একটু সতেজতা দিতে হাকালুকির অথৈই জলরাশি যেন‌ ডাকছে হাতছানি দিয়ে। তাইতো হাকালুকি হাওরের অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য ভীড় করছে পর্যটকরা। পর্যটকদের ভীড়ে হাকালুকি হাওর এখন হয়ে উঠেছে মুখরিত। পর্যটন প্রেমিরা এখানে করোনাকে ভুলে খুঁজছে একটু প্রশান্তির ছায়া। এ যেন অন্য এক পৃথিবী। আমাদের দেশের অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি হলো মৌলভীবাজার জেলা। মৌলভীবাজার জেলার কয়েকটি উপজেলায় রয়েছে এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওরের বিশাল একটা অংশ। সাগরের মত অথৈই সুবিশাল জলরাশিতে ভাসছে হাকালুকি হাওরের বুক। হাওড়ের বুক চিরে চলছে হাজারো নৌকা। হাওড়ের অথৈই পানিতে খেলা করছে অবারিত ঢেউ। হাওড়ের জলরাশির ঢেউগুলো আছড়ে পড়ছে একে অপরের গায়ে। এখানে ওখানে ভাসছে ছোট-বড় অনেক নৌকা ও ডিঙি। অনেক পর্যটক আবার হাওড়ে আসছেন মাঝারি আকারের লঞ্চ নিয়ে, কেউবা আবার স্পীড বোটে চড়ে দেখছেন হাওরের জলরাশির মিলনমেলা। দূরে দূরে সবুজ রেখার মতো গ্রামগুলো যেন ভেসে আছে জলের বুকে। জলের ওপর বুক ভেসে দাঁড়িয়ে আছে হিজল-করসের বাগান। দূর থেকে হিজল করসের গাছ গুলো যেন আরো বাড়িয়ে দিয়েছে হাওরের অপরুপ সৌন্দর্য। ওপাড়ে যখন সূর্যটা একটু একটু করে ডুবছে। ঠিক তখন হাওরের ঝিলিক দেওয়া রুপালি বুক আর আগের মতো নেই। বদলাতে শুরু করে সবকিছুই। হাওরের জলে তখন লাল-হলুদের মাখামাখি। শেষ বিকেলের রং মেখেছে মেঘদলও। রঙিন মেঘ নেমে আসে হাওরের জলে। টুকরো টুকরো হয়ে ভাসে, কখনও বা ডুবে। হাকালুকি হাওর প্রতিবারই এমন রূপের মায়া মেলে ধরে। পর্যটক, বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, করোনা-সংক্রমণ কমে আসায় বিপুল পরিমাণ মানুষ প্রতিদিন ভীর করছে হাকালুকির বুকে। বর্তমান সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলসহ অনেক বিদেশী পর্যটকও ছুঁটে আসছেন হাকালুকিতে। কেউ কেউ হাকালুকি হাওরের পাড়ে পাড়ে ঘুরে সময় কাটাচ্ছেন। আবার কেউ বা নৌকা নিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছেন হাওরের বুকে। অনেকে আবার হাওরের মাঝে অবস্থিত পর্যটন টাওয়ার থেকে পানিতে ঝাঁপ দিচ্ছেন একটু প্রশান্তির আশায়। কেউ কেউ সাঁতার কাটছেন মনের আনন্দে। অনেকেই নৌকায় করে দল বেঁধে ঘুরেছেন। হই-হুল্লোড় করে জলে ভাসছেন। বনবিভাগের পর্যটন টাওয়ার, বিট কর্মকর্তার কার্যালয়ের ছাদ এবং পাড়-সংলগ্ন বনবিভাগের পর্যটন ভবনেও ভীর করছেন ভ্রমন পিপাসুরা। হাওরের জুড়ী ও বড়লেখা অংশে পর্যটকরা ভীর করছেন সবচেয়ে বেশি। বড়লেখার তালিমপুর ইউনিয়নের হাল্লা এলাকা ও জুড়ী উপজেলার কন্টিনালা দিয়ে এই কদিন মানুষের স্রোত নেমেছে। হাল্লা ও কন্টিনালা এলাকাতে নৌকা নিয়ে রীতিমতো কাড়াকাড়ি। পর্যটকদের চেয়ে নৌকা কম হওয়ায় অনেক সময় পর্যটকদের বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে। হাকালুকিতে ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা সিনিয়র সাংবাদিক জাহিদ রেজা নুর জানান, আমি আমার পরিবার পরিজন নিয়ে হাকালুকির সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছি। হাকালুকি হাওর যে কত সুন্দর তা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। হাওরের বুকে হিজল-করসের বাগান, অথৈই জলরাশি যেন এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। একটু দীর্ঘশ্বাস নিতে হাজার পর্যটকদের সাথে এসেছি। তবে যাতায়াতের সুযোগ-সুবিধাটা বাড়ালে এটা একটি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন স্পট হতে পারে।’ বনবিভাগের হাকালুকি বিটের দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা জানান, হাকালুকি হাওরে পর্যটকদের আনাগোনা অনেকটাই বেড়েছে। পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা ও সহযোগিতা করার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। স্থানীয় সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম সুমন ও কল্যাণ প্রসূন চম্পু বলেন, হাকালুকির বুকে সূর্যেরও ক্লান্তি লাগে তাই অনেক দূরে দিগন্তের ওপারে সূর্য ডুবে গেলে নামে সন্ধ্যা। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে পর্যটকদের নৌকাগুলো পায়ে এসে ভির করে। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে জলের বুকে ভাসমান জেলের নৌকাগুলোতে মিটিমিটি করে জ্বলতে থাকে কূপিবাতি। যেন অন্ধকারের অর্থ এখানে শেষ বলে কিছু নেই, নতুন কিছুর প্রস্তুতি। সম্ভনাময় হাকালুকি হাওরে আসা পর্যটকদের জন্য সরকারের উচিত সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা।  

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: